images

সারাদেশ

ভারী বর্ষণে সিলেটে নতুন আতঙ্ক

জেলা প্রতিনিধি

২৯ জুন ২০২২, ০২:৫৩ পিএম

images

দুই দফায় ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি এখনও সামলে উঠতে পারেনি সিলেটবাসী। ধীরে ধীরে পানি কমতে শুরু করায় ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা শুরু হয়েছিল। এর মধ্যেই ভারী বর্ষণের কারণে বেড়ে চলেছে সিলেটের সব কটি নদনদীর পানি। ফলে জেলা ও মহানগরের বিভিন্ন এলাকায় নতুন করে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। আগামী তিন দিন বৃষ্টি প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে বলে আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। এতে জনমনে দেখা দিয়েছে নতুন আতঙ্ক।

বুধবার (২৯ জুন) সকালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ ঢাকা মেইলকে বলেন, পানি কমা শুরু হয়েছিল। কিন্তু ভারী বর্ষণে আবারও সিলেটের সবগুলো নদনদীর পানি বেড়েছে। সুরমা নদীর একটি ও কুশিয়ারা নদীর তিনটি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, আগামী কয়েক দিন সিলেটে বৃষ্টি হতে পারে। ভারতে বৃষ্টি হলে সিলেটের দিকে পাহাড়ি ঢল নামবে। এতে আবারও পানি বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

পাউবো সূত্র জানায়, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে বুধবার বেলা ১২টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে ২৯ সেন্টিমিটার, সিলেট পয়েন্টে ১৬ সেন্টিমিটার বেড়েছে। এছাড়া কুশিয়ারা নদীর পানি শেরপুর পয়েন্টে এক সেন্টিমিটার বেড়েছে। বেড়েছে লোভা নদীর পানিও।

পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে মঙ্গলবার (২৮ জুন) রাত থেকে নগরের বেশিরভাগ এলাকা আবারও জলমগ্ন হয়ে পড়ে। উপশহর, তালতালা, মির্জা জাঙ্গালসহ কিছু এলাকার ঘরবাড়িতেও পানি ঢুকে পড়েছে। এতে আবার দুর্ভোগে পড়তে হয় এসব এলাকার বাসিন্দাদের। পানি আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটে অনেকের।

মঙ্গলবার রাতে পানি ঢুকে পড়ে জামতলা এলাকার বাসিন্দা সাগর চৌধুরীর বাসায়। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, বারবার এভাবে পানি ঢুকে পড়ছে। আমরা কী করবো, কোথায় যাবো কিছুই বুঝতে পারছি না। তবে বুধবার সকালে ঘর থেকে পানি নেমেছে বলে জানান তিনি।

মঙ্গলবার রাতের বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়ে নগরের উপশহর এলাকা। এই এলাকার বাসিন্দা মাসুক আমিন ঢাকা মেইলকে বলেন, গতরাতে আতঙ্কে আমরা কেউ ঘুমাতে পারিনি। রাত জেগে পানি পাহারা দিয়েছি। রাতে রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল।

মাসুক বলেন, টানা ১০ দিন পর মাত্র দুই দিন আগে ঘর থেকে পানি নেমেছে। এখন আবার ঘরে পানি উঠলে দুর্ভোগের কোনো সীমা থাকবে না।

ff

আগামী তিন দিন সিলেটে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে বলে আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানিয়েছেন। তিনি ঢাকা মেইলকে জানান, বুধবার (২৯ জুন) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায়  সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।

গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে আজ বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত সিলেট অঞ্চলে ১১০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে বলেও জানান তিনি।

সিলেটে গত দেড় মাসের ব্যবধানে দুই দফা বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গত ১২ মে থেকে সিলেট শহরসহ বিভিন্ন উপজেলায় বন্যা দেখা দেয়। সে দফায় প্রায় ১০ দিন পর পানি নেমে যায়। কিন্তু ১৪ জুন থেকে টানা বৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢলে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সঙ্গে সারাদেশের সঙ্গে সিলেটের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার উপক্রম হয়।

বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলা প্রায় তিন দিন সারাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিল। এমন অবস্থায় জরুরিভাবে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হলে উদ্ধার তৎপরতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে অংশ নেয় বাহিনীটি। এর মধ্যে সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় পানি নামতে শুরু করেছে। তবে গতকাল মঙ্গলবার রাত বৃষ্টি শুরু হওয়ায় বানভাসিদের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

প্রতিনিধি/জেবি