জেলা প্রতিনিধি
০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৪:২১ পিএম
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরাল পাগলের আস্তানায় বিক্ষুব্ধ জনতার হামলা, অগ্নিসংযোগ ও ভক্তদের সঙ্গে পাল্টা সংঘর্ষে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এতে দুই পক্ষের শতাধিক মানুষ আহত হন। এ ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন রাসেল মোল্লা (২৮) নামে এক যুবক।
রাসেল মোল্লা জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের জটু মিস্ত্রিপাড়ার বাসিন্দা ও আজাদ মোল্লার ছেলে। নিহত রাসেলের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তিনি মোস্তফা মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজে কাভার্ডভ্যান চালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
নিহতের বাবা ও দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান মো. আজাদ মোল্লা বলেন, ‘রাসেল ছোটবেলা থেকেই গোয়ালন্দ পাক দরবার শরিফে যাতায়াত করত, দরবারকে খুব ভালোবাসত। নিয়মিত সেখানে যেত। এমনকি তার দাদাও এই দরবারের ভক্ত ছিলেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুক্রবার রাসেল গোয়ালন্দ পাক দরবার শরিফে গিয়েছিল। দুপুরের পর সেখানে সংঘর্ষ শুরু হলে অনেকেই আহত হন। আমার ছেলের মুখ হাতুড়ি দিয়ে থেঁতলানো হয়েছে, পেছন দিক থেকে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে আমার ছেলেটা মারা যায়। আমার ছেলের কী দোষ ছিল? কেন তাকে মেরে ফেলা হলো? আমি আমার ছেলের হত্যার বিচার চাই।’
মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে আজাদ মোল্লা জানান, ‘মামলার বিষয়ে আমরা এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। আমাদের আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।’
এদিকে, নুরাল পাগলের আস্তানায় হামলার সময় পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ৩ হাজার ৫০০ জনকে আসামি করে গোয়ালন্দ ঘাট থানায় একটি মামলা দায়ের করেন উপপরিদর্শক (এসআই) সেলিম মোল্লা।
রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. শরীফ আল রাজীব বলেন, ‘গোয়ালন্দ ঘাট থানার এসআই সেলিম মোল্লা বাদী হয়ে অজ্ঞাত ৩ হাজার ৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন। আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।’
তিনি আরও জানান, শনিবার রাতে যৌথ অভিযান চালিয়ে গোয়ালন্দঘাট থানা ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ৫ জনকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃত আসামিরা হলেন গোয়ালন্দ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক হিরু মৃধা; উজানচর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মাসুদ মৃধা; শাফিন সরদার; এনামুল হক জন;
কাজী অপু।
শুক্রবার (৫ আগস্ট) জুমার নামাজের পর রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলের দরবারে বিক্ষুব্ধ জনতা হামলা চালায়। এ সময় তারা দরবারে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করে। পাল্টা প্রতিরোধে নুরাল পাগলের ভক্তরা সংঘর্ষে জড়ালে উভয় পক্ষের শতাধিক মানুষ আহত হন।
পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশের ওপর হামলা চালায় এবং গাড়ি ভাঙচুর করে। এতে ১০ থেকে ১২ জন পুলিশ সদস্য আহত হন। পরবর্তীতে বিক্ষুব্ধ জনতা নুরাল পাগলের মরদেহ কবর থেকে তুলে পুড়িয়ে দেয়।
প্রতিনিধি/একেবি