images

সারাদেশ

সোনারগাঁয়ের যে বাজারে প্রতিদিন ২০ লাখ টাকার মাছ বিক্রি হয়

জেলা প্রতিনিধি

১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:৫৭ পিএম

মেঘনার অথৈ জলরাশির বয়ে চলার শব্দ আর জেলেদের হাঁকডাকে কাকডাকা ভোরে ঘুম ভাঙে নদীর দুই পাড়ের বাসিন্দাদের। এমন প্রাণবন্ত চিত্র দেখা যায় নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের বৈদ্যেরবাজার এলাকায়। মেঘনা নদীর পাড়ে গড়ে ওঠা এই ঘাটটি ‘বৈদ্যেরবাজার ফিশারি ঘাট’ নামে পরিচিত। এটি এখন মিঠাপানির ছোট মাছের এক বিশাল বাজারে পরিণত হয়েছে, যা ‘ছোট মাছের বড় বাজার’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। প্রতিদিন ভোররাত থেকে শুরু হয়ে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই এই বাজারের কার্যক্রম শেষ হয়। সারা বছরই এই মাছের বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড় লেগে থাকে।

বৈদ্যেরবাজার ফিশারি ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, মেঘনা নদীর তীর ঘেঁষা এই বাজারে ভোররাতেই ক্রেতা-বিক্রেতাদের আনাগোনা শুরু হয়। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকার মহাজন ও খুচরা ক্রেতারা তাদের পছন্দের মাছ কিনতে এখানে আসেন। নৌকা ও ছোট-বড় ট্রলারে করে জেলেরা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ নিয়ে ঘাটে ভিড় করেন। পাইকাররা এসব মাছের ডাকের (নিলাম) মাধ্যমে কেনেন এবং কিনে নিয়ে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন বাজারে সরবরাহ করেন।

এই বাজারে মেঘনা নদীর সুস্বাদু সব মাছ পাওয়া যায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো টেংরা, পাবদা, মেনি, বাইলা, চিংড়ি, বাইম, পোয়া, কাজলি, কাচকি, মলা, বজরি, বইছা, পুঁটি, কই, শিং ও টেকচাঁদা। এসব ছোট মাছের পাশাপাশি রুই, কাতলা, আইড়, বাঘা আইড়, ইলিশ, বোয়াল, চিতলসহ বড় মাছও বিক্রি হয়।

ঢাকার রামপুরার বনশ্রী এলাকা থেকে আসা মাহবুবুল আলম ও সাজ্জাদ মিয়া বলেন, ‘আমরা প্রতি মাসেই এই ঘাটে মাছ কিনতে আসি। এখানকার মাছ খুব তরতাজা ও সুস্বাদু হওয়ায় পরিবারের সদস্যদের পছন্দের তালিকায় সব সময় শীর্ষে থাকে এই এলাকার ছোট মাছ।’

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার মারুফ হাসান ও তার বন্ধু আকবর আলী জানান, তারা প্রতি সপ্তাহে বৈদ্যেরবাজার থেকে মাছ কেনেন। এসব মাছ তারা আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে পাঠান এবং নিজেরাও খান। তারা বলেন, ‘এই এলাকার মাছের স্বাদ বেশ ভালো। তাই মাছ কিনতে লোকজন এই বাজারে ভিড় করেন। তবে আগে মাছের দাম কম ছিল, এখন একটু চড়া। দালালদের আনাগোনাও বেড়েছে। এখন দালালদের মাধ্যমে মাছ কিনতে হয়।’

ঢাকার ডেমরা থেকে আসা মাছের আড়তের পাইকারি বিক্রেতা জসিমউদ্দিন বলেন, ‘মেঘনার তরতাজা ছোট মাছের কদর অনেক বেশি। ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের ভোজনরসিক মানুষ আগে থেকেই এসব মাছের অর্ডার দিয়ে রাখেন। অনেক ক্ষেত্রে আমরা ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী তাদের বাসায় বাসায় এসব মাছ পৌঁছে দিই। এই মাছের স্বাদ যারা একবার গ্রহণ করেছেন, তারা তা ভুলতে পারেন না। এ জন্য অনেকে অগ্রিম অর্ডার করেন।’

বৈদ্যেরবাজার ঘাটের মাছ ব্যবসায়ী মোহাম্মদ উজ্জল বলেন, এই ঘাটে কুমিল্লার মেঘনা থানার বিভিন্ন এলাকা এবং আড়াইহাজার ও সোনারগাঁয়ের নুনেরটেক এলাকার জেলেরা মাছ বিক্রি করতে আসেন। ‘প্রতিদিন এখানে গড়ে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকার শুধু ছোট মাছ বিক্রি হয়,’ জানান তিনি।

আরও পড়ুনঃ  শুষ্ক আবহাওয়া অব্যাহত, ভোরে হালকা কুয়াশার সম্ভাবনা

এ বাজারের ব্যবসায়ী সুবল বর্মন, মনির হোসেন, শিবু বর্মন, বকুল বর্মন, নিমল বর্মন ও জীবন বর্মন বলেন, মেঘনা নদীর তাজা ছোট মাছের কদর এখানে অনেক বেশি। তাই ক্রেতার সংখ্যাও অনেক। এখানে ক্রেতারা এসে ডাকের (নিলামের) মাধ্যমে তাদের পছন্দের মাছ কিনে নিয়ে যান। তারা আরও বলেন, ‘এখন এই মৌসুমে বাজারে মাছ আসে কম। জেলেদের কাছ থেকে মাছ কিনতে হয় একটু বেশি দামে। তাই অনেক সময় মাছের দাম কিছুটা বেশি থাকে।’

trr

সোনারগাঁ উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মাহমুদা আকতার বলেন, ‘এই ঘাটের মাছের খ্যাতি এখন ঢাকাসহ আশপাশের জেলাগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে। এখানে তাজা মাছ পাওয়া যায়। বিশেষ করে এখানকার ছোট মাছ নিয়ে আমরা এখন গর্ব করতে পারি। মেঘনা নদীর এই ছোট মাছগুলো অত্যন্ত সুস্বাদু। এখানকার জেলেদের সরকারিভাবে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা হয়।’

প্রতিনিধি/একেবি