images

সারাদেশ

আমদানির ঘোষণায় খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের দরপতন

নিজস্ব প্রতিবেদক

০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:৩৫ পিএম

সরকারের পেঁয়াজ আমদানির ঘোষণায় চট্টগ্রামে পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে রাতারাতি পণ্যটির দরপতন হয়েছে। কেজিতে ২৫ টাকা কমে গেছে পুরোনো দেশি পেঁয়াজের দাম। নতুন উৎপাদিত মুড়ি কাটা পেঁয়াজের দামও কমে বিক্রয় হচ্ছে কেজিপ্রতি ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়।

সোমবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুরে খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, সরকার হুট করেই পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিয়েছে। এ কারণে আমরা বেকায়দায় পড়েছি। আমদানি করা পেঁয়াজ এলে বর্তমানে থাকা পণ্যগুলো নষ্ট হবে। তাই দাম কমিয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে আমরা কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা লোকসান গুনছি। এখন দাম কমার পরও আমরা বিক্রি করতে পারছি না। 

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এর আগে গত মাসের মাঝামাঝি সময়েও একই কাণ্ড ঘটেছিল পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে। ওই সময় একদফা লোকসান গুণেছে ব্যবসায়ীরা। এতে বেশ নাখোশ ব্যবসায়ীরা। আমদানি অনুমতির বিষয়ে সরকার অন্তত এক মাস আগে জানিয়ে রাখলে আমরা পূর্বপ্রস্তুতি নিয়ে রাখতে পারতাম।  

আমদানির খবর এলেই পেঁয়াজের দাম কমে, কেন? - এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমদানির খবর এলে কম দামে কেনার জন্য খুচরা ব্যবসায়ীরা অপেক্ষায় থাকেন। তখন আমাদের পাইকারি বাজারে বেচাবিক্রি কমে যায়। তাই দামটাও কমে যায়। 

ব্যবসায়ীরা জানান, গত ৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে প্রতি কেজি পুরোনো দেশি পেঁয়াজ ১১৫ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়। পাশাপাশি সেদিন (৬ ডিসেম্বর) প্রতি কেজি মুড়িকাটা পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১০৫ টাকায় বিক্রি হয়। এটি চলতি বছর পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের সর্বোচ্চ দাম।

একই দিন রাতে কৃষি মন্ত্রণালয় জানায়, রবিবার (৭ ডিসেম্বর) থেকে সীমিত আকারে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেবে সরকার। প্রতিদিন ৫০টি করে আমদানি অনুমতি ইস্যু করা হবে। প্রতিটি আইপিতে সর্বোচ্চ ৩০ টন পেঁয়াজের আমদানির অনুমোদন দেওয়া হবে। পেঁয়াজের বাজার সহনীয় রাখতে এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানায় মন্ত্রণালয়।

এই ঘোষণার পর রোববার (৭ ডিসেম্বর) সকাল থেকে পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ২৫ টাকা কমে ৯০ থেকে ৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে প্রতি কেজি মুড়িকাটা পেঁয়াজ আকারভেদে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। 

এর আগে, গত ৯ নভেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন জানান, পেঁয়াজের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে না এলে আমদানি অনুমতি ইস্যু করা হবে। এরপর কমতে থাকে পণ্যটির দাম। গত ১৫ নভেম্বর কেজিতে ১৫ টাকা কমে ১০০ থেকে ১০৫ টাকায় বিক্রি হয়। গত ২২ নভেম্বর কেজিতে আরও ১০ টাকা কমে পণ্যটি ৯৫ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়। 

গত ২৮ নভেম্বর দাম আরও কমে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হয়। কিন্তু ২৯ নভেম্বর থেকে পণ্যটির দাম আবার চড়া হয়ে যায়। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ঠেকেছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়। 

ব্যবসায়ীরা আরও জানান, গত সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে খাতুনগঞ্জে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ আকারভেদে বিক্রি হয় ৬২ থেকে ৬৫ টাকায়। তবে অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে এসে পণ্যটির দাম বাড়তে শুরু করে। গত ১৭ অক্টোবর কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকা বেড়ে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হয়। 

গত ১ নভেম্বর কেজিতে আকারভেদে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হয়। গত ৬ নভেম্বর পেঁয়াজের দাম শতক পেরিয়ে যায়। সেদিন কেজিতে ২০ থেকে ২৫ টাকা বেড়ে পণ্যটি ১০০ থেকে ১০৫ টাকায় বিক্রি হয়। গত ৯ নভেম্বর কেজিতে আরও ৫ টাকা বেড়ে ১০৫ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হয়। 

পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, চট্টগ্রামে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ থেকে পুরো চট্টগ্রামের খুচরা বাজারে ছড়িয়ে পড়ে পেঁয়াজ। বর্তমানে পাবনা, ফরিদপুর ও কুষ্টিয়া থেকে খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজ আসছে। সেখানে কিছু কৃষক ও মজুতদার পণ্যটির দামে কারসাজি করছেন। এ কারণে দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।  

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু বলেন, আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে, এখনো আমদানিই হয়নি। তার আগেই পেঁয়াজের দাম কমে গেল। বিষয়টি হাস্যকর। এখানে ব্যবসায়ীদের কারসাজির বিষয়টি সহজেই অনুমেয়। এই কারসাজির সঙ্গে খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জড়িত। 

ক্ষোভ প্রকাশ করে জেসমিন সুলতানা পারু বলেন, খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা পুরোনো পেঁয়াজ বাড়তি দামে বিক্রি করার জন্য নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না। এই পেঁয়াজটা বাজারে সয়লাব হলে সাধারণ মানুষ আরও ৫০ টাকা কমে পেঁয়াজ কিনতে পারতেন।

হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারক মো. মোবারক হোসাইন বলেন, দেশের সব স্থলবন্দর দিয়ে অন্তত ৩০০ পেঁয়াজ আমদানিকারক রয়েছেন। যারা আগস্টে আবেদন করেছেন শুধু তারাই আবার পুনরায় আবেদন করতে পারছেন। তবে প্রতিদিন ৫০ জনকে আমদানির অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। গত রবি ও সোমবার সকাল ৮টা থেকে পৌনে ১০টা পর্যন্ত আবেদন করেছে। সার্ভার ৫০ জনের বেশি আবেদন নিচ্ছে না। তবে আমদানির এই অনুমতি আমদানিকারকদের জন্য সুখকর নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

প্রতিনিধি/এজে