images

সারাদেশ

লালমনিরহাটে তিস্তায় পানি বেড়ে প্লাবিত নিম্নাঞ্চল

জেলা প্রতিনিধি

৩০ জুলাই ২০২৫, ০৪:২২ পিএম

গত রাতে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ওপরে ছিল, তবে বুধবার সকালে পানি কিছুটা কমে বিপদসীমার ৮ সেমি নিচে প্রবাহিত হচ্ছে। পানির তোড়ে খুলে রাখা হয়েছে ৪৪টি জলকপাট।

মঙ্গলবার ২৯ জুলাই রাতে উজানের ঢলে লালমনিরহাটে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা দেখা দিয়েছে। রাতে তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে নদীর পানি বিপদসীমার সাত সেন্টিমিটার (৫২ দশমিক ২২ সেন্টিমিটার) ওপরে প্রবাহিত হচ্ছিল। পানি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে। তবে বুধবার সকাল ৬টায় ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি কিছুটা কমে বিপদসীমার নিচে আসে এবং সকাল ৯টায় ৮ সে.মি. নিচে প্রবাহিত হয়। বর্তমানে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিপদসীমার ১৫ সেমি নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

এর আগে গতকাল সন্ধ্যায় বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র (বাপাউবো) এ খবর বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়েছে।

পানির তোড়ে রাতেই হাতীবান্ধা উপজেলার ধুবনী এলাকার একটি কাঁচা রাস্তা ভেঙে গেছে। ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি কিছুটা কমলেও ব্যারাজের ভাটিতে থাকা হাতীবান্ধা উপজেলার সানিয়াজান, সিন্দুরনা, পাটিকাপাড়া, গড্ডিমারী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ও সদর উপজেলার রাজপুর, খুনিয়াগাছ ও গোকুন্ডা ইউনিয়নের নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চলগুলোর ১৫টি গ্রামের প্রায় ৫ হাজার পরিবার পানি বন্দি হয়েছে। ডুবে গেছে রাস্তাঘাট, ফসলী জমি এবং ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। বিশেষ করে আমন বীজতলা বিভিন্ন অঞ্চলে ডুবে গেছে, ফলে আমন বীজের সংকট দেখা দিতে পারে। এদিকে আদিতমারী উপজেলার তিস্তা তীরবর্তী এলাকায় কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিতে ডুবে গেছে। রাস্তা ও স্কুল মাঠে হাটু পানি থাকায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে পারছে না। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

মহিষখোচা ইউনিয়নের গোবর্ধন এলাকার আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘হঠাৎ রাত থেকে পানি বাড়তে শুরু করেছে। এলাকার রাস্তা-ঘাট ও বাড়িতেও হাটু পানি উঠছে। রান্না করাসহ গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়ছি আমরা।’

গোবর্ধন স্কুলের প্রধান শিক্ষক দিলীপ কুমার রায় বলেন, ‘বন্যা আসলে আমাদের স্কুলের মাঠ ও রাস্তায় হাটু পানি থেকে কোমর পানি পর্যন্ত উঠে যায়। এর ফলে আমরা স্কুলে যেতে পারি না। শিক্ষার্থীরাও আসতে পারে না। ফলে স্কুলের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। আমরা চাই এই রাস্তা আরও উঁচু করা হোক।’

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, ‘তিস্তার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। নদীর তীরবর্তী ধুবনী এলাকায় একটি বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ফলে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। সকালে পানি কিছুটা কমেছে। তবে আগামী ২৪ ঘণ্টায় পানি স্তর স্থিতিশীল থাকতে পারে এবং এরপর কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

বন্যা বা নিম্নাঞ্চল প্লাবিত মানুষের সার্বিক সহায়তা প্রদানের জন্য জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখার পক্ষ থেকে প্রতিটি উপজেলায় ৪০ মেট্রিক টন জিআর চাল (দুর্যোগ) উপবরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ঢেউটিন ও শুকনা খাবারের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে এবং জেলা ও উপজেলা প্রশাসন থেকে সার্বক্ষণিক এ বিষয়ে খোঁজ খবর রাখা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।

প্রতিনিধি/একেবি