images

সারাদেশ

‘আমার ছেলের কফিনভর্তি লাশ আসবে কবে’, ছবি হাতে মায়ের আহাজারি

২৩ জুলাই ২০২৫, ০৪:১৬ পিএম

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ব্রুনাইয়ে নির্মাণস্থলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ভোলা সদর উপজেলার পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের চর জাহাঙ্গালিয়া গ্রামের জামাল হোসেন (৩৫)।

বুধবার (২৩ জুলাই) দুপুরে তার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় হৃদয়বিদারক দৃশ্য। মা-বাবা, ভাই-বোনেরা কান্নায় ভেঙে পড়েছেন, আহাজারি করছেন। ছোট বোন বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। আর প্রবাসী ভাই জামাল কফিনে ভরে দেশে ফেরার অপেক্ষায়।

জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুরে ব্রুনাইয়ের চীনারুপাই শহরের একটি নির্মাণ প্রকল্পে কাজ করার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন জামাল। বিকেলে এক সহকর্মী ফোনে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার মৃত্যুর খবর দিলে পুরো গ্রামে নেমে আসে শোকের ছায়া।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ১২ বছর আগে সংসারের অভাব দূর করতে ব্রুনাইয়ে পাড়ি জমান জামাল। সেখানে একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে কাজ করতেন। কয়েকবার দেশে এলেও গত ৬ বছরে ছুটি না পেয়ে আর ফিরতে পারেননি। সম্প্রতি এক সহকর্মী দেশে ফিরে এলে জামালের ছুটির তারিখ নির্ধারিত হয় ৩ আগস্ট। পরিবারের সদস্যদের জন্য নানা উপহারও কিনেছিলেন, ভিডিও কলে দেখিয়েছিলেন সেগুলো। এবার দেশে ফিরে বিয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি।

আহাজারি করে জামালের বোন কুলসুম বেগম বলেন, ‘আমার ভাই ৩ আগস্ট দেশে আসবে বলেছিল। আমাদের জন্য অনেক কিছু কিনেছে। এবার দেশে ফিরে বিয়ে করবে বলেছিল। কিন্তু এখন ভাইয়ের কফিন আসবে!’

মা নিরুতাজ বেগম বিলাপ করে বলেন, ‘আমার ছেলে দেশে আসার জন্য কতদিন ধরে আকুল ছিল। ছুটি না পেয়ে আসতে পারেনি। এখন আর কোনো দিন আসবে না। শুধু লাশ হয়ে ফিরবে।’

নিহতের ভগ্নিপতি সেকান্তর মিয়া জানান, জামালের মরদেহ স্থানীয় হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে হিমাগারে রাখা হয়েছে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সম্পন্ন হলে মরদেহ পাঠানোর কথা রয়েছে। তবে তারা বাংলাদেশ সরকারের সহায়তা কামনা করছেন, যেন দ্রুত লাশ দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়।

প্রতিবেশীরা জানান, জামাল ছিলেন অত্যন্ত সৎ ও পরিশ্রমী একজন মানুষ। তার এমন মৃত্যুতে গোটা গ্রাম শোকে স্তব্ধ। সবাই তাকে খুব ভালোবাসতেন।

এদিকে জামালের মৃত্যুর খবরে পুরো চর জাহাঙ্গালিয়া গ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। পরিবারসহ গ্রামের মানুষ অপেক্ষায় আছেন প্রিয় জামালকে শেষবারের মতো একনজর দেখার জন্য।

প্রতিনিধি/একেবি