জেলা প্রতিনিধি
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:৩৮ পিএম
কাশফুল ফোটা শরতে, আসছে পুজো বাজবে ঢাক, বাজবে কাঁসর, জমবে এবার ধুনটি নাচ, এই ছন্দে যেন মেতে আছেন প্রতিটি হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা।
শারদীয় দুর্গোৎসবকে সামনে রেখে মন্দিরগুলোতে চলছে ব্যাপক প্রস্ততি। প্রতিমা শিল্পীর কল্পনায় দেবী দুর্গার অনিন্দ্যসুন্দর রূপ দিতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ।
বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে মুন্সিগঞ্জের প্রায় প্রতিটি পূজামণ্ডপে প্রতিমা তৈরিতে শেষ মুহূর্তে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন মৃৎ শিল্পীরা।
![]()
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) সরজমিনে মুন্সিগঞ্জের বিভিন্ন পূজা মণ্ডপ ঘুরে দেখা গেছে, ইতোমধ্যে প্রতিটি মণ্ডপে প্রতিমার কাঠামোর মাটির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। শুরু হয়ে গেছে রং ও সাজসজ্জার কাজ। দেবীকে সাজিয়ে তুলছে জেনো এক নতুন রূপে, প্রতিটি পূজামণ্ডপের জন্য তৈরি করা হচ্ছে দুর্গা, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ, অসুর, সিংহ, মহিষ, প্যাঁচা, হাঁস, সাপসহ প্রায় ১২টি প্রতিমা।
হিন্দু সম্প্রদায়ের দুর্গতিনাশিনী দূর্গাদেবীকে বরণ করে নিতে মণ্ডপে মণ্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ, ছাড়াও সাজসজ্জার কাজ চলছে ঠিক একই গতিতে। ঢাক, ঢোল বাদ্যকারেরা বাদ্যযন্ত্র ঠিকঠাক করে নিচ্ছে তার পাশাপাশি, প্রতিমা শিল্পীরা মহাব্যস্ত প্রতিমা তৈরিতে। সেইসঙ্গে ব্যস্ত প্রতিমার রং শিল্পীরা ও মূর্তি গড়া শেষে মুহূর্তে রংতুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে প্রতিমার সৌন্দর্য।
![]()
সনাতন ধর্মীয় বড় উৎসবকে ঘিরে জেলার হিন্দুপাড়া গুলিতে আগাম শারদীয় উৎসবের আমেজ বয়ে চলছে। উঁচু-নিচুর বিভেদ ভুলে সমাজের সব স্তরের মানুষকে একত্র করে মহামিলন হয় বলে এ পূজাকে বলা হয় সার্বজনীন পূজা। এছাড়া ও শরৎকালে হয় বলে এই পূজাকে বলা হয় শারদীয় উৎসব।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পঞ্জিকা অনুযায়ী, আগামীকাল ২১ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মধ্যে দিয়ে দেবী পক্ষের সূচনা হবে। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর দেবীর বোধন ও মহাপঞ্চমী এবং ২৮ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠীপূজার মধ্যে দিয়ে মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর মহাসপ্তমী এবং ৩০ সেপ্টেম্বর মহা অষ্টম অনুষ্ঠিত হবে। ১ অক্টোবর মহানবমী এবং ২ অক্টোবর বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসবের পরিসমাপ্তি ঘটবে। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, এ বছর দুর্গাদেবী গজে বা হাতির পিঠে চড়ে মর্ত্যে আগমন করবেন। আর দোলা বা পালকিতে চড়ে ফিরে যাবেন।
এদিকে যথাযোগ্য ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যে দিয়ে পূজা উদ্যাপনের লক্ষ্যে জেলার পূজা মণ্ডপগুলো প্রস্তত করা হচ্ছে। দেবী দুর্গাকে বরণ করতে জেলার ৩ শত ৫৮টি পূজা মণ্ডপে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে।
![]()
মুন্সিগঞ্জ জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের আহ্বায়ক শ্রী স্বপন কুমার মোদক বলেন, জেলার ৬টি উপজেলায় এ বছর ৩ শত ৫৮টি পূজা মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে সদরে ৪৫টি, গজারিয়ায় ১০টি, টংগীবাড়িতে ৫২টি , সিরাজদিখানে ১৩২টি , লৌহজংয়ে ৩৪টি এবং শ্রীনগরে ৮৫টি পূজা মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।
এবার পূজামণ্ডপগুলোতে যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কঠোর অবস্থানে থাকার কথা জানিয়েছে পুলিশ। এছাড়া প্রায় প্রতিটি পূজা মণ্ডপগুলোতে নজরদারি বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রতিটি পূজা মণ্ডপে সিসি টিভি ক্যামেরা স্থাপনসহ পুলিশ এবং আনসার সদস্য মোতায়েন করার পাশাপাশি র্যাব সদস্যদের টহলের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার মুহাম্মদ শামসুল আলম সরকার।
![]()
তিনি বলেন, উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গোৎসব উদ্যাপনের লক্ষ্যে পুলিশ প্রশাসন জেলার সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে। প্রতিটি পূজা মণ্ডপে আনসার ও পুলিশ মোতায়েন থাকবে। এছাড়া সাদা পোশাকেও পুলিশ সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবে। তিনি জানান, এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির কোনো আশঙ্কা নেই।
জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের আহ্বায়ক শ্রী স্বপন কুমার মোদক বলেন, জেলা পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় গত বছরের চেয়ে এ বছর ২০টি বেশি পূজা মণ্ডপে পূজার আয়োজন হচ্ছে। শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদ্যাপনের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন এবং জেলা পুলিশ প্রশাসনের সাথে মতবিনিময় সভা হয়েছে। তারা সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।
![]()
তিনি আরও বলেন, দেবীকে মহা আনন্দে বরণ করে নিতে সর্বত্র জেনো আনন্দঘন পরিবেশ বিরাজ করছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের শিশু, নারী-পুরুষসহ প্রায় সব বয়সী মানুষ এ শারদীয় উৎসবকে সার্থক করতে প্রহর গুনছে প্রতি মুহূর্তে।
প্রতিনিধি/এসএস