images

সারাদেশ

ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের প্রার্থীদের পক্ষে ওসির ফেসবুক পোস্ট!

জেলা প্রতিনিধি

০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১:৪৭ পিএম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে বিএনপি-সমর্থিত ছাত্রদলের প্রার্থীদের পক্ষে প্রকাশ্যে শুভকামনা জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মোজাফ্ফর হোসেন। এই ঘটনায় তার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয়েছে ব্যাপক সমালোচনা ও উদ্বেগ।

জানা গেছে, মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাত ২টার দিকে ওসি মোজাফ্ফর হোসেন তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি ‘২১, ১৭, ০৮’ লেখা একটি ডিজিটাল কার্ড পোস্ট করেন। এই তিনটি সংখ্যা হলো ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদে মনোনীত প্রার্থীদের ব্যালট নম্বর।

কার্ডের ক্যাপশনে ওসি লিখেন: মেধাবীদের জন্য শুভ কামনা রইল।

নির্বাচনে ব্যালট নম্বর ২১-এ ভিপি (সহসভাপতি) পদে প্রার্থী হয়েছেন আবিদুল ইসলাম আবিদ, ১৭ নম্বরে জিএস (সাধারণ সম্পাদক) প্রার্থী তানভীর বারী হামিম এবং ৮ নম্বরে এজিএস (সহ-সাধারণ সম্পাদক) পদে আছেন তানভির আল হাদী মায়েদ। এ তিনজনই ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী।

ওসির এই পোস্ট প্রকাশ্যে আসার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ পর্যন্ত ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। তাদের বক্তব্য, দায়িত্বশীল পদে থেকে এমন রাজনৈতিক পক্ষপাত শোভন নয় এবং তা প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তোলে।

সামাজিকমাধ্যমে অনেকেই মন্তব্য করেন, একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে ওসির দায়িত্ব হচ্ছে নিরপেক্ষ থাকা। অথচ তিনি নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সরাসরি এক পক্ষের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, যা অনৈতিক ও প্রশাসনিক আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মোহাম্মদ মোবারক হোসাইন বলেন, একজন ওসি যদি সরাসরি একটি দলের পক্ষ নিয়ে প্রচারণায় অংশ নেন, তা খুবই অনভিপ্রেত। এভাবে পুলিশ প্রশাসনের ভেতরে পক্ষপাত থাকলে সাধারণ মানুষের আস্থা কোথায় থাকবে?

এনসিপি’র কেন্দ্রীয় নেতারাও একই ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, একজন থানার ওসি জাতীয় নির্বাচনের আগমুহূর্তে এমন স্পষ্ট পক্ষপাতমূলক অবস্থান নিলে তা ভবিষ্যতে আরও বড় অনিয়মের ইঙ্গিত দেয়।

তবে ওসি মোজাফ্ফর হোসেন এই বিষয়ে দাবি করেন, তার ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়েছিল। তার ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি নিজে এই পোস্ট দেননি এবং এ নিয়ে তিনি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।

তবে অনেকেই তার এই দাবিকে বিশ্বাসযোগ্য বলে মানতে পারছেন না। কারণ, পোস্টটি দীর্ঘ সময় ধরে প্রোফাইলে দৃশ্যমান ছিল এবং এরপর সমালোচনার মুখে সেটি সরানো হয়। ততক্ষণে স্ক্রিনশট ভাইরাল হয়ে গেছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশের ফেসবুক আইডি যদি সত্যিই হ্যাক হয়ে থাকে, তাহলে সেটিও উদ্বেগজনক। কারণ এতে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ডিজিটাল নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে।

এই ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট প্রশাসন কিংবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

প্রতিনিধি/এইউ