জেলা প্রতিনিধি
০৩ আগস্ট ২০২৫, ০২:৫৪ পিএম
রংপুরের কাউনিয়া উপজেলায় টাকা ছাড়া মিলে না ভিজিএফ-ভিজিডি কার্ডসহ সরকারি সেবা। টাকার বিনিময়ে ভিজিএফ-ভিজিডি কার্ড, বয়স্ক, বিধবা ‘ভাতার কার্ড’ করে দেওয়াসহ নানা স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (মেম্বার) এসএম আমিরুল ইসলাম পলাশের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ আছে, উপকারভোগী কার্ড করার জন্য কখনো প্রাপ্ত ভাতার সমুদয় টাকা, কখনো অগ্রিম, কখনো বা ভাতার টাকার একটি অংশ নেন ইউপি সদস্য পলাশ। আবার, টাকা দেওয়ার বিষয়টি প্রকাশ করলে হেনস্তার শিকার কিংবা কার্ড বাতিলের হুমকিও দেন তিনি। এছাড়াও নিজের পরিবারের ও আত্মীয়স্বজনের নামে টিসিবি, মাতৃকালীন ভাতা ও (ভিডব্লিউবি) কার্ডসহ নানা রকম সরকারি সুবিধা ভোগ করেন পলাশ।
এ নিয়ে আফরোজা নামে একজন ভুক্তভোগী ইউপি সদস্য এসএম আমিরুল ইসলাম পলাশের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগের প্রায় এক মাস হলেও এখনও মেলেনি কোনো প্রতিকার।
লিখিত অভিযোগে জানা যায়, উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড বাসিন্দা হতদরিদ্র রিকশাচালক সোহেল মিয়া সারাদিন রিকশা চালিয়ে যা উপার্জন করে সেটা দিয়ে চার জনের সংসারে নুন আন্তে পান্তা ফুরায় অবস্থা। এই অভাব অনটনের জন্য রিকশাচালক সোহেল মিয়ার স্ত্রী আফরোজা বেগম বালাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) এসএম আমিরুল ইসলাম পলাশের কাছে ভিজিডি কার্ড এর জন্য অনুরোধ করেন। তখন মেম্বার পলাশ ভিজিডি কার্ডের জন্য আফরোজা বেগমের কাছে ৭ হাজার টাকা দাবি করেন। ৭ হাজার টাকা দিলে দ্রুত ভিজিডি কার্ড করে দিবেন বলে জানান তিনি। অভাব অনটনের সংসারে এতো টাকা দিতে পারবেন না বলে জানান আফরোজা বেগম। পরে মেম্বার ৫ হাজার টাকায় রাজি হন এবং নগদ ৩ হাজার টাকা গ্রহণ করেন। বাকী ২ হাজার টাকা কার্ড দিলে পরিশোধ করবেন বলে জানান আফরোজা বেগম। কয়েকমাস ধরে কার্ড দেওয়ার কথা বলে টালবাহনা করে মেম্বার পলাশ। কার্ডের চাপ দিলে গত ৭ জুলাই মেম্বার ৩ হাজার টাকা ফিরত দিয়ে বলেন, কার্ড হয়নি। কার্ড না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে পলাশ মেম্বার আফরোজা বেগমকে ভয় ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করে বলেন, এবিষয়ে কাউকে কিছু বললে তার এবং সন্তানের সমস্যা হবে।
এ ঘটনা প্রকাশের পর নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক একাধিক ইউপি সদস্য এবং ভুক্তভোগীরা জানান, ইউপি সদস্য এসএম আমিরুল ইসলাম পলাশ টাকা ছাড়া কোনো কাজ করেন না। অভিযোগ রয়েছে, প্যানেল চেয়ারম্যান হওয়ায় তিনি ইউনিয়নের প্রয়োজনীয় রাস্তা সংস্কার না করে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজের যাতায়াতের সুবিধার জন্য অপ্রয়োজনীয় রাস্তা সংস্কারের নামে টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য (মেম্বার) এসএম আমিরুল ইসলাম পলাশ জানান, তার বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর যে লিখিত অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। একটি পক্ষ তার বিরুদ্ধে এমন কর্মকাণ্ড করছেন বলে জানান তিনি।
এদিকে, সংশ্লিষ্ট বালাপারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনসার আলীর ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন দিয়েও ফোন সচল পাওয়া যায়নি।
লিখিত অভিযোগের বিষয়ে কাউনিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মহিদুল হক জানান, একজন ভুক্তভোগীর আবেদনের প্রেক্ষিতে ওই ইউপি সদস্যের বিষয়ে একজন অফিসারকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্তে সাপেক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রতিনিধি/টিবি