০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:২২ পিএম
পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার প্রত্যন্ত বিলাঞ্চলে শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত ‘পদ্মডুবি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়’ এখন অস্তিত্ব সংকটে। একটি অভিযোগের বেড়াজালে আটকে আছে বিদ্যালয়টির একাডেমিক স্বীকৃতি বা ইআইআইএন কোড। ফলে একদিকে অনিশ্চয়তায় পড়েছে শতাধিক শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ, অন্যদিকে বিনা বেতনে মানবেতর জীবনযাপন করছেন শিক্ষকরা।
উপজেলার ৩ নং দেউলবাড়ী দোবড়া ইউনিয়নে ২০২০ সালে (প্রস্তাবিত) বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। এলাকাটি প্রত্যন্ত ও বিলবেষ্টিত হওয়ায় বর্ষায় নৌকা আর শুষ্ক মৌসুমে দীর্ঘ কাদাপথই যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম। স্থানীয়রা জানান, আশপাশে ৩-৪ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো মাধ্যমিক বিদ্যালয় নেই। ফলে দীর্ঘ নদীপথ ও স্রোত পাড়ি দিয়ে দূরের স্কুলে যাওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ। এই দুর্ভোগ লাঘবে পদ্মডুবি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়টি এলাকাবাসীর কাছে ‘আশার আলো’ হয়ে উঠলেও সরকারি স্বীকৃতি না মেলায় সেই আলো এখন নিভু নিভু।
সরেজমিনে দেখা যায়, ইআইআইএন না পাওয়ার কারণে বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়ায় যেতে পারছে না। ফলে শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে বিনা বেতনে পাঠদান করাচ্ছেন। মানবিক দায়বদ্ধতা থেকে তারা এতদিন কষ্ট সহ্য করলেও এখন পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। অন্যদিকে, প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি না থাকায় অভিভাবকরা সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত। এ কারণে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে বা শিক্ষা কার্যক্রম থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।
ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী রিফাত এবং সপ্তম শ্রেণির নাদিয়া আক্তার আক্ষেপ করে বলে, ‘এই স্কুলটি বন্ধ হয়ে গেলে আমাদের লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম হবে। প্রতিদিন নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে দূরের স্কুলে যাওয়া আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমরা চাই স্কুলটি যেন দ্রুত স্বীকৃতি পায়।’
স্থানীয়দের অভিযোগ, এলাকার বাস্তবতা বিবেচনা না করে একটি মহল সুপরিকল্পিতভাবে বিদ্যালয়টির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে, যা এর স্বীকৃতি প্রক্রিয়াকে জটিল করে তুলেছে। বিলাঞ্চলের শিক্ষাপ্রবাহ সচল রাখতে দ্রুত এই জটিলতা নিরসনের দাবি জানিয়েছেন অভিভাবকরা।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মাইনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা অনেক স্বপ্ন নিয়ে স্কুলটি গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। কিন্তু একটি মাত্র অভিযোগের কারণে আমরা এখনও ইআইআইএন পাইনি। এটি পেলে এমপিওভুক্তির পথ খুলত এবং শিক্ষকরা মানবেতর জীবন থেকে মুক্তি পেতেন। আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত এই সমস্যার সমাধান চাই।’
জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জহিরুল আলম বলেন, ‘যেহেতু একটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে, সেহেতু বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’

তবে বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক অধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলাম খান জানিয়েছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, ‘তাদের আগের উদ্যোগ কোনো কাজে আসেনি। বিদ্যালয়টি যদি স্বীকৃতি চায়, তবে তাদের নতুন করে আবেদন করতে হবে।’
প্রতিনিধি/একেবি