জেলা প্রতিনিধি
০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১:৫১ পিএম
ঠিকাদারের গাফিলতি, সিটি করপোরেশনের উদাসীনতায় গাজীপুরের ইটাহাটা কলাবাগান সড়ক যেন ভোগান্তির অন্য এক নাম। ভাঙ্গাচোরা, বেহাল সড়ক ও বিভিন্ন স্থানে রাস্তা কেটে গভীর গর্ত করে ফেলায় হাঁটা ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন চলে না এই সড়কে। ফলে পণ্য পরিবহন ও যাতায়াতে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন লাখো এলাকাবাসী।
সিটি কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারের গাফিলতিকে দায়ী করে বলছে, চুক্তি অনুযায়ী কাজ না করায় ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিল করা হয়েছে। নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করে দ্রুত সড়কের কাজ সম্পন্ন করা হবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইটাহাটা, কলাবাগান হয়ে মজলিশপুর ও কামারবাসুলিয়া এবং কলাবাগান হয়ে বারবৈকা পর্যন্ত আঞ্চলিক সড়কটি দিয়ে লাখো এলাকাবাসী যাতায়াত করেন। তাদের যাতায়াতের সুবিধার্থে ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর ইটাহাটা রাস্তার মাথা থেকে বারবৈকা শাহ আলমের বাড়ি পর্যন্ত আঞ্চলিক সড়কটি নির্মাণ কাজ শুরু করে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। এজন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স তমা এন্টারপ্রাইজকে কাজ দেওয়া হয়। প্রকল্পের মেয়াদ কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে গেল বছরের ৪ মে তাদের কাজ সম্পন্ন করার কথা। কিন্তু বিগত আড়াই বছর ধরে সিটি করপোরেশনের নিযুক্ত ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে সময়মতো নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। ২০ ফুট প্রশস্ত ও সাড়ে ৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কের বেশির ভাগই চলাচলে অনুপযোগী। কাঁচা রাস্তায় কোথাও কোথাও গভীর গর্ত করে কেটে রাখা হয়েছে, কোথাও ছোট বড় গর্ত। এ অবস্থায় চরম বিপাকে পড়েছেন কয়েকটি এলাকার লাখো অধিবাসী।
![]()
এলাকাবাসী বলেছেন, ভাঙ্গাচোরা, কাঁচা রাস্তায় কোনো ভারী যানবাহন চলাচল করে না। সামান্য বৃষ্টিতে পানি জমে কর্দমাক্ত হয়ে পড়ে। ফলে হাঁটা চলাও কঠিন। সীমিত কিছু অটোরিকশা চলাচল করলেও বেহাল সড়কের কারণে প্রায় দুর্ঘটনা ঘটে। রোগীসহ সাধারণ মানুষকে অনেক দুর্ভোগ নিয়ে বিকল্প পথে যাতায়াত করতে হচ্ছে। সাধারণ মানুষের চলাচলের জন্য দ্রুত রাস্তার কাজ শেষ করতে দাবি জানিয়েছেন তারা।
এ ব্যাপারে স্থানীয় ওষুধ ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন বলেন, ইটাহাটা কলাবাগান সড়কটি দুই বছর ধরে বেহাল অবস্থা। ঠিকাদার যারা ছিল, তারা চলে গেছে। কোনো মানুষ এই রাস্তা দিয়ে যেতে পারে না, অটোরিকশাও চলতে পারে না। যে দুই একটা চলে সেগুলোও দুর্ঘটনায় পড়ে, উল্টে যায়। এলাকার মানুষ এই দুর্দশা থেকে মুক্তি পেতে চান।
![]()
স্থানীয় ব্যবসায়ী মজুমদার বলেন, দুই-তিন বার কাজ শুরু করছে তারপর আবার অদৃশ্য কারণে কাজ বন্ধ। বৃষ্টি হলে এই রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়া যায় না। রাস্তাটা নিয়ে এলাকাবাসী অনেক কষ্টের মধ্যে আছে।
স্কুল শিক্ষক খাইরুল ইসলাম বলেন, ইটাহাটা কলাবাগান এলাকায় ৪টি স্কুল, ৭-৮টি মাদরাসা রয়েছে। বেহাল রাস্তার কারণে শিক্ষার্থীরা পায়ে হেঁটে স্কুলে আসে। এছাড়া স্থানীয়দের বিকল্প উপায়ে ঘোরা পথে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এতে অর্থ, সময় দুটি বেশি লাগছে। বৃষ্টি হলে হাঁটু পরিমাণ কাঁদা থাকায় হাঁটাচলা করা যায় না।
আরও পড়ুন
এ ব্যাপারে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বাসন জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান রাসেল বলেন, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের অর্থায়নে রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পের কাজ চলছে। ঠিকাদারকে বার বার তাগাদা দেওয়ার পরও আড়াই বছরে কাজের অগ্রগতি আশানুরূপ হয়নি। ফলে চুক্তি পত্রের শর্ত বরখেলাপ করার কারণে তার সঙ্গে সিটি করপোরেশনের চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। ফের দরপত্র আহ্বান করে দুইটি প্যাকেজের মাধ্যমে দ্রুত সময়ে রাস্তা নির্মাণ সম্পন্ন করা হবে।
আলোচিত ইটাহাট কলাবাগান সড়কের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকার ১৫ হাজার ৯০৭ টাকা। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ভৌত কাঠামোর মাত্র ৩৮ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ব্যস্ততম সড়কটির নির্মাণ কাজ দ্রুত সম্পন্ন করে জনদুর্ভোগ লাঘবে সিটি কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন স্থানীয়রা।
প্রতিনিধি/টিবি