জেলা প্রতিনিধি
০৪ আগস্ট ২০২৫, ১২:২৮ পিএম
নড়াইলের কালিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইভা মল্লিক একের পর এক খবরের শিরোনামে, তবুও তিনি রয়েছেন বহাল তবিয়তে। তার বিরুদ্ধে ঘুষ দাবি, হেনস্তা এবং ডিলারশিপ বাতিলের হুমকি দেয়ার অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসক ও জেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন সার ও বীজ ডিলার শেখ জামিল আহমেদ। এ বিষয় নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়।
রোববার (৩ আগস্ট) দ্বিতীয় দফায় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের নিকট লিখিত অভিযোগ পত্রে আনীত অভিযোগ তদন্তে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের দুই সদস্য বিশিষ্ট দল উপজেলার মহাজন বাজারে যান।
তদন্ত দল এদিন বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলার মহাজন বাজার এলাকায় অভিযোগকারী বিএডিসি অনুমোদিত সার ও বীজ ডিলার শেখ জামিল আহম্মেদের দোকান পরিদর্শন করেন এবং এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেন।
তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত দলের নেতৃত্বে ছিলেন— জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের প্রশিক্ষণ অফিসার সৌমিত্র সরকার। সহযোগী হিসেবে ছিলেন একই কার্যালয়ের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) ঋতুরাজ সরকার, তবে কমিটির অন্যতম সদস্য একই কার্যালয়ের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (উদ্যান) মো. জাহিদুল ইসলাম বিশ্বাস তদন্ত দলের সঙ্গে ছিলেন না।
অভিযোগ দাখিলের এক মাস পাঁচ দিন পর ফের তদন্তের কারণ জানতে চাইলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের প্রশিক্ষণ অফিসার সৌমিত্র সরকার বলেন, এটি একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত। আগের তদন্ত দল খুলনা থেকে এসেছিলেন। জেলা প্রশাসক জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরকে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। উপ-পরিচালক ২২ জুন আমাকে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। আমার দাপ্তরিক পরীক্ষার কারণে আবেদন করে সেটাকে ১০ কর্মদিবসের মধ্যে দাখিলের অনুমতি পাই, সেটার তদন্তে ঘটনাস্থলে যাই। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবো।
এর আগে গত ২৮ জুন নড়াইলের কালিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইভা মল্লিকের বিরুদ্ধে ঘুষ দাবি, হেনস্তা এবং ডিলারশিপ বাতিলের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করেন উপজেলার মহাজন বাজারের বিএডিসি অনুমোদিত সার বীজ ডিলার শেখ জামিল আহম্মেদ। এ ঘটনায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর প্রথম দফায় মঙ্গলবার (১ জুলাই) উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্তে খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তিন সদস্য বিশিষ্ট দল কালিয়ায় যান।
এরপর অভিযুক্ত কালিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইভা মল্লিকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ও বিশ্ব ব্যাংকের যৌথ অর্থায়নে পরিচালিত উপজেলার ১৪টি কৃষকদের পার্টনার ফিল্ড স্কুলগুলোতে চরম অব্যবস্থাপনাসহ কৃষকদের সেশনের প্রাপ্য নাস্তা ও সম্মানি বাবদ পাওনা টাকা নিয়ে নয়-ছয়ের অভিযোগ ওঠে। আর গত বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) ওই কর্মকর্তার অনিয়মের স্পষ্ট প্রমাণসহ দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে কৃষি কর্মকর্তা ইভা মল্লিকের অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার খবর প্রকাশিত হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ভাইরাল হয় তার অনিয়মের বিভিন্ন বক্তব্য, আর জন্ম দেয় তীব্র সমালোচনার।
এর আগে, গত ৭ জুলাই দুদকে ওই কর্মকর্তার ঘুষ দুর্নীতির অভিযোগ এনে স্থানীয় এক সার ও বীজ ডিলার অভিযোগপত্র দেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি ও সমাজ বিশ্লেষক জানান, একই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বারংবার অভিযোগ, আর তিনি খবরের শিরোনামে পরিণত হচ্ছেন। কোনো এক অদৃশ্য কারণে তার বিরুদ্ধে নানাবিধ অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলেও তিনি রয়েছেন বহাল তবিয়তে। আর তদন্ত দল যা গঠিত হচ্ছে সবই তো কৃষি অধিদফতরের, নিজেরাই নিজেদের তদন্ত করছেন। আদতে সরিষার মধ্যেই ভূত থাকলে, সেই সরিষা কতটুকু কাজের বলে নিজেদের আক্ষেপ প্রকাশ করেন তিনি।
প্রতিনিধি/টিবি