জেলা প্রতিনিধি
২৪ জুন ২০২২, ০৭:৪৯ এএম
উপকূলের অন্যতম একটি জেলার নাম বরগুনা। এর চারদিকে নদীবেষ্টিত। বরগুনা সমুদ্র উপকূলের জেলা হওয়ায় এখানকার অধিকাংশ মানুষের পেশা জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ী। তাই এরা মৎস্যশিল্পকে কেন্দ্র করেই জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। এ জেলার অধিকাংশ মানুষ মৎস্য ও কৃষি কাজের উপর নির্ভর। তবে এ জেলায় যাতায়াত ও পরিবহন ব্যবস্থা উন্নত না হওয়ায় জেলেরা তাদের মাছের সঠিক দাম পান না। তবে পদ্মা সেতু চালু হলে এ সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছেন আড়তদার ও পাইকাররা।
আড়তদাররা জানিয়েছেন, তাদের আড়ত থেকে এখন এক চালান মাছ ঢাকায় বিক্রি করতে মৎস্য পাইকারদের দুই থেকে তিনদিন সময় লাগে যায়। আর স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হলে তারা সকালে মাছ কিনে বিকেলে ঢাকায় বিক্রি করতে পারবেন। এতে মাছ ব্যবসায়ীরা তাদের সেই মাছের ন্যায্য দাম পাবেন বলে আশা করছেন।
পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পাইকার আলম মিয়া জানান, বর্তমানে ঢাকার চাহিদা দেখে মাছ কেনেন তারা। তবে কেনা মাছ নিয়ে তাদের পদ্মা পাড়ি দিতে অপেক্ষায় থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। অনেক সময় পদ্মা পাড়ি দিতে এক থেকে দুদিনও চলে যায়। এতে তাদের লোকসানের মুখে পড়তে হয় বারবার। তবে পদ্মা সেতু চালু হলে সকালে মাছের চাহিদা বুঝে বিকেলের মধ্যে সে মাছ ঢাকায় বিক্রি করা যাবে। এতে দাম নিয়ে বেশি দর কষাকষি করতে হবে না তাদের।
অবতরণ কেন্দ্রের আরেকজন পাইকার বাদশা মিয়া বলেন, সব পাইকাররাই নির্দিষ্ট পুঁজি নিয়ে মাছ কেনাবেচা করে। একবার মাছ কিনলে তার সে পুঁজি মাছে আটকে যায়। মাছ বিক্রি করতে পারলে লাভসহ পুঁজি ফিরে আসে, তখন দ্বিতীয়বার মাছ কিনতে পারেন ওই পাইকার। পদ্মাপাড়ে ফেরি পার হতে দুই-একদিন সময় লাগে। তাই একবার মাছ কেনার পর দ্বিতীয়বার কিনতে সময় লাগে দুই থেকে তিনদিন। এতে লোকসান যেমন জেলেদের, তেমনি পাইকারদেরও।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে মাসে ১০ থেকে ১৫ বার মাছ পাঠাতে পারি। আর পদ্মা সেতু চালু হলে প্রতিদিন মাছ পাঠাতে পারবো। এতে জেলে ও পাইকার উভয়ের আয় বাড়বে।
সমুদ্রগামী ট্রলার এফবি মায়ের দোয়ার মাঝি কাদের হাওলাদার জানান, মাছ বেচতে গেলেই পাইকররা দাম বলতে চায় না। মাছ পাঠাতে দেরি হওয়ায় মাছের রং পরিবর্তন হয়ে যায়, তাই ভালো মাছ নিয়ে গেলেও স্বল্পমূল্যে মাছ কেনেন পাইকাররা। এতে উত্তাল সমুদ্র দাপিয়ে মাছ ধরেও ভাগ্যের পরিবর্তন আনতে পারছিলেন না জেলেরা। তবে পদ্মা সেতু চালু হলে এই বাধা আর থাকবে না। বাজারে তখন পাইকার সংখ্যা বাড়বে। ভালো দামে মাছ বিক্রি করে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারবেন জেলেরা।
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা মৎস্যজীবি ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, উপকূলের জেলেরা তাদের মাছ ভালো দামে বিক্রি করতে পারলে অর্থনৈতিক অবস্থার অনেকটা পরিবর্তন ঘটবে বলে আমি আশা রাখছি। এ কারণে তখন তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর সঙ্গে সৌখিন সামগ্রীটাও কিনতে পারবেন। এতে পদ্মা সেতু চালু হলে শুধু যে মৎস্যজীবীদের উপকার হবে তা নয়, সামগ্রিক দক্ষিণাঞ্চলের সব ব্যবসায়ীদের মান উন্নয়ন হবে বলে বিশ্বাস রয়েছে।
/এএস