জেলা প্রতিনিধি
০১ আগস্ট ২০২৫, ০২:৫৮ পিএম
টাঙ্গাইল, শরিয়তপুর, ফরিদপুর, মাদারীপুরসহ ৬ জেলার ১৭ যুবকের খোঁজ নেই ৪ মাস ধরে। দালালের খপ্পরে পড়ে লিবিয়া হয়ে গ্রিস যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয় তারা।
ধারদেনা করে লাখ লাখ টাকা মানবপাচার চক্রের হাতে তুলে দিয়ে এখন পরিবারে নেমে এসেছে হতাশা। আদরের সন্তানদের ফিরে পেতে স্বজনরা ঘুরছেন দ্বারে দ্বারে। তবুও কোনো খোঁজই মিলছে না।
এ ব্যাপারে জানতে প্রধান অভিযুক্ত রাজীব আকনের সাথে যোগাযোগ করে তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, রাজীব বর্তমানে লিবিয়ায় অবস্থান করছেন।
![]()
নিখোঁজ ব্যক্তিরা হলেন, মাদারীপুর সদর উপজেলার উত্তর দুখধালী গ্রামের আলমগীর সরদারের ছেলে আসাদ সরদার, একই গ্রামের দোলোয়ার হোসেন খানের ছেলে রাকিব খান, পূর্ব হোসনাবাদ গ্রামের জামাল ব্যাপারীর ছেলে হৃদয় ব্যাপারী, শ্রীনদী পশ্চিম হাসানকান্দি গ্রামের আবুল হোসেন মুন্সির ছেলে রাকিব মুন্সি, শিবচর উপজেলার বাঁশকান্দি গ্রামের সররাব উদ্দিন কাজীর ছেলে রাব্বি কাজী, শরিয়তপুরের বিষুগাঁও গ্রামের খোকন ব্যাপারীর ছেলে ছোটন ব্যাপারী, কানুরগাঁও গ্রামের সৈয়দ নুরুল হকের ছেলে সৈয়দ রোমান, নড়িয়া উপজেলার দক্ষিণ চাকধ এলাকার আব্দুল মজিদ হাওলাদারের ছেলে আনোয়ার হাওলাদার, একই উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের জলিল শেখের ছেলে জাকির শেখ, শরিয়তপুরের সিদ্দিকুর রহমান ঢালীর ছেলে মানিক ঢালি, নাহিদ। নেত্রকোনার রানীগাঁও গ্রামের মিজান উদ্দিনের ছেলে দ্বীন ইসলাম, টাঙ্গাইলের বাসাইল থানার টেংরিয়াপাড়া গ্রামের জাহাঙ্গীর মিয়ার ছেলে ইয়ামিন আহম্মেদ, ফরিদপুরের ঘোরাদী গ্রামের মো. সাহাবুদ্দিন শেখের ছেলে সবুজ শেখ, সিরাজগঞ্জের মিলন মিয়া, কিশোরগঞ্জের ভৈরবের তারেক রহমান ও রাশেদুল আলম।
![]()
জানা যায়, শরিয়তপুরের বিষুগাঁও থেকে মা তাসলিমা বেগমের সাথে বাবা ছোটন ব্যাপারীর খোঁজে মাদারীপুরে এসেছেন ৫ বছরের সুলতানা। ছবি হাতে কান্নায় ভেঙে পড়ছে সে। তার বাবা কোথায় আছে জানে না প্রথম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েটি। এদিকে টাঙ্গাইলের বাসাইল থানার টেংরিয়াপাড়া জাহাঙ্গীর মৃধার এইচএসসি পাস করা ছেলে ইয়ামিন আহম্মেদের পাগলামির কারণে নিজের চালানো সিএনজি বিক্রি করে দালালের হাতে তুলে দেন ৫ লাখ টাকা। কোনো ঝামেলা ছাড়াই তার একমাত্র ছেলেকে পৌঁছে দেওয়ার কথা গ্রিস। কিন্তু ৪ মাস ধরে ইয়ামিনেরও সন্ধান মিলছে না।
![]()
একইভাবে দালালের খপ্পরে পড়ে নেত্রকোনা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, কিশোরগঞ্জসহ ৬ জেলার ১৭ যুবক গত ২৬ মার্চ লিবিয়া হয়ে গ্রিসের উদ্দেশে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ওঠেন। এরপর আর কোনো খোঁজ পাচ্ছে না পরিবারগুলো। স্বজনদের অভিযোগ, মানবপাচার চক্রের সক্রিয় সদস্য মাদারীপুরের শিবচরের দক্ষিণ বাঁশকান্দি গ্রামের উজ্জ্বল আকনের ছেলে রাজীব আকন প্রলোভন দেখিয়ে প্রত্যেক পরিবারের কাছ থেকে ৫-১২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। পরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় রাজীব। নিখোঁজদের ফিরে পেতে ও দালালের বিচারের দাবিতে শুক্রবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করেছে পরিবারগুলো।
![]()
ছোটন ব্যাপারীর মেয়ে সুলতানার সঙ্গে কথা বলে সে জানায়, তার বাবার সাথে কথা হয় না প্রায় সাড়ে ৪ মাস। কোথায় আছে জানে না পরিবার। মেয়েটি কান্নায় ভেঙে পড়ে বারবার বাবার খোঁজ চাচ্ছে।
হৃদয় ব্যাপারীর মা কোহিনুর বেগম বলেন, আমি আমার ছেলেকে ফেরত চাই। আর দালালের কঠিন বিচার চাই। সরকার যেন আমাদের গরিব মানুষের দিকে তাকাইয়া ব্যবস্থা নেয়।
![]()
সবুজ শেখের ছোটভাই সুরুজ শেখ বলেন, ধারদেনা করে দালালের হাতে টাকা তুলে দিলাম। দালাল রাকিব আকন বলেছিল কোনো সমস্যা ছাড়াই গ্রিস পৌঁছে দিবে। ৪ মাসের বেশি সময় ধরে আমার ভাইয়ের কোনো সন্ধান নেই। আমরা দিশেহারা হয়ে পড়েছি।
![]()
জাহাঙ্গীর মৃধা বলেন, আমার একমাত্র ছেলে ইয়ামিন এইচএসসি পাস করার পর দালালের খপ্পড়ে পড়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। সিএনজি চালিয়ে জীবন চলত, সেটি বিক্রি করে দালালের হাতে ৫ লাখ টাকা তুলে দিয়েছিলাম। এখন ছেলেও নাই, আর সংসারও চলে না। দুই কারণেই খুব অসুবধিায় আছি।
মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাঈমুল হাছান জানান, দালালদের খপ্পরে পড়ে মাদারীপুরসহ বিভিন্ন এলাকার বেশ কয়েকজন যুবক নিখোঁজের খবর শোনা যাচ্ছে। ভুক্তভোগীর পরিবার থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রতিনিধি/এসএস