জেলা প্রতিনিধি
০১ আগস্ট ২০২৫, ০৩:২৯ পিএম
ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেট সেজে ভয়ভীতি দেখিয়ে হোটেল ব্যবসায়ীর কাছ থেকে হাতিয়ে নেন মোটা অঙ্কের টাকা! ভয়ংকর এই প্রতারণার ঘটনায় তোলপাড় চলছে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জে। উপজেলা প্রশাসনেরই এক অফিস সহকারীর বিরুদ্ধে উঠেছে এমন গুরুতর অভিযোগ।
‘ম্যাজিস্ট্রেটের লোক’ পরিচয় দিয়ে হোটেলে অভিযান, মোবাইলে হুমকি—সবশেষে বিকাশে টাকা আদায়। পুরো ঘটনার পেছনে রয়েছেন ভেদরগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন কার্যালয়ের অফিস সহকারী (দফতরি) হাবিবুর রহমান উকিল।
সংশ্লিষ্ট সূত্র ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২৩ জুলাই (বুধবার) দুপুরে ভেদরগঞ্জ বাজারে অবস্থিত ‘জোয়ার-ভাটা হোটেলে’ গিয়ে হাবিবুর রহমান হোটেল মালিক আব্দুর রহমান মল্লিককে মোবাইল ফোন ধরিয়ে দেন। ফোনের অপরপ্রান্তে থাকা ব্যক্তি নিজেকে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দিয়ে বলেন, হোটেলে ‘অনিয়ম’ ধরা পড়েছে এবং অভিযান চালানো হবে। একইসঙ্গে জানান, ভেদরগঞ্জের আরও ২০টি হোটেল ও রেস্তোরাঁর তালিকা প্রস্তুত রয়েছে।

এরপর তিনি হোটেল বন্ধ না করার শর্তে মালিকের কাছে ৩০ হাজার টাকা দাবি করেন এবং হাবিবুর রহমানের হাতে তা দিতে বলেন। ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান জানান, তার কাছে তখন নগদ টাকা না থাকায় মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশের মাধ্যমে ২০ হাজার ৬০০ টাকা পাঠাতে বাধ্য হন।
ঘটনার পাঁচদিন পর, ৩০ জুলাই সকালে টাকা ফেরত চাইতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দফতরে গিয়ে হাবিবুর রহমানের মুখোমুখি হন হোটেল মালিক। তখনও তিনি টাকা ফেরত না দিয়ে উল্টো হুমকি দেন—দোকান বন্ধ করে দেবেন, এমনকি মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর কথাও বলেন।
ভুক্তভোগী আব্দুর রহমান মল্লিক বলেন, যিনি টাকা নিয়েছেন, তিনি কোনো ম্যাজিস্ট্রেট না—এটা জানার পর আমি হতবাক হই। আমি শুধু টাকা ফেরত চাই না, আমি এই প্রতারণার বিচারও চাই।

এই ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে ভেদরগঞ্জের অন্যান্য হোটেল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। অনেকেই অভিযোগ করছেন, ওই দিন একই কৌশলে আরও অন্তত ২০টি হোটেল ও রেস্তোরাঁ থেকে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা দাবি করেন হাবিবুর রহমান।
স্থানীয় হোটেল ব্যবসায়ী মো. আরিফ মিয়া বলেন, আমার দোকানেও সে আসে। বিশ হাজার টাকা দাবি করে অনিয়মের অজুহাতে। আমি দিতে না চাইলে সে আমাকে হুমকি দিয়ে চলে যায়। একজন দফতরি যদি এমন নাটক করে টাকা আদায় করে, তাহলে আমাদের নিরাপত্তা কোথায়?
তবে অভিযুক্ত হাবিবুর রহমান নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, আমি কখনোই নিজেকে ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দিইনি। একজন স্যার আমাকে ফোন দিয়ে ব্যবসায়ীদের নাম্বার সংগ্রহ করতে বলেন। এরপর কে টাকা নিয়েছে, তা আমি জানি না। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

এ বিষয়ে ভেদরগঞ্জ সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভারপ্রাপ্ত ইউএনও মোহাম্মদ মোজাহেরুল হক বলেন, বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। এটি একটি গুরুতর অভিযোগ। তদন্ত করে সত্যতা পেলে অভিযুক্ত কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি হোটেল ব্যবসায়ীদের প্রতি অনুরোধ—ভয়ভীতি বা প্রলোভনে প্রভাবিত না হয়ে সচেতন হোন।
এমন প্রতারণামূলক ঘটনার পর ভেদরগঞ্জের ব্যবসায়ী মহলে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা বলছেন, সরকারি কর্মচারীর এমন ভূমিকায় সাধারণ মানুষের আস্থা ও নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের জোর দাবি—প্রশাসনের উচিত এই ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যেন ভবিষ্যতে আর কেউ সরকারি পরিচয়ের অপব্যবহার করে প্রতারণা করতে না পারে।
প্রতিনিধি/এসএস