images

সারাদেশ

সাজ্জাদ বাহিনীর কিলিং মিশন চট্টগ্রাম টু রাউজান

০৭ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:৪৭ পিএম

•    ৯ খুনের পরও অধরা স্কোয়াড প্রধান রায়হান 
•    নেপথ্যে বালুমহাল-ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়, চাঁদাবাজি, ভবন নির্মাণে ইট-বালুসহ নির্মাণসামগ্রী সরবরাহ 

চট্টগ্রাম মহানগর থেকে রাউজান পর্যন্ত একের পর এক খুনের ঘটনায় জড়িত সাজ্জাদ বাহিনী ওরফে বড় সাজ্জাদ। গত বছর ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদি সরকারের পতনের পর চট্টগ্রাম মহানগরে চারটি ও রাউজানে পাঁচটি খুনের ঘটনায় জড়িত বাহিনীর স্কোয়াড প্রধান রায়হান আলম (৩৫)।  

রায়হানের আসল নাম মোহাম্মদ রেকান আলম। সে চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার পূর্ব রাউজানের মোহাম্মদ বদি আলমের ছেলে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে নিজেকে বিএনপির কর্মী হিসেবে পরিচয় দিয়ে আসছেন রায়হান। একের পর এক ৯ খুনের ঘটনার পরও অধরা এই রায়হান।  

 

  
সর্বশেষ গত বুধবার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার চালিতাতলী খোন্দকীয়া পাড়ায় চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনের বিএনপির মনোনীত প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর নির্বাচনি প্রচারণায় চট্টগ্রামের আলোচিত শীর্ষ সন্ত্রাসী সরোয়ার হোসেন ওরফে বাবলাকে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে হত্যা করা হয়। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ। 

এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শুক্রবার (৭ নভেম্বর) সকালে সরোয়ার হোসেন বাবলার বাবা আবদুল কাদের নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলায় বিদেশে পলাতক দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলী ওরফে বড় সাজ্জাদ এবং তার বাহিনীর কিলিং স্কোয়াডের প্রধান হিসেবে পরিচিত রায়হান আলমসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করে ২৩ জনকে আসামি করা হয়। 

মামলার পর শুক্রবার (৭ নভেম্বর) সকালে নগরীর চান্দগাঁও থানার হাজীরপুল এলাকায় অভিযান চালিয়ে মো. আলাউদ্দিন ও মো. হেলাল ওরফে মাছ হেলাল নামে দুই আসামিকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-৭ এর একটি দল। এছাড়া চট্টগ্রামের চালিতাতলী ও রাউজানে গোলাগুলি ও খুনের ঘটনায় আরও চারজনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

গ্রেফতাররা হলেন- বোরহান উদ্দিন, নেজাম উদ্দিন, আলাউদ্দিন, মোবারক হোসেন ওরফে ইমন। র‌্যাব-৭ অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. হাফিজুর রহমান শুক্রবার দুপুরে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, গ্রেফতার দুজনের বাসা নগরীর চান্দগাঁও থানার হাজীর পুল এলাকায়। গ্রেফতারকৃতরা বিদেশে পলাতক সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলী ওরফে বড় সাজ্জাদের বাহিনীর সদস্য বলে জানায় র‌্যাব।

 

 

 

বায়েজিদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসিম উদ্দিন জানান, মামলায় সাতজনের নাম উল্লেখ ছাড়াও অজ্ঞাত আরো ১৫-১৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে আলাউদ্দিন ও হেলালকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। এদের মধ্যে আলাউদ্দিন নগরীর ৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সহ-সভাপতি ও হেলাল যুবদল কর্মী। 

মামলার এজাহারে সরোয়ার হোসেন বাবলার বাবার অভিযোগের বরাত দিয়ে ওসি জানান, বিদেশে পলাতক সাজ্জাদ আলী দীর্ঘদিন ধরে সরোয়ার হোসেন বাবলাকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছেন। সর্বশেষ গত রোববার (২ নভেম্বর) সরোয়ারকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে বলেন, সময় শেষ, যা খাওয়ার খেয়ে নে।

এরপর গত বুধবার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম-৮ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর সঙ্গে নির্বাচনি প্রচারে অংশ নেওয়া সরোয়ার হোসেন বাবলাকে সরাসরি পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। সাজ্জাদের নির্দেশে তার অনুসারীরা পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ আনা হয়েছে মামলার এজাহারে। 

Raihan_ctg
সাজ্জাদ বাহিনীর স্কোয়াড প্রধান রায়হান আলম (ফাইল ছবি)

 

