আসাদুজ্জামান লিমন
২০ অক্টোবর ২০২৫, ১১:২৯ এএম
এই জমিটি ছিল এক কৃষকের ভরসার স্থল। কিন্তু জমিটি নিচু হওয়ায় বর্ষায় পানি জমে চাষের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। মৌসুমের শুরুতে যখন কলের লাঙ্গল চলার কথা ছিল, তখন জমি ছিল পানিতে ডুবে। হঠাৎ বন্যা পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলে। চাষের আশা ছেড়ে দিতে হয় কৃষককে, জমি থেকে যায় অনাবাদি।

বর্ষার পানি সরে গেলেও জমির ভেজা কাদা ও পারিন ধারা ধরে রাখে অন্য এক অতিথিকে— কুচুরিপানা (Water Hyacinth)। দ্রুত বংশবৃদ্ধি করা এই জলজ উদ্ভিদ অল্প দিনেই ভরে দেয় পুরো অনাবাদি জমি। একসময়ের ফসলের জমি এখন সবুজের এক পুরু চাদরে ঢাকা। যদিও কৃষকের জন্য এটি সমস্যার কারণ, তবুও প্রকৃতির নিজস্ব খেয়ালে তৈরি হয়েছে এক ভিন্ন দৃশ্য।

কুচুরিপানার রাজত্বে বেগুনি হাসি কিন্তু প্রকৃতির এই 'সমস্যার' মধ্যেও এক অপরূপ সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে। সবুজ গালিচার ওপর এখন ফুটে উঠেছে শত কুচুরিপানার ফুল। হালকা বেগুনি আর সাদার মিশেলে তৈরি এই ফুলগুলো যেন জমে থাকা বর্ষার স্মৃতির ওপর এক হাসির রেখা।

চাষের অভাবে কৃষকের মনে যে বিষাদ ছিল, এই ফুলগুলো যেন সেই শূন্যতাকে সাময়িকভাবে ভরিয়ে দিচ্ছে এক প্রাকৃতিক শিল্পের ছোঁয়ায়। মাদারীপুরের কালকিনি পৌর এলাকার উত্তর রাজদীর অনাবাদি জমি এখন পরিণত হয়েছে এক শান্ত, স্বল্পস্থায়ী ফুলের বাগানে।

সূর্যের আলোয় কুচুরিপানার ফুলগুলো ঝলমল করছে। স্থানীয়দের কাছে এই দৃশ্য এখন এক পরিচিত ছবি। তারা জানেন, এই সৌন্দর্য ক্ষণস্থায়ী। কাদা শুকিয়ে গেলে, শীত নামলে এই ফুল ও পানা শুকিয়ে যাবে। কিন্তু এখন, এই মুহূর্তের জন্য, উত্তর রাজদীর এই জমি জল-জোয়ার আর প্রকৃতির লীলার এক শান্ত, বেগুনি-সাদা ক্যানভাস হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, যা বর্ষার না হওয়া ফসলের বেদনাকে ক্ষণিকের জন্য ভুলিয়ে দেয়। এখন অপেক্ষা, কবে মাটি আবার লাঙ্গল আর ধানের বীজকে স্বাগত জানাবে।
এজেড