জেলা প্রতিনিধি
৩১ জুলাই ২০২৫, ০৭:২১ পিএম
অল্প বৃষ্টিতেই মাদারীপুর পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। মাত্র এক ঘণ্টার বৃষ্টির পানি নামতে লাগে ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন পৌরবাসী। দীর্ঘদিনেও জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা। যদিও সমস্যা সমাধানে নানা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন পৌর প্রশাসক।
সরেজমিনে দেখা যায়, মাদারীপুর শহরের বাণিজ্যিক এলাকা পুরান বাজারে বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে প্রধান সড়ক। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বিড়ম্বনায় যাত্রী, চালক ও পথচারীরা। ক্রেতার উপস্থিতি কমে যাওয়ায় হ্রাস পেয়েছে বিক্রিও। ব্যবসায়ীদের দাবি, এতে দিনে কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হচ্ছে।
এদিকে যাত্রারমাঠ এলাকার সড়ক ও আশপাশে জমে গেছে হাঁটুপানি। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। একই অবস্থা হামিদ আকন্দ সড়ক, ডা. অখিল বন্ধু সড়ক, শহীদ বাদল সড়ক, কালীবাড়ি রোড, মিলন সিনেমা সড়ক, শহীদ মানিক সড়ক, মন্টু ভুইয়া সড়ক, শহীদ বাচ্চু সড়কসহ অধিকাংশ সড়কের। বৃষ্টি হলেই এসব সড়কে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। মাত্র এক ঘণ্টার বৃষ্টির পানি সরতেই সময় লাগে ২৪ ঘণ্টারও বেশি। কয়েক বছর ধরেই চলছে এই দুরবস্থা, কিন্তু কর্তৃপক্ষের ভূমিকা থেকে যাচ্ছে উদাসীন। ফলে বাধ্য হয়েই এই দুর্ভোগের মধ্যেই বসবাস করছেন পৌরবাসী।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, কর, ট্রেড লাইসেন্স, জন্ম-মৃত্যু সনদসহ নানা খাতে প্রতিবছর শত কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করে পৌর কর্তৃপক্ষ। অথচ নিয়মিত ড্রেন পরিষ্কার না করা ও যত্রতত্র জলাশয় ভরাট করে বহুতল ভবন নির্মাণের কারণেই সৃষ্টি হচ্ছে এমন নাজুক পরিস্থিতি। এতে চরম দুর্ভোগে পড়ছেন যাত্রী, চালক ও পথচারীরা।
জানা গেছে, মাদারীপুর পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের ৩৪টি মৌজায় প্রায় দুই লাখ মানুষের বসবাস। ১৮৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত সাড়ে ১৪ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই পৌরসভা ১৯৯১ সালে প্রথম শ্রেণির পৌরসভার মর্যাদা পায়।
পথচারী রাব্বি মৃধা বলেন, ‘পুরান বাজারের রাস্তায় হাঁটাচলা করাই দায় হয়ে পড়েছে। চারদিকে শুধু পানি থইথই করছে। এখানে কেনাকাটা করতেও বিপদে পড়েছি।’
মুক্তনগর মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা মুহাম্মদ উল্লাহ বলেন, ‘ড্রেনের মুখগুলো বন্ধ হয়ে গেছে, তাই পানি সরতে পারছে না। এগুলো যদি পৌরসভার লোকজন না দেখে, তাহলে আমরা ভয়াবহ বিপদে পড়ে যাব।’
ইজিবাইক চালক রিপন তফাদার বলেন, ‘চারদিকে সড়কে খানাখন্দ। তার ওপর জমেছে পানি। দুই কারণেই ভোগান্তির শেষ নেই। চলাচল করাই এখন মুশকিল হয়ে পড়েছে।’
পুরান বাজারের জুতা ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে, ফলে ক্রেতা কম আসছেন। যার কারণে বিক্রিও কমে গেছে। আমরা ব্যবসায়ীরা বড় সমস্যায় আছি।’
কাঁচামাল ব্যবসায়ী মিঠু হোসেন বলেন, ‘পুরান বাজারের প্রধান সড়কে হাঁটুপানি জমে গেছে। এতে দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। আমরা দ্রুত এর সমাধান চাই।’
মাদারীপুর পৌর প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুল আলম বলেন, ‘শহরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এর অন্যতম কারণ, ড্রেনগুলো ময়লা-আবর্জনায় পূর্ণ হয়ে গেছে। শহরবাসী পলিথিনে করে আবর্জনা ড্রেনে ফেলছেন, এতে ড্রেনের মুখ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে পানি নামতে সময় লাগছে। পৌরসভার কর্মীরা বৃষ্টির মধ্যেও কাজ করছে। খুব শিগগিরই পানি নেমে যাবে।’
প্রতিনিধি/একেবি