৯ খুনের পরও অধরা রায়হান

চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী বড় সাজ্জাদের বাহিনীর কিলিং স্কোয়াডের প্রধান রায়হান। গত এক বছরে চট্টগ্রাম মহানগর থেকে রাউজান পর্যন্ত অন্তত নয়টি হত্যাকাণ্ডে রায়হানের নেতৃত্ব দেওয়ার তথ্য আছে পুলিশের কাছে। এর মধ্যে সর্বশেষ বিএনপিকর্মী সরোয়ার হোসেন বাবলাকে মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে হত্যা ও বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য প্রার্থী এরশাদ উল্লাহকে গুলিবিদ্ধ করার ঘটনায়ও রায়হান সরাসরি জড়িত। একের পর এক খুন করেও নির্বিঘ্নে অধরা থেকে গেছে রায়হান। 

পুলিশের ভাষ্য, দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় বসবাস, ক্রমাগত অবস্থান পাল্টানো এবং কখনো সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে চলে যাওয়ার কারণে তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হচ্ছে না। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে নিজেকে বিএনপির কর্মী হিসেবে পরিচয় দিয়ে আসছেন রায়হান।

বুধবার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ও চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনের প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার হাজীপাড়া এলাকায় নির্বাচনি প্রচার চালাচ্ছিলেন। এ সময় বিএনপিকর্মী সরোয়ার হোসেন বাবলাও সেখানে ছিলেন।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, এরশাদ উল্লাহ বিভিন্ন দোকানে গিয়ে লিফলেট বিলির সময় একদল সন্ত্রাসী অতর্কিতে গিয়ে সরোয়ার হোসেন বাবলাকে মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে। এ সময় রক্তাক্ত অবস্থায় বাবলা সেখানে লুটিয়ে পড়েন। সন্ত্রাসীদের ছোঁড়া গুলিবিদ্ধ হয় এরশাদ উল্লাহর পায়ে। তাদের দ্রুত এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে বাবলাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। আর এরশাদ উল্লাহ এখনও চিকিৎসাধীন আছেন।

সরোয়ার হোসেন বাবলাকে মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করার একটি ভিডিও পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পিস্তল দিয়ে গুলি করা সেই ব্যক্তি রায়হান বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার বিকেলে বাবলার লাশ ময়নাতদন্তের পর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে পুলিশ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে।

এর আগে গত ২৩ মে নগরীর পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে চট্টগ্রামের আরেক সন্ত্রাসী আলী আকবর ওরফে ঢাকাইয়া আকবরকে (৪৪) গুলি করে হত্যা করা হয়। কারাবন্দি ছোট সাজ্জাদের নির্দেশে রায়হান এ হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্ব দেয় বলে তথ্য পায় নগর পুলিশ। এ ঘটনায় করা মামলায় গ্রেফতার হওয়া এক আসামি আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেছেন, এলাকায় ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, ছোট সাজ্জাদকে ধরিয়ে দেওয়াসহ পাঁচ কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে তারা সরোয়ারকে লক্ষ্য করে গুলি করেন। 

image
গত ৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের চালিতাতলী খোন্দকীয়া পাড়ায় শীর্ষ সন্ত্রাসী সরোয়ার হোসেন বাবলাকে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে হত্যা করা হয়। ছবি: সংগৃহীত 

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) আমিরুল ইসলাম বলেন, গুলিটা যে করেছে, তার নাম রায়হান বলে আমরা জানতে পেরেছি। ঘটনার সঙ্গে আরও যারা জড়িত তাদেরও শনাক্তের চেষ্টা চলছে। কিছুটা অগ্রগতিও আমাদের আছে। আশা করছি, দ্রুতই আমরা সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে পারব।

এদিকে রাউজান থানা পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রায়হানের বিরুদ্ধে রাউজান থানায় গত এক বছরে চারটি হত্যা মামলা হয়েছে। গত ২৫ জুলাই রাউজানে যুবদল নেতা মো. সেলিমকে (৪৫) নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় চার দিন পর রাঙামাটি জেলার কাউখালী থেকে দিদারুল আলম (৩২) নামে রাউজানের আরও এক যুবদল কর্মীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ দুটি হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ছিল রায়হান, এমন তথ্য আছে পুলিশের কাছে।

গত ২২ এপ্রিল চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার গাজীপাড়া গ্রামের বাজারের একটি দোকানের সামনে মুহাম্মদ ইব্রাহিম (৩০) নামে এক যুবদল কর্মীকে গুলি করে খুন করা হয়। পুলিশের ভাষ্যমতে, রায়হানের নেতৃত্বে ১০-১২ জন সন্ত্রাসী বোরকা পড়ে তিনটি অটোরিকশায় করে এসে তার মাথায় ও বুকে গুলি করে। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

