জেলা প্রতিনিধি
২৬ জুন ২০২২, ০৯:৪৫ পিএম
সিলেটে অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে চলমান বন্যায় বিপর্যস্ত হয়েছে স্বাস্থ্যখাত। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে জনসাধারণের সেবাদানকারী এসব সরকারি প্রতিষ্ঠান। এবারের বন্যায় সিলেট ওসমানী হাসপাতালসহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিভাগের অনেক সরকারি হাসপাতাল, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কমিউনিটি ক্লিনিক। ফলে সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে সিলেট বিভাগের জনসাধারণের।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, সিলেট বিভাগের মোট ৪০টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মধ্যে ২৪টি বন্যাকবলিত হয়েছে। ৮৫টি ইউনিয়ন সাব-সেন্টারের মধ্যে ৩১টিতে পানি ঢুকেছে। সুনামগঞ্জে ২০ শয্যার দুটি হাসপাতালে পানি প্রবেশ করে। এছাড়াও ৯২৭টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মধ্যে ৪১৪টি ক্লিনিক পানিতে তলিয়ে গেছে।
সিলেট জেলার তিনটি উপজেলা (জৈন্তাপুর, বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ) বাদ দিয়ে বাকি ১০টি উপজেলার সব স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণভাবে জলমগ্ন ছিল। কোম্পানীগঞ্জ এবং গোয়াইনঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রায় ১০ ফুট পরিমাণ পানি ছিল। স্রোতের কারণে অনেক আসবাবপত্র ভেসে গেছে এসব প্রতিষ্ঠানের। এতে প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অনেক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি, ইপিআই আইএলআর ফ্রিজ, প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি, এক্সরে মেশিন, এমএসআর সামগ্রী নষ্ট হয়ে গেছে। জলমগ্ন এসব যন্ত্রপাতি কতটা সচল কিংবা অচল তা পানি নেমে না যাওয়ায় যাচাই করা যাচ্ছে না। সার্বিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানাতে আরও সময় লাগবে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। ফলে সিলেট বিভাগের জনসাধারণ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
সিওমেক সূত্র জানায়, গত ১৮ জুন সিলেটে দেড় ঘণ্টার অতি ভারী বর্ষণে সিলেট সিটি করপোরেশনের ৮০ ভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং সিলেট শহীদ শামসুদ্দীন আহমেদ হাসপাতালের নিচতলা প্রায় তিন ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায়। ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জেনারেটর জলমগ্ন হওয়ায় হাসপাতালের বিকল্প বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। নিচতলায় পানি উঠে যাওয়ায় রোগীরা পড়েন চরম দুর্ভোগে।
দুদিনে পানি নামার পর দেখা যায়, হাসপাতালটির এম.আর আই, সিটিস্ক্যান ও রেডিও থেরাপি মেশিনে পানি ঢুকে গেছে। ফলে এখন বন্ধ রয়েছে এসব সেবা কার্যক্রম। রেডিওথেরাপি মেশিনটি চালুর চেষ্টা চলছে। তবে এমআরআই, সিটি স্ক্যান মেশিনের ক্ষতি হয়েছে বেশি। এগুলো ঠিক হবে কি না এখনই বলা যাচ্ছে না। ফলে সাধারণ রোগীরা সিটিস্ক্যান, এমআরআই, রেডিও থেরাপি সেবা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বাইরে থেকে এসব পরীক্ষা করিয়ে নিয়ে আসতে আর্থিক সংকটে পড়তে হচ্ছে ওসমানীতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের। এছাড়াও হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স, পরিচালকের গাড়িসহ গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো নষ্ট হয়েছে। পুরোপুরি ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদফতর সিলেটের পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় ঢাকা মেইলকে বলেন, বন্যায় সিলেট অঞ্চলে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ক্ষয়ক্ষতি ব্যাপক। এ নিয়ে আমাদের টিম কাজ করছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও বলা যাচ্ছে না। প্রকৌশল অধিদফতর এসে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করতে পারবে।
এই কর্মকর্তা বলেন, সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালসহ জেলার সবকটি হাসপাতাল, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ স্বাস্থ্য বিভাগের সব কয়টি স্থাপনায় পানি ছিল। সিলেটের তিনটি হাসপাতাল বাদে ওসমানীসহ সবকটি হাসপাতাল, ক্লিনিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে রয়েছে। পানি কমলে কী কী নষ্ট হয়েছে জানা যাবে।
প্রতিনিধি/জেবি