images

সারাদেশ

মর্টারশেল-গোলাগুলির শব্দে কাঁপছে টেকনাফ, আতঙ্কে সীমান্তবাসী

জেলা প্রতিনিধি

১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:২৭ এএম

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং সীমান্ত এলাকায় মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টারশেল ও ভারী গোলাগুলির শব্দে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) ভোর থেকে টানা প্রায় চার ঘণ্টা সীমান্তজুড়ে গোলাগুলি ও মর্টারশেল বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে ওঠে বসতবাড়ি। এ সময় মিয়ানমার থেকে ছোঁড়া গুলি বাংলাদেশের ভেতরে এসে কয়েকটি বাড়ির টিনের চালা ভেদ করে ঘরের ভেতরে পড়ে।

স্থানীয়রা জানান, শনিবার ভোর থেকেই হোয়াইক্যং সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে থেমে থেমে গোলাগুলি ও মর্টারশেল নিক্ষেপের বিকট শব্দ শোনা যায়। এক পর্যায়ে এসব বিস্ফোরণের কম্পনে সীমান্তবর্তী বসতবাড়িগুলো কেঁপে ওঠে। আতঙ্কে নারী-শিশুসহ অনেক মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ঘরের ভেতরে লুকিয়ে পড়েছে।

হোয়াইক্যং ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সিরাজুল মোস্তফা লালু বলেন, শনিবার ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত টানা চার ঘণ্টা হোয়াইক্যং ২ নম্বর ওয়ার্ডের পুরো সীমান্ত এলাকায় মর্টারশেল বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। বিস্ফোরণের তীব্রতায় সীমান্তবর্তী বাড়িঘর কেঁপে উঠেছে। এতে সীমান্তবাসীর মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

তিনি আরও বলেন, হোয়াইক্যং সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের ভেতর থেকেই এসব মর্টারশেল নিক্ষেপ ও গুলি চালানো হচ্ছে। এ সময় হোয়াইক্যং বাজার সংলগ্ন মোহাম্মদ হোসেন ও আব্দুল কুদ্দুসের বাড়িতে এবং বালুখালী গ্রামের সরওয়ার আলমের বাড়িতে কয়েকটি গুলি এসে পড়ে। এছাড়া উত্তর পাড়া সংলগ্ন নাফ নদীতে একটি মর্টারশেল পড়লে নদীর মাঝখানে ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠতে দেখা যায়।

গুলিবিদ্ধ বাড়ির একজন বাসিন্দা মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে নুরুল আবছার বলেন, শনিবার ভোর থেকেই হোয়াইক্যংয়ের ওপারে মিয়ানমার সীমান্তে প্রচুর গোলাগুলির শব্দ হচ্ছিল। একই সঙ্গে মর্টারশেল ফায়ারের শব্দ ভেসে আসছিল। ঠিক এমন সময় আমার ঘরের টিনের চালে পর পর দুটি গুলি এসে লাগে। এতে আমরা ভয় পেয়ে যাই। ভোর থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত যখনই ফায়ার হয়েছে, বাড়িঘর কেঁপে উঠেছে।

আরেক ভুক্তভোগী সরওয়ার আলম বলেন, প্রচুর গোলাগুলির শব্দ শুরু হলে সন্তানদের নিয়ে আমি বাড়ির ভেতরের একটি তুলনামূলক নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিই। গুলির বিকট শব্দে আমরা ভয়ে কাঁপছিলাম। হঠাৎ একটি গুলি টিনের ছাউনি ছিদ্র করে ঘরের ভেতরে পড়ে যায় এবং মেঝের ওপর ঘুরতে থাকে। পরে গুলিটি হাতে ধরলে গরম অনুভূত হয়। তখন বুঝতে পারি কী ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছিলাম।

এ ঘটনায় এখনো কেউ হতাহত না হলেও সীমান্তবাসীর মধ্যে চরম উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। অনেক পরিবার প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না। শিশু ও বৃদ্ধদের নিয়ে আতঙ্কে সময় কাটাচ্ছেন স্থানীয়রা।

হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই খোকন কান্তি রুদ্র বলেন, শনিবার ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত মিয়ানমার সীমান্তের দিক থেকে প্রচুর গোলাগুলির শব্দ ভেসে এসেছে। কয়েকটি বাড়িতে গুলি পড়েছে বলে আমরা শুনেছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তারা দ্রুত সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

প্রতিনিধি/টিবি