উপজেলা প্রতিনিধি
০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:৫৩ পিএম
১৬তম শিক্ষক নিবন্ধন- উদ্যোক্তা উন্নয়ন (প্রভাষক) পদে উত্তীর্ণ হয়ে ও জাতীয় মেরিট লিস্টে ৬৫তম আসীন হয়েও সনদের মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে চাকরি হয়নি। এখন দিনে কৃষিকাজ আর রাতে ঝালমুড়ি বিক্রি করে ৮ সদস্যের পরিবারের সংসার চালান। এ নিয়ে কোনো অসম্মান বোধ কিংবা আক্ষেপ নেই। বরং গর্ব করে বলেন, বেকার না থেকে কাজের মধ্যেই সময় যাচ্ছে, তৌফিক হলে খাবারের হোটেল ব্যবসা করব।
বলছিলাম অনার্স মাস্টার্স (ব্যবস্থাপনা) শেষ করা নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার স্বপ্ন ভাঙা যুবক আবুল কালাম সুমনের কথা। ২০১১ সালে নোয়াখালী সরকারি কলেজ থেকে অনার্স (ব্যবস্থাপনা) এবং ২০১২ সালে একই কলেজ থেকে মাস্টার্স (ব্যবস্থাপনা) শেষ করেন। চেয়েছিলেন ভালো কোনো চাকরি অথবা শিক্ষকতা করবেন। এনটিআরসিএ কর্তৃক উদ্যোক্তা উন্নয়ন ‘প্রভাষক’ (ব্যবস্থাপনা থেকে যারা অনার্স শেষ করে তাদের উদ্যোক্তা উন্নয়ন বিষয় থাকে) সনদপ্রাপ্ত হয়েও সে চাওয়া পূরণ হলো না।
![]()
তিনি বলেন, ১৬তম শিক্ষক নিবন্ধন সিরিয়াল অনুযায়ী আমার চাকরি হওয়ার কথা। কিন্তু, আমার আগে যাদের চাকরি হয়েছে, তাদের চাকরি প্রথমবার স্থায়ী না হওয়ার কারণে, তারা দ্বিতীয় বার চাকরির আবেদনে সুযোগ পায়। যার ফলে আমার চাকরি হয়নি।
পরে সিডিএসপি-৪ এর আওতায় ফিশারিজ কো-অর্ডিনেটর হিসেবে কাজ করেছিলেন এবং প্রকল্প শেষ হয়ে যাওয়ায় বেকার হয়ে পড়েন। এসময় বাবার সঙ্গে কৃষি কাজ শুরু করেন। কৃষি ক্ষেত্রে তার সহযোগিতার জন্য হাতিয়া পৌরসভা কৃষি উপ-সহকারী মো. হাসান সার-বীজ প্রণোদনা প্রদান করেন বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, বাবা-মা, ভাই-বোন ও স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারে তাদের ৮ সদস্য। সংসারে বাপের বড় ছেলে তিনি। নিজের এবং বর্গা মিলিয়ে প্রায় দুই একর জমি চাষ করেন। দিনে বাবার সঙ্গে কৃষিকাজ করেন আর রাতে ঝালমুড়ি বিক্রি করে কোনোমতে সংসার চালান।
নোয়াখালীর হাতিয়া পৌরসভা ২ নম্বর ওয়ার্ড- চরলটিয়া গ্রামের আবুল হাসেমের ছেলে আবুল কালাম সুমন। উদ্যোক্তা ও উদ্যমী মনোভাবের শিক্ষিত এ যুবক এখন প্রতি সন্ধ্যায় হাতিয়া কোর্টের উত্তর কোণে ঝালমুড়ি বিক্রি করেন। যা গত কয়েকমাস ধরে চলছে।
সম্প্রতি তার ঝালমুড়ির দোকানের সামনে গিয়ে দেখা যায়, ঝালমুড়ি খাওয়ার জন্য বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাসহ নানান শ্রেণি পেশার মানুষ সেখানে ভিড় জমান।
ঝালমুড়ি খাওয়া অবস্থায় হাতিয়া শহর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সোহেল বলেন, আবুল কালাম সুমন বেকার ও অলস যুবকদের কর্মমুখী হওয়ার জন্য একটি উদাহরণ। সুমন একজন ভালো মানুষ এবং উদ্যমী। সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের উচিত এমন শিক্ষিত বেকারদের সহযোগিতা করা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা।
![]()
ঝালমুড়ি বিক্রি এবং ভবিষ্যৎ ইচ্ছা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার টাকার মতো ঝালমুড়ি বিক্রি করি। এতে খরচপাতি গিয়ে মোটামুটি কিছু টাকা থাকে। পুঁজি হলে খাবার হোটেল ব্যবসা করব।
তার এ উদ্যমী কাজে সহযোগিতা করার বিষয়ে হাতিয়া উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) খোরশেদ আলম জানান, তার ডিপার্টমেন্টের কিছু ক্রাইটেরিয়া আছে। এ ক্রাইটেরিয়ার ভেতর কিংবা অন্য কোনোভাবে হলেও পর্যালোচনা করে একটা ব্যবস্থা নেব।
প্রতিনিধি/এসএস