জেলা প্রতিনিধি
০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৩৩ পিএম
মৌলভীবাজারের হাওরাঞ্চলের কৃষক পরিবারগুলো কৃষির ওপর নির্ভরশীল। ভালো ফলন হলে মৌলিক চাহিদা মিটিয়ে জীবনযাপন কিছুটা সহজ হয়। ফলন খারাপ হলে বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে পড়লে সারাবছর ধারদেনা করে চলতে হয়। সেই হাওরপাড়ের মূল আতঙ্ক হচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঝড়-জলাবদ্ধতা-বন্যা। এসব দুর্যোগে এবারও নিঃশব্দে গ্রাস করছে কৃষকের স্বপ্নও।
মৌসুম শেষের পথে অথচ জমি এখনও চাষের অনুপযুক্ত—এই চিত্র এখন মৌলভীবাজারের হাওরাঞ্চলে।
কাউয়াদিঘী হাওর জেলার সদর উপজেলার দুটি ও রাজনগরের চারটি ইউনিয়নজুড়ে বিস্তৃত। জলাবদ্ধতার কারণে জমিতে চারা রোপণ করতে পারছেন না সেখানকার হাজারো কৃষক। রোপা আমনের ভরা মৌসুমেও অনেক মাঠ এখনও পানিতে ডুবে আছে।
জলাবদ্ধতা দূর করতে স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগ জরুরি— এমনটাই বলছেন ভুক্তভোগীরা। তারা চান দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হোক যেন বাকি মৌসুমটুকু কাজে লাগিয়ে অন্তত কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারেন।
![]()
তবে কৃষি বিভাগ আশ্বাসের বাণী শোনালেও পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, বিদ্যমান পাম্প হাউস দ্বারা পানি নিষ্কাশনের সুযোগ নেই।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় কাশিমপুর পাম্প হাউসের ৮টি পাম্পের সাহায্যে বোরো কাটার সময় বৃষ্টির জমে যাওয়া অতিরিক্ত পানি সেচ দিয়ে কুশিয়ারা নদীতে ফেলা হয়। অন্যদিকে, মনু প্রকল্পের অপর অংশে মনু নদে মনু ব্যারাজে স্লুইসগেট। এখানে খাল খনন করে আটকানো পানি শুষ্ক মৌসুমে কাউয়াদিঘী হাওরের ওপরের অংশে সরবরাহ করে বোরো আবাদের কাজে লাগানো হয়।
এদিকে, বছরজুড়েই নানা সমস্যা মোকাবিলা করতে হয় হাওরপাড়ের কৃষকদের। তারা জানান, মনু প্রকল্পের অনেক খাল ভরাট হওয়ায় ছোট হয়ে যাচ্ছে। এ সব খাল দিয়ে অবাধে পানি সরবরাহ হয় না। ফলে বোরো মৌসুমে শত শত একর জমি অনাবাদি থেকে যায়। এখন আমন মৌসুমে জলাবদ্ধতার কারণে সমস্যা হচ্ছে।
জানা গেছে, বিল ভরাটের ফলে কাউয়াদিঘী হাওরপারের অনেক জমিতে বোরো ও আমন ফসল ফলানোর সুযোগ সৃষ্টি হলেও তা বর্তমানে বিঘ্নিত। হাওরপারের সদর উপজেলার বিরাইমাবাদ, রায়পুর, রসুলপুর, বানেশ্রী, কান্দিগাঁও, জগৎপুর এবং রাজনগর উপজেলার পাঁচগাও, আমিরপুর, রক্তা, জাহিদপুর, ফতেপুর, গোবিন্দপুর, শাহপুর, অন্তেহরিসহ শতাধিক গ্রামের কৃষিজীবীরা বহু বছর ধরে হাজার হাজার একর জমিতে বোরো ও আমন দুটি ফসল ফলিয়ে আসছেন নানা প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে।
![]()
কান্দিগাঁও গ্রামের কৃষক মুজাহিদ মিয়া বলেন, প্রত্যেক বছর এই জলাবদ্ধতায় আমাদের ভোগায়। ঋণ করে চাষ করি, শেষে এই পানিতেই সব শেষ হয়ে যায়।
জগৎপুর এলাকার কৃষক জয়নাল মিয়া বলেন, প্রতি বছর এই সময় আমরা জমিতে ধানের চারা রোপণ নিয়ে ব্যস্ত থাকি। কিন্তু এবার পানিই নামছে না, কীভাবে রোপণ করবো?
অন্তেহরি এলাকার কৃষক রথীন্দ্র দাশ বলেন, অনেক কৃষকের ধান চারা এরইমধ্যে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আবার কেউ কেউ নতুন করে চারা প্রস্তুত করার কথা ভাবছেন, কিন্তু এতে টাকা ও সময় দুটোই বাড়তি ব্যয় হবে।
![]()
হাওড় রক্ষা সংগ্রাম কমিটির মৌলভীবাজার সদর উপজেলা শাখার সভাপতি আলমগীর হোসেন বলেন, জলবদ্ধতায় বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। বীজতলায় চারা বুড়ো হয়ে যাচ্ছে। এখন চারা রোপণ করতে না পারলে অনেক জমি অনাবাদি থেকে যাবে। পানি নিষ্কাশনের জন্য কাশিমপুর পাম্প হাউসে মানববন্ধনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেও কোনো সুফল পাচ্ছি না। তাই আমাদের দাবি, দ্রুত পানি নিষ্কাশন করা হোক।
আরও পড়ুন
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খালেদ বিন অলীদ বলেন, কাউয়াদিঘী হাওরের যেসব জায়গায় কৃষকরা ধান রোপণ করতে চাইছেন, সেখানে ভাদ্র মাসে পানির লেভেল ৭.৬ থেকে ৭.৭ রাখতে হয়। কিন্তু বর্তমান পাম্প হাউস দিয়ে ভাদ্র মাসে তা সম্ভব নয়। পাশাপাশি এর নিচে পানির লেভেল নামলে হাওরের পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
যতটুকু সম্ভব পানি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা চলছে জানিয়ে মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. জালাল উদ্দিন বলেন, পানির লেভেল ৭ থেকে সাড়ে ৭ মিটারের মধ্যে নেমে এলে এ হাওরের ৮০০ থেকে ৯০০ হেক্টর জমিতে ফসল আবাদ সম্ভব।
প্রতিনিধি/টিবি