images

সারাদেশ / শিক্ষা

রাকসু নিয়ে নবীন শিক্ষার্থীদের ভাবনা

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৩১ পিএম

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক চর্চা, নেতৃত্ব গঠন ও অধিকার আদায়ের এক ঐতিহাসিক মঞ্চ। ১৯৫৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা প্রতিনিধি কাঠামোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।

তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৬২ সালে রাকসুর সূচনা হয়, যা পরবর্তীতে ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ, ৯০ এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, ২৪ এর জুলাই বিপ্লবসহ নানা গণআন্দোলনে রেখেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। তবে ১৯৮৯ সালের পর থেকে দীর্ঘ প্রায় তিন যুগ রাকসু নির্বাচন বন্ধ ছিল। মাঝে রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় এসেছে বারংবার, কিন্তু রাকসু আর নির্বাচনের মুখ দেখেনি। ২০২৪ এর বিপ্লবের পর অবশেষে ২০২৫ সালে ২৫ সেপ্টেম্বর বহু প্রতীক্ষিত রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

রাকসু নির্বাচনের সম্ভাবনা ঘিরে শিক্ষার্থী সমাজে উত্তাপ ছড়াচ্ছে নানা ভাবনা। কারো কাছে এটি গণতান্ত্রিক নেতৃত্বের অনুশীলনের ক্ষেত্র, কারো কাছে শিক্ষার্থীদের মৌলিক সমস্যা সমাধানের হাতিয়ার। সব মিলিয়ে রাকসু নিয়ে ভাবনা এখন সময়ের দাবি ও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তেমনি রাকসুর একটি বড় আলোচনায় সদ্য ভর্তি হওয়া প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা। এ বছর রাবিতে ভর্তি হওয়া প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীর সংখ্যা চার হাজার তিনশত ৭ জন। এই বিপুল সংখ্যক নবীন শিক্ষার্থীর ভোট যেদিক যাবে, সেদিকটা জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। তাই রাকসু নিয়ে কি ভাবছেন নবীনরা?

প্রথম বর্ষের (২০২৪-২৫ সেশন) নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আলী চৌধুরী বলেন, এমন প্রার্থীকে ভোট দিতে আগ্রহী হব, যাদের মধ্যে আমি আস্থা, সহজলভ্যতা এবং নেতৃত্বের সক্ষমতা দেখতে পাব। যিনি সহজ-সরল ও বন্ধুসুলভ, যার মধ্যে শিক্ষাবান্ধব মনোভাব রয়েছে। সংগঠিত কিন্তু নিরপেক্ষ ব্যক্তি, যোগাযোগ ক্ষমতা অনেক বেশি। যার মধ্যে কর্মদক্ষতা ও সৃজনশীলতা রয়েছে, যিনি নিরাপত্তা ও পরিবেশবান্ধব চিন্তা করেন। যেমন ক্যাম্পাসে সহিংসতা, র‍্যাগিং, অন্যায্য চাপ থেকে মুক্ত রাখার প্রতিশ্রুতি দিলে নবীনরা বেশি আকৃষ্ট হয়। তাই আমি একজন নবীন শিক্ষার্থী হিসেবে চাই আমাদের ক্যাম্পসে আর কখনো র‍্যাগিং বা গেস্টরুম কালচার যেন ফিরে না আসে। সহজভাবে বললে, আমি একজন নবীন শিক্ষার্থী হিসবে যেসকল প্রার্থীর মধ্যে আমার এই পছন্দের বিষয়গুলো পাব এবং যাদের মাঝে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং আমার অধিকার আদায়ে আমার পাশে থাকার স্বদিচ্ছা থাকবে এমন প্রার্থীকেই আমি ভোট দিব।

আরেক নবীন শিক্ষার্থী সিয়াম শাহরিয়ার বলেন, আমি মনে করি, যেসব প্রার্থী বিগত সময়ে বা বিপ্লব পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করেছে, তাদেরকে ভোট দেওয়া উচিত। এক্ষেত্রে আমি ছাত্রশিবিরকে কিছুটা ইউনিক মনে করছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই আমাদেরকে নিয়ে তাদের কিছু ভালো উদ্যোগ দেখেছি, এতে ভোট পাওয়ার ক্ষেত্রে তারা কিছুটা এগিয়ে থাকবে। ২৪ এর বিপ্লবে ক্যাম্পাস দখলমুক্ত হওয়ার পর ছাত্র রাজনীতির ধারাটাই পাল্টে গিয়েছে। সেই জায়গা থেকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চাই নিরহংকারী, ছাত্রবান্ধব, কল্যাণমুখি ছাত্র নেতৃত্বই রাকসুতে আসুক।

নবীন শিক্ষার্থী সাবরিনা সুলতানা বলেন, নবীন শিক্ষার্থী হিসেবে আমি তাকেই ভোট দিবো, যে কাজ করবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের হয়ে। তার মধ্যে থাকবে সততা ও নৈতিকতা। যে প্রার্থী দুর্নীতি, স্বার্থসিদ্ধি বা সহিংস রাজনীতি থেকে দূরে থাকবে এবং শিক্ষার্থীদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেবে। যারা নবীন শিক্ষার্থীদের সমস্যা, যেমন ক্লাস, পরীক্ষা, লাইব্রেরি বা আবাসন ইত্যাদি বিষয়ে আন্তরিকভাবে কাজ করবে। যিনি অহংকারী নয়, বরং সহজপ্রাপ্য ও বন্ধুসুলভ আচরণ করবে। ক্যাম্পাসে সন্ত্রাস, ভয়ভীতি বা দাঙ্গার রাজনীতি নয়; বরং শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ পরিবেশ তৈরির উদ্যোগ নেবে। সংগঠন, যোগাযোগ ও সমস্যা সমাধানে দক্ষ থেকে সত্যিকার অর্থে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে এমন প্রার্থীকেই আমি চাই।

এছাড়া ভিন্নমত ও সব বিভাগের শিক্ষার্থীদের সমান গুরুত্ব দেবে এবং নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। সর্বোপরি এবার নির্বাচনে এমন প্রার্থীই বিজয়ী হোক, যিনি হবেন সৎ, যোগ্য, শিক্ষার্থীবান্ধব এবং সহিংসতামুক্ত নেতৃত্বের প্রতীক। এমনটাই আশা করছেন এই নবীন শিক্ষার্থী।

প্রতিনিধি/টিবি