জেলা প্রতিনিধি
৩০ জুলাই ২০২৫, ০৬:৫০ পিএম
মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলায় সড়ক নির্মাণ করতে গিয়ে কোনোরকম ক্ষতিপূরণ বা নোটিশ ছাড়াই কয়েকটি পরিবারকে উচ্ছেদ চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ও জমির মালিকরা।
ঘটনাটি উপজেলার ষোলঘর ইউনিয়নের ষোলঘর গ্রামে।
বুধবার (৩০ জুলাই) সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ওই এলাকার নুরে আলম চৌধুরীর বাড়ি থেকে পালবাড়ি পর্যন্ত একটি আরসিসি রাস্তা নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।
![]()
সড়কের দুই পাশে ইটের গাথুনিসহ ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলোতে গাইডওয়াল নির্মাণ কাজও সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু নুরে আলম চৌধুরীর বাড়ি থেকে সড়কটি প্রস্থে ১৫-১৮ ফিট করে এগিয়ে এলেও পালবাড়ির সামনে এসে বাড়ির বাউন্ডারি ওয়াল ও দুই পাশে বসতি থাকার কারণে দেড় থেকে দুই ফিটের বেশি জমি না থাকায় আটকে গেছে সড়কের কাজ।
পালবাড়ির মালিকানায় থাকা ব্যক্তিরা বলছেন, কোনোরকম ক্ষতিপূরণ বা নোটিশ ছাড়াই সড়ক নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার উদ্দেশে যেকোনো সময় বাউন্ডারি ওয়াল ভেঙে বসতবাড়ি উচ্ছেদ করে জোরপূর্বক ১৮ ফুট চওড়া রাস্তা নির্মাণ করতে পারেন সংশ্লিষ্টরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পালবাড়ি নামক ওই বাড়িটি ৮০ বছরের পুরোনো। এখানে ২০ শতাংশ জমি রয়েছে। একসময় এটি হিন্দু মালিকানায় ছিল। বর্তমানে বাড়ির মালিকানায় রয়েছেন স্থানীয় লুৎফে হাবীব, নাঈমা হাবিব, ইমরান হাবিব ও নাসিমা হাবিব ও শারমিন রহমানরা। তার পক্ষে আমমোক্তার নামা বলে দেখাশোনা করেন কাজী রুবেল।
![]()
পালবাড়ির মালিকপক্ষ জানান, জমিটি খাস জমি মর্মে ২০০৭ সালে জেলা প্রশাসক জমির মালিকদের বিবাদী করে আদালতে মামলা করেন। সরকার পক্ষ মামলা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় আদালত ২০১৮ সালে বিবাদী পক্ষে রায় ঘোষণা করেন। পরে সরকার পক্ষ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে। কিন্তু সেখানেও ২০২৪ সালে জেলা নিম্ন আদালতে পুনরায় রায় পান বিবাদী পক্ষ। পরে সরকার পক্ষ উচ্চ আদালতে আবারও আপিল করে। বর্তমানে আপিলের মামলা চলমান রয়েছে।
পালবাড়ির মালিকদের অন্যতম অংশীদার লুৎফে হাবীব জানান, তিনি পৈত্রিক সূত্রে এ বসতভিটের মালিক। ছয়-সাত মাস আগে হঠাৎ করেই ভূমি অফিসের সার্ভেয়ারসহ অচেনা কয়েকজন ব্যক্তি এসে জমি মাপামাপি শুরু করেন। এসময় তার ভাড়াটিয়ারা প্রতিবাদ করেন। এতে তাদের জানানো হয় এখানে একটি রাস্তা নির্মাণ করা হবে। সেই সূত্রে তারা রাস্তা নির্মাণ হওয়ার কথা প্রথমে জানতে পারেন। এরপর প্রায় ৫ মাস আগে নুরে আলম চৌধুরীর বাড়ি থেকে পালবাড়ি পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
![]()
লুৎফে হাবীব আরও জানান, বসতভিটের ওপর দিয়ে রাস্তা করা হবে খবর পেয়ে জমির মালিকরা লিখিতভাবে জেলা প্রশাসককে বিষয়টি অবগত করি। জমিরা মালিকরা জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে জানান, ওই জমি তাদের পৈত্রিক, সেখানে তারা শান্তিপূর্ণভাবে ভোগ দখলে আছেন। সরকারি জমি বা ম্যাপে কোনো রাস্তা নেই। তাদের প্রতি যাতে অন্যায় না হয় সে বিষয়ে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা চান। পরে জেলা প্রশাসক অবৈধভাবে কিছু হবে না মর্মে তাদের আশ্বস্ত করেন।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) গোলাম রাব্বানী সোহেল সাংবাদিকদের জানান, সেখানে কারও বাড়ির ওপর দিয়ে রাস্তা নেওয়া হয়নি। আর পুরো বিষয়টি আমি সঠিক জানি না। আমি দুই মাস ধরে এসেছি। রাস্তা নির্মাণের জন্য কারও জমি নেওয়া হলে অবশ্যই আইনগত নিয়ম মেনেই নেওয়া হবে।
![]()
তবে বিষয়টি নিশ্চিত করে শ্রীনগর উপজেলা এলজিইডির উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আ. বারিক বলেন, রাস্তার কাজ প্রায় শেষ হওয়ার পথে থাকলেও পালবাড়ির সামনে গিয়ে জমি না পাওয়ায় রাস্তার কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। জোরজবরদস্তি করে কারও জমি নেওয়ার উপায় নেই। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে বাকি কাজ সমাপ্ত করা হবে।
প্রতিনিধি/এসএস