জেলা প্রতিনিধি
২৮ আগস্ট ২০২৫, ১১:০৩ এএম
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার আমডাঙ্গা গ্রামের আঞ্জুমান আরা হুক ছেড়ে কাঁদছেন আর বিলাপ করে বলছেন, স্বামীকে হারিয়ে তিনটা সন্তান নিয়ে অনেক কষ্টে দিন কাটছিলো। ভিটে টা চলে গেলো, ছেলে মেয়ে নিয়ে কই যাবো। বুক ফাটা আর্তনাদে পাষণ্ড মন গললেও বিন্দু মাত্র ছাড় দিতে নারাজ ক্ষুধার্ত মধুমতি।
চোখের সামনেই নিমেষে শেষ সম্বলটুকু ভিটে মাটি হারিয়ে পাগলপ্রায় লোহাগড়া উপজেলার আমডাঙ্গা গ্রামের খুকি, আঞ্জুমান আরা। তাদের সম্বল শুধু সন্তানদের নিয়ে এক অনিশ্চিত জীবনের সঙ্গে দুচোখ ভরা জল। লোহাগড়া উপজেলার আমডাঙ্গা গ্রামের খুকি-আঞ্জুমান আরা দের ই শুধু নয় একই গল্প মধুমতী পাড়ের অন্তত ৪৫ গ্রামের কয়েক লাখ মানুষের।
![]()
নড়াইলের মধুমতীর করাল গ্রাসে ফসলি জমি, স্কুল, মাদরাসা, কবরস্থান গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ নদী গর্ভে প্রতিনিয়ত বিলীন হচ্ছে শত শত বাড়ি ঘর। মাথা গোঁজার শেষ সম্বল টুকু হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন হাজারো পরিবার। আর ভাঙন ঝুঁকিতে নির্ঘুম রাত পার করছেন কয়েক লাখ মানুষ। তবে ভাঙন রোধে সীমিত বরাদ্দ দিয়ে সাধ্যমত চেষ্টার আশ্বাস জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের।
এবারের শীত মৌসুম থেকেই চলছে মধুমতীর ভাঙন। তবে নদীতে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গত দেড় মাস ধরেই রুদ্ররূপ ধারণ করেছে মধুমতী। চোখের পলকেই নিমেষে গিলে খাচ্ছে বাড়ি-ঘর, ফসলি জমি, স্কুল, মাদরাসাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। বিলীন হওয়ার পথে শত বছরের ওপারের অবশিষ্ট নড়াইলের অংশ। শেষ সময়ে ভিটে মাটি হারালেও দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিসপত্র রক্ষার প্রবল চেষ্টা। তীব্র ভাঙনে অসহায় হয়ে পড়েছে হাজারো মানুষ। আর পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্লাবিত হয়ে নষ্ট হয়েছে কয়েক হাজার একর জমির ফসল।
![]()
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য বলছে, মধুমতীর তীরবর্তী শিয়েরবর, মন্ডলভাগ, মাকড়াইল, রামকান্তপুর, দক্ষিণ রামকান্তপুর, রামচন্দ্রপুর, আমডাঙ্গা, কাশিপুর, আস্তাইল, ধানাইড়, করগাতি, ইতনা, লংকারচর, ডিগ্রিরচর, তেলকাড়া, মঙ্গলপুরসহ লোহাগড়া উপজেলার ৪৫টি গ্রামে মধুমতির ভাঙন রয়েছে কয়েক দশক ধরে। আর কালিয়া উপজেলার নবগঙ্গা নদীর চোখ রাঙানিতে ভাঙন রয়েছে অন্তত ২৫টি গ্রামে। বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার অতিমাত্রায় নদীর পানি বৃদ্ধিতে তীরবর্তী অঞ্চল গুলোর ভাঙন তীব্র হলেও চলতি বছরে মাত্র ৮টি পয়েন্টকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ নির্ধারণ করেছে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড।
![]()
গত তিন বছরে ভাঙন রোধে জেলা পাউবো জরুরি আপদকালীন কাজ করেছেন প্রায় সাড়ে ৫ কি. মি. আর ব্যয় হয়েছে প্রায় ২২ কোটি টাকা। ভাঙন রোধে স্থায়ী তীর রক্ষা বাঁধ ও জিও ব্যাগ ফেলা স্বল্প দৈর্ঘ্যের অংশ টুকু রক্ষা পেলেও বহাল তবিয়তে নদী তীরবর্তী জনপদ গিলে খাচ্ছে মধুমতী। এ জনপদ রক্ষায় শুধুমাত্র জিও ব্যাগে সমাধান না খুজে স্থায়ী তীর রক্ষা বাঁধের দাবি স্থানীয়দের।
নড়াইল জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী অভিজিৎ কুমার সাহা বলেন, নড়াইল একটি নদী ভাঙন প্রবণ জেলা। নদী ভাঙন একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। প্রতি বছরই এ অঞ্চলের মধুমতী ও নবগঙ্গার ভাঙন থেকে বাড়িঘর, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, ফসলি জমি রক্ষায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি। চলতি বছরেও ভাঙন কবলিত অতি গুরুত্বপূর্ণ ৮ স্থান নির্ধারণ করে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধে আমাদের কাজ চলমান রয়েছে। আর জেলায় প্রায় সাড়ে ১৩ কি.মি. এর প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে, যেটির প্রক্রিয়া চলমান। সীমিত বরাদ্দ দিয়ে এ অঞ্চলের ভাঙন রোধে আমরা আন্তরিকতার সাথে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।
প্রতিনিধি/টিবি