জেলা প্রতিনিধি
৩১ জুলাই ২০২৫, ০৯:১৮ পিএম
যশোরের তিন উপজেলায় ৫৩টি সেক্টরে দশ হাজার শিশু শ্রমিক কাজ করছে। তবে এসবের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ সেক্টরও রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) বিকেলে আব্দুর রশিদ খান ফাউন্ডেশনে আয়োজিত অ্যাডভোকেসি সভায় এই তথ্য জানান নির্বাহী পরিচালক প্রদীপ মার্সেল রোজারিও।
সভায় বলা হয়, ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসনে কাজ করার জন্য খান ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে যশোর সদর, অভয়নগর উপজেলার শিল্পশহর নওয়াপাড়া এবং শার্শা উপজেলার নাভারণে একটি বেজলাইন সার্ভে করা হয়। যশোর জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে এই সার্ভে পরিচালনা করা হয়।
ওই সার্ভের মাধ্যমে সংস্থাটি উল্লেখিত তিনটি এলাকায় ৯ হাজার ৯৮০ জন শিশু শ্রমিকের সন্ধান পেয়েছে। এসব শিশুর মধ্যে সদর উপজেলায় রয়েছে ৪ হাজার ৯৯৯ জন, নওয়াপাড়ায় ৩ হাজার ৪৮৮ জন এবং নাভারণে ১ হাজার ৪৯৯ জন। শ্রমে নিযুক্ত শিশুদের মধ্যে ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের সংখ্যা ৩ হাজার ৯৩৮ এবং ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সী ৬ হাজার ৪২ জন। এসব শিশুর মধ্যে ৫ হাজার ৭শ’ ছেলে এবং ৪ হাজার ২৮০ মেয়ে।
জানানো হয়, প্রধানত অধিক শ্রমঘন এলাকা হিসেবে খান ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে যশোরের এই তিন এলাকায় জরিপ এবং পরবর্তীতে কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়।
এসব এলাকার শিশুরা যেসব ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমের সাথে জড়িত রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য: বিড়ি, লেদ, ডেন্টিং ও পেইন্টিং, জুয়েলারি, ইটভাটা, পাটা-শিল, কয়লার ডাম্পিং, নৌবন্দর, নির্মাণ, বাসের হেলপার, রিকশা-ভ্যান-নসিমন-করিমন চালক, সেমিল ইত্যাদি।
এসব শিল্পের অনেকটিতে বিষাক্ত ও ক্ষতিকর কেমিক্যাল ব্যবহৃত হয়। অনেকখানে দুর্ঘটনার ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি। ফলে এই শিল্পের শিশু শ্রমিকরাও চরম ঝুঁকিতে রয়েছে।
শ্রমে নিযুক্ত শিশুদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য নষ্ট হচ্ছে, স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে, দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রে ফেঁসে যাচ্ছে। এমনকি তারা মারাত্মক ট্রমায় আক্রান্ত হচ্ছে।
সভায় বলা হয়, শ্রমে নিযুক্ত শিশুরা প্রায় সবাই হতদরিদ্র ও অসহায় পরিবারের সন্তান। তাই বাধ্য হয়ে তারা শ্রমে নিযুক্ত হয়েছে।
সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়, ইতোমধ্যে খান ফাউন্ডেশন তিন এলাকায় ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের শ্রম থেকে বের করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে একটি প্রকল্প পরিচালনা করছে। এই প্রকল্পের আওতায় তারা অন্যান্য শিশু শ্রমিকদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের উদ্যোগ গ্রহণ করছে।
পাশাপাশি প্রকল্প এলাকায় শিশু শ্রমিকদের সঙ্গে পরোক্ষভাবে যুক্ত প্রায় দশ হাজার মানুষকে চিহ্নিত করে তাদের সচেতন করার মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসনে নানা কর্মসূচি পরিচালনা করা হচ্ছে।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন খান ফাউন্ডেশনের প্রজেক্ট অফিসার সোহান উদ্দীন, শাহানাজ পারভীন এবং মনিটরিং ও জব ক্রিয়েশন অফিসার শেখ ওয়াহিদ আব্দুল্লাহ।
প্রতিনিধি/একেবি