জেলা প্রতিনিধি
২৮ জুলাই ২০২৫, ০৭:৪৩ পিএম
গাজীপুরের টঙ্গীতে ম্যানহোলে পড়ে নিখোঁজের দ্বিতীয় দিন পার হলেও সন্ধান মেলেনি হতভাগ্য তাসনিম সিদ্দিকী জ্যোতির। দিনভর ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীরা মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে তৎপর থাকলেও বিকেলে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্ধার অভিযান স্থগিতের ঘোষণা দেয় বাহিনীটি। এ ব্যাপারে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৭ কর্মদিবসে তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন দাখিল করবেন।
নিখোঁজ তাসনিম সিদ্দিকী জ্যোতি রাজধানীর মিরপুরে ১০ নম্বর সেক্টরে বসবাস করতেন। তিনি ওষুধ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মনি ট্রেডিংয়ের সেলসম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি চুয়াডাঙ্গা জেলায় বলে জানা গেছে।
স্থানীয় অধিবাসী ও নিহতের স্বজনদের দাবি, ড্রেনের রক্ষণাবেক্ষণ সংস্থা ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে।
নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল রোববার (২৭ জুলাই) রাত সোয়া ৯টায় হোসেন মার্কেট এলাকায় স্থানীয় ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে ওষুধ বিপণনের কাজে এসেছিলেন সেলসম্যান তাসনিম সিদ্দিকী জ্যোতি। বৃষ্টিপাত ও বৈরী আবহাওয়ায় হঠাৎ অসাবধানতাবশত হাসপাতালের সামনে ঢাকনাবিহীন ম্যানহোলে পড়ে যান তিনি। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধারে ব্যর্থ হয়ে ফায়ার সার্ভিসে খবর দেয়। এরপর ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট রাত দেড়টা পর্যন্ত তাদের উদ্ধার অভিযান চালায়। বৈরী আবহাওয়ায় উদ্ধার কাজ স্থগিত রেখে পরদিন সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ফের উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে ফায়ার সার্ভিস। তাদের সাথে যোগ দেয় সিটি করপোরেশন ও পুলিশ প্রশাসন। ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের হোসেন মার্কেট থেকে গাজীপুরা পর্যন্ত ড্রেনের ঢাকনা খুলে তল্লাশি চালায় ফায়ার সার্ভিস। এক পর্যায়ে গাজীপুরা এলাকায় বিল ও জলাশয়ে উদ্ধার অভিযান চালায় ডুবুরিরা।
![]()
স্থানীয়রা বলছেন, ম্যানহোলটি দীর্ঘ দিন ধরে এভাবে ঢাকনাবিহীন থাকলেও এটি সংস্কার ও মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। হাসপাতাল, সিটি করপোরেশন ও সড়ক বিভাগের গাফিলতির কারণে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে।
ম্যানহোলে নিখোঁজের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত রয়েছেন নিহত তাসনিম সিদ্দিকীর স্বজনরা। তাসনিমকে এভাবে হারানোর জন্য হাসপাতাল ও সরকারি সেবা প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি ও তাদের নজরদারির অভাবকে দায়ী করেছেন তারা।
তাসনিম সিদ্দিকীর চাচাতো বোন ঐশী বলেন, রাতে ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে ওষুধ বিপণনের কাজে এসেছিলেন জ্যোতি। এরপর ম্যানহোলে পড়ে তার নিখোঁজের খবর পাই। কিন্তু দুপুর হয়ে গেলেও বোনের সন্ধান পাইনি। আমরা চাই জীবিত না হোক অন্তত তার লাশটি যেন পাই।
টঙ্গী ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. শাহীন আলম বলেন, ঘটনার পর উদ্ধারকারী ২০ সদস্যের দল ম্যানহোলের ভেতর নিখোঁজ ওই নারীর সন্ধানে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। ম্যানহোলটির গভীরতা প্রায় দশ ফুট। দিনভর বৃষ্টি হওয়ায় ম্যানহোলটি পানিতে ভরপুর হয়ে গেছে। দ্বিতীয় দিন সিটি করপোরেশনের সহায়তায় ড্রেনের ঢাকনা পর্যায়ক্রমে উঠিয়ে অনুসন্ধান চালায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। কিন্তু উদ্ধারকর্মীরদের প্রাণান্ত প্রচেষ্টার পরেও তাসনিমের মরদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তবে ঘটনাস্থল থেকে নিখোঁজ তাসনিমের একজোড়া জুতা উদ্ধার করা হয়েছে।
তদন্ত কমিটি গঠন
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোহেল হাসান। এসময় তিনি ফায়ার সার্ভিস ও সিটি করপোরেশনের টিমের সাথে কথা বলেন এবং উদ্ধার তৎপরতা নিয়ে দিক নির্দেশনা দেন। এসময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঢাকনাবিহীন ম্যানহোলের রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকি সড়ক বিভাগের। এটি সিটি করপোরেশনের সড়ক নয়। নিখোঁজ নারীর উদ্ধারে সিটি করপোরেশন জনবল ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি দিয়ে সহায়তা করে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সচিবকে প্রধান করে ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে ফায়ার সার্ভিসসহ অন্যান্য সেবা প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করা হয়েছে। কমিটি আগামী ৭ কর্মদিবসে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিবেন।
প্রতিনিধি/এসএস