images

সারাদেশ

নাটোরে কোরবানির পশু পরিচর্যায় ব্যস্ত খামারিরা

জেলা প্রতিনিধি

৩০ জুন ২০২২, ০১:২৯ পিএম

কোরবানির ঈদের আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। শেষ সময়ে নাটোরের খামারগুলোতে চলছে কোরবানির পশু পরিচর্যার কাজ। খামারে খামারে পশুর মোটাতাজাকরণ ও নিবিড় পরিচর্য়ার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন খামার মালিকরা। এসব খামার গুলোতে দেশীয় জাতের পশুর পাশাপাশি নেপালি, হরিয়ানা, সিন্ধি, জাতের গরু মোটাতাজাকরণ করা হয়েছে। নাটোর জেলায় এ বছর প্রায় ১৯ হাজার খামারে সাড়ে ৩ লাখ কোরবানির পশু প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগ।

প্রথম দিকে কোরবানির পশু বেচাকেনা তেমনভাবে শুরু না হলেও শেষ সপ্তাহের দিকে পশু বিক্রি পুরোপুরি শুরু হয়।খামারগুলোতে দেশীয় ও প্রাকৃতিক উপায়ে খড়, ভুষি, খৈল, কাঁচাঘাস আর পুষ্টিকর দানাদার খাবার খাওয়ানো হচ্ছে। প্রতিটি খামারে পশুর মাথার ওপর রাখা হয়েছে বৈদ্যুতিক পাখা। পশুর শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে ২৪ ঘন্টায় ঘুরছে এসব বৈদ্যুতিক পাখা। এছাড়াও পশুর খামারগুলোতে নিয়মিত দেওয়া হচ্ছে চিকিৎসাা সেবা। নাটোর জেলার সিংড়া, গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম, বাগাতিপাড়া, লালপুর উপজেলার বিভিন্ন খামার ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।

নাটোর জেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর নাটোর জেলায় তিন লাখ ৪৬ হাজার ৫৭৫ টি কোরবানির পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। যার মধ্য নাটোর সদর উপজেলায় ৫৮ হাজার ৭৬০টি, বাগাতিপাড়া উপজেলায় ২৭ হাজার ৯১৮টি, নলডাঙ্গা উপজেলায় ২৯ হাজার ২৮০টি, লালপুর উপজেলায় ৪১ হাজার ৯০৭টি, গুরুদাসপুর উপজেলায় ৮৫ হাজার ১০০টি, সিংড়া উপজেলায় ৫৫ হাজার ১০১টি এবং বড়াইগ্রাম উপজেলায় ৪৮ হাজার ৫০৮টি কোরবানির পশু প্রস্তুত রয়েছে।

সরকারি ব্যবস্থাপনায় দু’টি অনলাইন প্লাটফর্ম ‘নাটোর পশুর হাট’ ও ‘অনলাইন ডিজিটাল পশুর হাট’ থেকে কোরবানির পশু কেনাবেচা শুরু হয়েছে। এছাড়া জেলার ৭ উপজেলার প্রাণী সম্পদ অফিস, ব্যক্তি উদ্যোগে এবং বিভিন্ন খামারসহ প্রায় ৫০ থেকে ৬০টি অনলাইন ফেসবুক প্লাটফর্মে কোরবানির পশু কেনাবেচা ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারেও কোরবানির পশু বিক্রি চলছে।
cow natoreগুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর এলাকার খামারি আব্দুল কুদ্দুস জানান, ২০১৮ সালে ১০টি ষাঁড় কিনে খামার শুরু করেন তিনি। এখন বর্তমানে তার খামারে বিক্রির জন্য ৪০টি ষাঁড় গরু রয়েছে। সামনে কোরবানির ঈদে গরুগুলো তিনি বিক্রি করবেন। তার খামারে ২ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকার ষাড় গরু রয়েছে। এবছর বাজারমূল্য ভালো থাকলে লাভবান হতে পারবেন বলে জানান।

সিংড়া উপজেলার হাতিয়ান্দ এলাকার খামারি আরিফুল ইসলাম আরিফ জানান, তিন বছর ধরে খামারে ৩০টি ষাঁড় গরু লালন পালন শুরু করছেন তিনি। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে খড়, খৈল, ভুষি ও কাঁচা ঘাস খাইয়ে মোটাতাজা করেছেন। 

‘দেশীয় পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজা করা খরচ একটু বেশি হলেও গরুর কোনো রকমের ঝুঁকির মধ্যে থাকে না।’

ডেইরি ফার্ম মালিক আবু সিদ্দিকুর রহমান জানান, এ বছর তিনি ফার্মে দেশীয় পদ্ধতিতে কাঁচাঘাস ও ছোলা খাওয়ায়ে ৩৫টি ষাঁড় গরু লালন পালন করছেন। তার ফার্মে ২ লাখ টাকা থেকে ৬ লাখ টাকা মূল্যের ষাঁড় প্রস্তুত রয়েছে।  ইতোমধ্যেই খামার থেকে গরু বিক্রি শুরু করেছেন। সব খরচ বাদে এ বছর ৮লাখ টাকা আয় করতে পারবেন বলে জানান।

cow natoreসদর উপজেলার ভবানীপুর এলাকার খামারি আলম হোসেন বলেন, ৩ বছর আগে ৫টি দেশী ষাঁড় দিয়ে খামার তৈরী করি। বর্তমানে আমার খামারে ২০টি দেশি ষাঁড় রয়েছে। একেকটি গরুর মূল্য দেড় লাখ থেকে ৩ লাখ পর্যন্ত। দেশীয় খড়, ভূষি, খৈল ও জমির তাজা ঘাস খাওয়ায়ে গরু মোটাতাজা করছি। কোনো প্রকার ওষুধ বা ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়নি। সম্পূর্ণ কাঁচাঘাস আর পুষ্টিকর দানাদার খাবার খাওয়ানো হচ্ছে। 

বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া খামারি  রাজু আহমেদ জানান, ১০ বছর ধরে খামার পরিচালনা করছেন তিনি। এবার কোরবানির জন্য খামারে ছোট বড় গরু মিলে ৪২টি ষাড় গরু প্রস্তত করা রয়েছে। 

‘প্রতিবারের মতো এবার অনলাইনে গরু বিক্রি করছি। এছাড়াও প্রতিদিন ক্রেতারা গরু কিনতে খামারে আসছেন। 

নাটোর জেলা পশু সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. গোলাম মোস্তফা ঢাকা মেইলকে বলেন, জেলায় বিভিন্ন খামার ও হাটে কোরবানির পশু বিক্রি শুরু হয়েছে। মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর ওষুধ ব্যবহার না করে দেশীয় খাবার খাইয়ে পশু মোটাতাজাকরণে কৃষক ও খামারিদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিকর ঔষুধ ব্যবহার বন্ধে মাঠ পর্যায়ে নিয়মিত তদারকি করা হয়েছে। 

প্রতিনিধি/এএ