জেলা প্রতিনিধি
০৩ আগস্ট ২০২৫, ০৪:০৩ পিএম
গত এক সপ্তাহ ধরে বাণিবহ ইউনিয়ন পরিষদে নাতির জন্ম নিবন্ধন করতে ঘুরছেন বার্থা গ্রামের মো. আব্দুল আলী মিয়া। প্রতিদিনই এসে দেখেন চেয়ারম্যানের দরজায় ঝুলছে বিশাল এক তালা। কবে আসবেন চেয়ারম্যান তার কোনো উত্তরই পাচ্ছেন না তিনি।
চেয়ারম্যানের একটি স্বাক্ষর পেতে মো. আব্দুল আলি মিয়ার মতো বানিবহ ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের আছিয়া বেগম, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের লক্ষীনারায়নপুর গ্রামের সোনাবানু বেগম তাদের কাজের জন্য পরিষদে ঘুরছেন দিনের পর দিন।
এতো ভোগান্তির পরে আবার গোদের ওপর বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে পরিষদের ডিজিটাল সেন্টার। সেখানে বর্তমানে নেই কোনো উদ্যোক্তা। তাই বাড়তি টাকা খরচের পরও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত সেবা। চেয়ারম্যান ও উদ্যোক্তাশূন্য পরিষদে যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে সচিবের মাথায়।
![]()
চলতি বছরের গত মার্চ মাস থেকে রাজবাড়ী সদরের বাণিবহ ইউনিয়ন পরিষদে আসেন না ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোছা. শেফালী আক্তার। ফলে চেয়ারম্যানের একটি স্বাক্ষরের জন্য দিনের পর দিন ঘুরতে হচ্ছে সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষদের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাণিবহ ইউনিয়নে প্রায় ৩০ হাজার মানুষের বসবাস। ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের আটদাপুনিয়া, বানিবহ, বড় বাড়ীগ্রাম, বার্থা, বৃচাত্রা, ছোট রঘুনাথপুর, দ্বিগদাপুনিয়া, ঘিমোড়া, লক্ষীনারায়নপুর, মহিষবাথান, মোরঘর, নিজপাড়া, সৈয়দপাচুঁরিয়া, সান্দিয়ারা, শিবরামপুর গ্রাম থেকে প্রতিদিন শত শত মানুষ তাদের জন্ম নিবন্ধন, মৃত্যু সনদ, নাগরিক সনদ, স্থায়ী বাসিন্দা সনদ, ওয়ারিশ সনদ, ট্রেড লাইসেন্সসহ বিভিন্ন প্রত্যয়নে একটা স্বাক্ষর পেতে দিনের পর দিন ঘুরছে পরিষদের বারান্দায়। চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরের জন্য কয়েক কিলোমিটার দূরে তার বসত বাড়িতে যেতে হচ্ছে। পরিষদ থেকে তার বাড়ি যেতে সাধারণ জনগণের পকেট থেকে বাড়তি ভাড়া লাগছে। এতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে ইউনিয়নবাসী। ৯টি ওয়ার্ডের বাসিন্দারা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে।
বানিবহ ইউনিয়নের বার্থা গ্রামের ৬০ বছর বয়সী মো. আব্দুল আলী মিয়া বলেন, আমার নাতির জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করেছি। কয়েক সপ্তাহ ধরে ঘুরছি পরিষদের বারান্দায়। চেয়ারম্যানের একটি স্বাক্ষর পেতে তার বাড়িতে কয়েকবার গিয়েছি। পরিষদে যদি চেয়ারম্যান ঠিক মতো অফিস করতেন তাহলে আমাদের মতো সাধারণ ইউনিয়নবাসীর এতো ভোগান্তি হতো না।
![]()
৫৫ বছর বয়সী আছিয়া বেগম বলেন, আমিও আমার নাতির জন্মনিবন্ধন করতে অনেক দিন ধরে পরিষদে ঘুরছি। চেয়ারম্যানের বাড়িতে গিয়েছি কয়েকবার। পরে চেয়ারম্যান আমাকে বললেন- তিনি কিছু কারণবশত পরিষদে আসতে পারছেন না। পরিষদে ক’দিন ঘুরে একটি স্বাক্ষর পেতে অতিরিক্ত যানবাহন ভাড়া লেগেছে যা গরিব মানুষের জন্য কষ্টকর।
লক্ষ্মীনারায়নপুর গ্রামের ৬০ বছর বয়সী সোনাবানু বেগম বলেন, আমি একটি বিধবা ভাতা কার্ড করার জন্য অনেকদিন পরিষদে ঘুরছি। যেদিনই আসি চেয়ারম্যানের রুমে তালা ঝোলে। আমাদের ভোগান্তির শেষ নাই।
বানিবহ ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য নিহার ঘোষ বলেন, জনগণের চাল চুরিসহ অনেক ধরনের অপকর্মের জড়িয়ে চেয়ারম্যান এখন পরিষদে অফিস করেন না। তার একটা স্বাক্ষর নিতে লোকজনকে তার বাড়িতে যেতে হয়। এতে সাধারণ মানুষের অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় ও সময়ের অপচয় হচ্ছে।
![]()
বানিবহ ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য কাজী আজিজুল বলেন, চেয়ারম্যান মোছা. শেফালী আক্তার ২০২২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই নানাবিধ অপকর্ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তার বিরুদ্ধে গ্রামবাসী মানববন্ধনও করেছে যা অনেক মিডিয়ায় প্রচার হয়েছে। তিনি দীর্ঘ দিন ধরে পরিষদে আসেন না। তাই সাধারণ মানুষের তীব্র ভোগান্তি হচ্ছে। অতিদ্রুত প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।
পরিষদে দীর্ঘদিন অনুপস্থিতির বিষয়ে জানতে বানিবহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোছা. শেফালী আক্তারের মোবাইল নম্বরে অনেক দিন ধরে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
বানিবহ ইউনিয়ন পরিষদের ইউনিয়ন প্রশাসনিক অফিসার সৈয়দ মেহেদী মাসুদ বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে চেয়ারম্যান পরিষদে না আসার কারণে অনেক আবেদনপত্র জমা পড়ে আছে। আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করছি যাতে সেবা নিতে আসা ইউনিয়নবাসী যেন ভোগান্তিতে না পড়েন।
এ বিষয়ে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুলতানা আক্তার জানান, বানীবহ ইউনিয়নের বিষয়টা জানতে পেরেছি। আমরা খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
প্রতিনিধি/এসএস