images

সারাদেশ

মনোনয়ন ঘিরে দিনভর উত্তেজনা, রাতে মশালের আলোয় ফুঁসে উঠল কিশোরগঞ্জ

০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:২৮ পিএম

কিশোরগঞ্জ–১ (সদর–হোসেনপুর) আসনে বিএনপির মনোনয়নকে কেন্দ্র করে সোমবার সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত শহরজুড়ে বিরল উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।

সোমবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুরের সংবাদ সম্মেলন, বিকেলের ধানের শীষের শোডাউন এবং সন্ধ্যার জমকালো মশাল মিছিলে উত্তাপের মাত্রা ক্রমেই বাড়তে থাকে। বহু দিন পর কিশোরগঞ্জ এমন রাজনৈতিক উচ্চস্রোতে টালমাটাল হয়ে ওঠে যা সাধারণ মানুষকেও গভীরভাবে নাড়া দেয়।

সন্ধ্যা ঠিক ৭টায় হঠাৎই আলোকিত হয়ে ওঠে কিশোরগঞ্জের পুরাতন স্টেডিয়াম এলাকা। মনোনয়ন বঞ্চিত প্রার্থী ও তাদের অনুসারীদের হাতে জ্বলে ওঠা মশালের আগুন মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে শহরময়। দপদপ করে জ্বলা মশাল, পক্ষে-বিপক্ষে স্লোগান, আর ভিড় জমা মানুষের কৌতূহল সন্ধ্যার শহরকে পরিণত করে এক নাটকীয় রাজনৈতিক মঞ্চে। মিছিলটি স্টেডিয়াম এলাকা পেরিয়ে শহরের প্রধান সড়কে পৌঁছালে পরিবেশ আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

নেতাকর্মীদের অভিযোগ মনোনয়ন বঞ্চনার সিদ্ধান্ত তৃণমূলে ক্ষোভ তৈরি করেছে, যা তারা মশাল মিছিলের মাধ্যমেই প্রকাশ করছেন। রাত ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে মশালের আলো কিশোরগঞ্জের উত্তেজনাকেও যেন আরও উজ্জ্বল করে তোলে।

দিনের রাজনৈতিক উত্তেজনা আসলে শুরু হয় দুপুর ১২টার পর থেকেই। শহরের স্টেশন রোডে মনোনয়ন বঞ্চিত পাঁচ শীর্ষস্থানীয় প্রার্থীর সংবাদ সম্মেলন পুরো পরিস্থিতির ভিত্তি তৈরি করে দেয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) ও সাবেক জেলা বিএনপি সভাপতি মাসুদ হিলালী। তিনি সরাসরি অভিযোগ করেন মনোনয়ন পাওয়া মো. মাজহারুল ইসলাম ‘আওয়ামী লীগের দোসর, দুর্নীতিবাজ ও চাঁদাবাজ’। এমনকি তিনি দাবি তোলেন ‘অবিলম্বে মাজহারুল ইসলামের মনোনয়ন বাতিল করতে হবে, অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল; সাবেক বিভাগীয় স্পেশাল জজ ও জেলা বিএনপির সাবেক সহ–সভাপতি রেজাউল করিম খান চুন্নু; জেলা বিএনপির সাবেক সহ–সভাপতি রুহুল হোসাইন; জেলা বিএনপির সাবেক সহ–সভাপতি অ্যাডভোকেট শরিফুল ইসলাম। 

এই পাঁচ প্রভাবশালী নেতা স্পষ্টভাবে জানান যদি কেন্দ্র মনোনয়ন পরিবর্তন না করে, তারা কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হবেন। এর আগের রাতেই একই দাবিতে শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন তারা।

দুপুরের তীব্র অভিযোগের পর বিকেলে দৃশ্যপট পুরোপুরি বদলে যায়। মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থী মো. মাজহারুল ইসলাম সমর্থকদের নিয়ে বের করেন ধানের শীষের বিশাল শোডাউন। হাজার হাজার নেতাকর্মীর ঢল নামে শহরের প্রধান সড়কে। ধানের শীষের জোয়ার জানান দিতে নানা স্লোগানে কিশোরগঞ্জের রাজনৈতিক আবহ আরও তীব্র হয়। স্টেশন রোড, পুরানথানা, রথখলা এলাকা সব জায়গাই বিকেলে পরিণত হয় জনসমুদ্রের প্রদর্শনীতে।

দুপুরের অভিযোগ, বিকেলের শোডাউন আর সন্ধ্যার মশাল মিছিলের আলোর ঝলকানি সব মিলিয়ে পুরো শহর উত্তেজনার চরমে পৌঁছায়।

তবে দিনের পুরোটা সময় পুলিশ ছিল সতর্ক অবস্থানে। সেই সাথে বড় কোনো সংঘর্ষ ছাড়াই রাতের কর্মসূচিগুলো শেষ হয়।

গত বৃহস্পতিবার গুলশানে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সারাদেশের ৩৬ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। কিশোরগঞ্জ–১ আসনে মনোনয়ন পান জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মাজহারুল ইসলাম। ঘোষণার পর থেকেই বঞ্চিত প্রার্থীদের ক্ষোভ প্রকাশ, তৃণমূলে বিভক্তি এবং উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি দেখছে জেলাবাসী।

ts

আর তার ফলস্বরূপই সোমবারের কিশোরগঞ্জ ছিল যেন রাজনৈতিক তাপমাত্রার পরীক্ষাগার দুপুরে প্রতিবাদের ঘোষণা, বিকেলে শোডাউনের স্লোগান, আর সন্ধ্যায় মশাল মিছিল। একই দিনে তিনটি ভিন্ন মাত্রায় উত্তেজনা ছড়াল পুরো শহরজুড়ে। তবে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি শেষ হওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে সাধারণ মানুষের মধ্যেও। কিশোরগঞ্জ এখন তাকিয়ে আছে আগামী দিনগুলোতে রাজনৈতিক উত্তাপ আরও বাড়বে, নাকি কমবে?

প্রতিনিধি/একেবি