জেলা প্রতিনিধি
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:৫৩ পিএম
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের মনিরাম কাজী গ্রামের শিশু মনিরুজ্জামান মনির (১৪)। স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করার ক্ষমতা নেই। সবসময় থাকে বিছানায়। অর্থাভাবে ছেলের জন্য একটি হুইলচেয়ার কেনারও সামর্থ্য নেই রিকশাচালক বাবা আলতাব হোসেনের। সরকার ও বিত্তবানদের কাছে একটি হুইলচেয়ারের আকুতি জানিয়েছেন এই বাবা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিবন্ধী শিশুটি শোবার ঘরের মাটিতে বস্তা দিয়ে বানানো এক বিছানায় শুয়ে আছে। ছোট্ট ঘরটির চাল ও বেড়া টিনের হওয়ায় প্রচণ্ড গরম পড়ছে সেখানে। অসুস্থ মা মল্লিকা বেগম শিশুটিকে একাই ঘরের বাইরে নিতে পারেননি। ঘরের বাইরে বাতাসে নিতে অপেক্ষা করছেন কারও জন্য। প্রতিবন্ধী শিশুটি না পারে উঠতে, না পারে বসতে। বলতে পারে না কথাও। প্রসাব-পায়খানা কখন হয় তাও সে বুঝতে পারে না। এমনকি সে নড়াচড়াও করতে পারে না। মুখে তুলে খাওয়াতে হয়।
বাবা আলতাব হোসেন জানান, জন্মে পর অনেক ডাক্তারকেই দেখাইছি। কেউ আমার ছেলেকে ভালো করতে পারেনি। সবাই বলেছেন ওর নাকি পুষ্টির অভাব ছিল। গরিব মানুষ। রিকশা টানি খাই। আমি পুষ্টির কি বুঝি।
আলতাব হোসেন বলেন, এখনও ওকে প্রত্যেকদিন ওষুধ খাওয়াতে হয়। প্রত্যেক মাসে ৩ হাজার টাকা লাগে ওর জন্য। ওষুধ বন্ধ করলেই ঝাঁকুনি ও কান্না শুরু হয় এবং হাত-পা শিক লাগি আসে। আরও একটা ২ বছরের একটা ছেলে আছে। বসতভিটা ৭ শতাংশ ছাড়া আর কোনো জমি নেই আমার। প্রায় ৩০ বছর ধরে ঢাকায় থেকে ভাড়ায় রিকশা চালাই। ছেলের ওষুধ এবং বাড়ি খরচ দিতেই হিমশিম খেতে হয়। আগের মতো আর মানুষও টানতে পারি না।
একটা হুইলচেয়ারের আকুতি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, মেম্বার, চেয়ারম্যান এবং সমাজের সবাইকে অনেকবার বলেছি। অনেকে জানেও আমার ছেলেটি সেরিব্রালপালসি রোগে আক্রান্ত। কিন্তু কেউ সহযোগিতা করেনি আমাকে। যতদিন যাচ্ছে ততই ওর ওজন বাড়ছে। টানাটানি করতে খুব কষ্ট হয় ওর মায়ের।
বামনডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মাহাবুবুর রহমান বলেন, এ ধরনের সুযোগ আমাদের নেই। এরপরও খোঁজ নিয়ে দেখছি কোনো ব্যবস্থা করা যায় কি না।
ওই ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার জানান, পরিষদ থেকে হুইলচেয়ার দেওয়ার সুযোগ নেই। সমাজসেবা অফিসে আবেদন দিয়ে আমাকে একটা কপি দিতে বলেন। সহযোগিতা করব।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রফিকুজ্জামান খানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজ কুমার বিশ্বাস বলেন, একটা আবেদন দিতে বলেন। দেওয়ার ব্যবস্থা করব।
প্রতিনিধি/এসএস