এরপর গত ২৬ অক্টোবর রাউজান পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চারাবটতল বাজারসংলগ্ন কায়কোবাদ জামে মসজিদের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয় যুবদল কর্মী মুহাম্মদ আলমগীর আলমকে (৪৫)। মসজিদের পাশে কবরস্থানে লুকিয়ে থাকা একদল দুষ্কৃতিকারী তাকে গুলি করে হত্যা করে। এ ঘটনায়ও নেতৃত্বদাতা হিসেবে রায়হানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

এদিকে গত ৭ অক্টোবর রাউজান সীমান্তবর্তী হাটহাজারী উপজেলার মদুনাঘাট এলাকায় চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে প্রাইভেটকারে গুলি করে এক ব্যবসায়ীকে খুন করা হয়। নিহত মো. আব্দুল হাকিম (৪৫) রাউজান উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের পাচখাইন গ্রামের বাসিন্দা। নিজ বাড়িতে হামিম অ্যাগ্রো নামে একটি গরুর খামাার পরিচালনা করতেন তিনি। তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

রাউজান থানার ওসি মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, রাউজানে চারটি খুনের ঘটনা রায়হান ঘটিয়েছে। আরও কয়েকটি সহিংসতায় সে জড়িত ছিল। সে রাউজান-রাঙ্গুনিয়ার সীমান্তবর্তী দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় বসবাস করে। বারবার অবস্থান পরিবর্তন করে এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে চলে যায়। রাঙামাটির পাহাড়েও মাঝে মাঝে গিয়ে থাকে। আবার কখনো চট্টগ্রাম শহরে গিয়ে থাকে। রাউজান থেকে নদী পার হয়ে বোয়ালখালীতে গিয়ে চরণদ্বীপ এলাকায়ও অবস্থান করে। এমনও তথ্য পেয়েছি, পার্বত্য চট্টগ্রামের সীমান্ত এলাকা দিয়ে রায়হান কয়েকবার ভারতেও প্রবেশ করেছে এবং আবার ফিরে এসেছে।

সাজ্জাদের নিয়ন্ত্রণে চট্টগ্রামের অপরাধ জগৎ 

চট্টগ্রাম জেলা ও নগর পুলিশের সূত্রমতে, প্রায় দুই দশক ধরে বিদেশে বসে চট্টগ্রামের অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ করেন পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলী ওরফে বড় সাজ্জাদ। একসময় শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকায় বড় সাজ্জাদ শিবির ক্যাডার হিসেবে পরিচিত।  

নগরীর পাঁচলাইশ, বায়েজিদ বোস্তামি, বাকলিয়া, চকবাজার এলাকা থেকে জেলার হাটহাজারী, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া পর্যন্ত তার অপরাধের সাম্রাজ্য বিস্তৃত। অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়, চাঁদাবাজি, বালুমহাল-ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, ভবন নির্মাণে ইট-বালুসহ নির্মাণসামগ্রী সরবরাহে প্রভাব বিস্তার এবং রাজনৈতিক আধিপত্য- সবই ছিল তাদের নিয়ন্ত্রণে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নগর পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, বড় সাজ্জাদের নির্দেশে কয়েকটি সেক্টরে ভাগ হয়ে তার বাহিনীর সন্ত্রাসীরা অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ করে। যেসব এলাকায় তাদের আধিপত্য আছে, সেখানে কেউ জায়গা কিনতে গেলে অথবা বাড়ি নির্মাণ করতে গেলে কিংবা যে কোনো ধরনের ব্যবসা শুরু করতে গেলে বড় সাজ্জাদ একটি চাঁদার অংক নির্ধারণ করে দেন। ছোট সাজ্জাদ সেই চাঁদার পরিমাণ টার্গেট করা ব্যক্তিকে জানিয়ে দেন। আর টাকা আদায় করেন বড় সাজ্জাদের ভাগিনা মোহাম্মদ। টাকা না পেলে ছোট সাজ্জাদ ও রায়হানসহ সন্ত্রাসীরা মিলে হামলা করেন, অনেকসময় খুনও করেছে।

একইভাবে শহরে ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ আছে আরেকজনের কাছে। কর্ণফুলী নদীর কালুরঘাট থেকে শাহ আমানত সেতু পর্যন্ত এলাকায় বালি উত্তোলনের নিয়ন্ত্রণ আছে এক অংশের কাছে। আর রায়হানকে বড় সাজ্জাদ ব্যবহার করেন শুধুমাত্র খুনখারাবির কাজে। যখন কাউকে মেরে ফেলার জন্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তখন রায়হানের ডাক পড়ে। বড় সাজ্জাদের অস্ত্রভান্ডারও রায়হানের নিয়ন্ত্রণে আছে।

