images

সারাদেশ

কমেছে তিস্তার পানি, ভোগান্তিতে নিম্নাঞ্চলবাসী

জেলা প্রতিনিধি

০৪ আগস্ট ২০২৫, ১২:৫৯ পিএম

তিস্তা নদীর পানি গত চব্বিশ ঘণ্টায় ২০ সেন্টিমিটার কমলেও তিস্তা পাড়ের নিম্নাঞ্চলের মানুষজন দুর্ভোগে পড়েছেন। বিশেষ করে লালমনিরহাটের তিনটি উপজেলার অন্তত ২০ ইউনিয়নের কয়েক হাজার প্রান্তিক চাষি ও চরাঞ্চলের লোকজনের আমন ক্ষেত গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। অনেক স্থানে বাড়িঘর রাস্তাঘাট হাঁটু পানির নিচে তলিয়ে থাকায় ভোগান্তি বেড়েছে।

গত শনিবার বিকেল থেকে ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তা নদীর পানি হু হু করে বেড়ে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় ।এতে নদী সংলগ্ন  তিস্তাপাড়ের হাজার হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে।

রোববার দুপুর ১২টায়  লালমনিরহাটের  বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি  বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার  উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। গত চব্বিশ ঘণ্টায় সেই পানি প্রায় ২০ সেন্টিমিটার কমে আজ সোমবার দুপুর ১২ টায় বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।   

নদীপাড়ের মানুষ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েকদিন ধরে ভারতের উজানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় তিস্তা নদীতে পানির প্রবাহ বেড়ে গেছে। যদিও কয়েকদিন ধরে পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি ছিল, রোববার দুপুরে তা অতিক্রম করে এরপর দুপুর ১২টায়  বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হয়। 

এতে তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তিস্তাপাড়ের হাজারো পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তিস্তার চরাঞ্চলের রাস্তাঘাট ও ফসলের মাঠ ডুবে গেছে। অনেক এলাকায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, সেখানে একমাত্র যাতায়াতের মাধ্যম এখন নৌকা ও ভেলা। ঢলের পানিতে আমন ধানসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত এবং মাছের পুকুরও ক্ষতির মুখে পড়েছে।

তিস্তা নদী লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় সামান্য পানি বাড়লেই পুরো জেলাজুড়ে নদী তীরবর্তী এলাকাগুলো প্লাবিত হয়। এবারের উজানের ঢলের কারণে জেলার পাঁচটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। পানি বাড়তে থাকলে আরও নতুন নতুন এলাকা বন্যার কবলে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা।নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে বলে সতর্ক করেছে কর্তৃপক্ষ ।

আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের মাহাবুব আলী বলেন, উজান থেকে প্রচুর পানি আসছে। ইতোমধ্যে নীচু এলাকায় পানি ঢুকতে শুরু করেছে। পরিবারগুলো পানিবন্দি হয়ে পড়েছে, রাস্তাঘাট ডুবে গেছে।

একই এলাকার কলতার পাড় গ্রামের মজিবর মিয়া বলেন, উজানের ঢলে পানি বাড়ছে। চরাঞ্চলের কিছু বাড়ি ইতোমধ্যে পানিবন্দি। যেভাবে পানি বাড়ছে, তাতে বড় বন্যার ভয় করছি।

এদিকে পানি বৃদ্ধির কারণে আতঙ্ক  ছড়িয়ে পড়েছে  নদী সংলগ্ন প্রায় শতাধিক চরের মানুষের মাঝে। তিস্তার পানি নিয়ন্ত্রণে রাখতে দেশের সবচেয়ে বড় সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে ৪৪ টি জলকপাট খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

তিস্তা ব্যারেজে এলাকার বাসিন্দা আলী মিয়া বলেন,আমরা নদী পাড়ের মানুষ সব সময় আতঙ্কে থাকি।কখন ভারত গজলডোবা ব্যারেজের গেট খুলে দিয়ে আমাদেরকে ভাসিয়ে দেয়।  বিশেষ করে ভারতের উজানে যে গেট রয়েছে তার নাম গজলডোবা এটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকার নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। খরা মৌসুমে গেটটি বন্ধ রাখা হয় আর বষা এলেই থেমে থেমে পানি ছেড়ে দিয়ে আমাদেরকে ভাসিয়ে দেয় ভারত। কারণ বৃষ্টির পানিতে বন্যা হয় না, বন্যা হয় ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পানিতে।

তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী  বলেন, পানি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যারেজের ৪৪টি গেট খুলে রাখা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

লালমনিরহাট পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার বলেন, উজান থেকে পানি আসায় তিস্তার পানি বেড়েছিল। আপাতত পানি কিছুটা কমেছে। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে, তাই নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে । আমরা সার্বক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, নদী তীরবর্তী এলাকার খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। বন্যা দেখা দিলে তা মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। শুকনো খাবার ও ঢেউটিন মজুদ রয়েছে। 

প্রতিনিধি/ এজে