ছোট সাজ্জাদ বর্তমানে কারাগারে আছেন। গত ১৫ মার্চ ঢাকার বসুন্ধরা এলাকা  থেকে পুলিশ সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদকে গ্রেফতার করে। ছোট সাজ্জাদ তাকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য সরওয়ার হোসেন বাবলাকে সন্দেহ করেছিলেন। এরপর ঈদুল ফিতরের আগের দিন গত ২৯ মার্চ গভীর রাতে নগরীর বাকলিয়া থানার শাহ আমানত সেতু এলাকা থেকে চলন্ত প্রাইভেটকার লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে একাধিক মোটরসাইকেলে থাকা সন্ত্রাসীরা। সেই প্রাইভেটকারে চালকের পাশের সিটে বসা ছিলেন সরোয়ার। ধাওয়ার মুখে কারটি বাকলিয়া এক্সেস রোড দিয়ে এসে চন্দনপুরায় প্রবেশমুখে থেমে যায়। তখন মোটরসাইকেলে আসা সন্ত্রাসীদের মুহুর্মুহু গুলিতে দুজন নিহত হন। আহত হন আরও দুজন। সরোয়ারকে মেরে ফেলার জন্য এই হামলা হলেও অল্পের জন্য তিনি সেসময় প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন।

এ ঘটনায় কারাবন্দি ছোট সাজ্জাদকে প্রধান আসামি করে তার স্ত্রী শারমিন আক্তার তামান্নাসহ সাতজনকে আসামি করে বাকলিয়া থানায় মামলা হয়। পরে তামান্নাকেও পুলিশ গ্রেফতার করে। তবে রায়হানকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি। 

image
গত ৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের চালিতাতলী খোন্দকীয়া পাড়ায় শীর্ষ সন্ত্রাসী সরোয়ার হোসেন বাবলাকে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে হত্যা করা হয়। ছবি: সংগৃহীত 

জানতে চাইলে বাকলিয়া থানার ওসি ইখতিয়ার উদ্দিন বলেন, বাকলিয়া এক্সেস রোডে ডাবল মার্ডারের ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছিল রায়হান। তাকে আমরা একাধিকবার ধরার চেষ্টা করেছি। কিন্তু সে শহরে নিয়মিত থাকে না। রাউজান এলাকায় একেবারে দুর্গম পাহাড়ে বসবাস করে। যখন প্রয়োজন হয়, তখন শুধুমাত্র শহরে আসে। এছাড়া রায়হানসহ তার অনুসারী সন্ত্রাসীরা দেশীয় কোনো মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে না। বিদেশি নম্বর দিয়ে চালু করা হোয়াটস অ্যাপ ব্যবহার করে। এ কারণে প্রযুক্তি ব্যবহার করে তার অবস্থান শনাক্ত করা সম্ভব হয় না।

বিরোধের সূত্রপাত

জেলা পুলিশের তথ্যমতে, সরোয়ার হোসেন বাবলা ও ছোট সাজ্জাদ উভয়ই আগে শিবির ক্যাডার হিসেবে পরিচিত মধ্যপ্রাচ্যে থাকা সাজ্জাদ আলী ওরফে বড় সাজ্জাদের অনুসারী ছিলেন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর উভয়ই প্রকাশ্যে এসে সক্রিয় হন। ছোট সাজ্জাদ অপরাধ জগতের সঙ্গে থাকলেও সরোয়ার বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে দলটির রাজনীতিতে যোগ দেন। এতে বড় সাজ্জাদের রোষানলে পড়েন সরোয়ার। পরবর্তী সময়ে বালুমহালের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ছোট সাজ্জাদের সঙ্গে তার বিরোধ তৈরি হয়। ছোট সাজ্জাদ গ্রেফতার হলে এ বিরোধ আরও চাঙ্গা হয় এবং তাকে মেরে ফেলার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে সাজ্জাদ বাহিনী।

এ অবস্থায় মাসখানেক আগে বিয়ে করেন সরোয়ার হোসেন বাবলা। ওই বিয়েতে আসলাম চৌধুরী ছাড়াও নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ ও দক্ষিণ জেলার সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান উপস্থিত ছিলেন। সর্বশেষ এরশাদ উল্লাহ রায়হানের এলাকায় বায়েজিদ বোস্তামি থানার চালিতাতলী-হাজীপাড়া এলাকায় নির্বাচনি প্রচারে গেলে তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে সেই কর্মসূচিতে যোগ দেন। শতাধিক নেতাকর্মীর জটলার মধ্যে মিশে গিয়ে রায়হান অস্ত্র দিয়ে সরাসরি তাকে গুলি করে হত্যার সুযোগ কাজে লাগায় বলে জানায় সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ।

প্রতিনিধি/ক.ম