জেলা প্রতিনিধি
২০ জুলাই ২০২৫, ০৯:২১ পিএম
নওগাঁ জেলা জজ আদালতের গারদখানায় বন্দী আসামিদের সাথে কেউ দেখা করতে গেলে টাকার বিনিময়ে মিলে সাক্ষাতের সুযোগ। টাকা না দিলে বিভিন্ন তালবাহানা ও আইন দেখান দায়িত্বরত পুলিশরা। এমন অভিযোগ উঠেছে নওগাঁ কোর্ট পুলিশের বিরুদ্ধে। ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রমাণও মিলেছে টাকা লেনদেনের।
সরেজমিনে গিয়ে নওগাঁ কোটের গারদখানায় দেখা যায়, বিভিন্ন মামলার আসামি আনা নেওয়া হচ্ছে। যেসব আসামিদের কোর্টে হাজিরা রয়েছে তাদেরও আনা হয়েছে জেলা কারাগার থেকে। এছাড়া জেলার বিভিন্ন এলাকা হতে আটক আসামিদেরকে গারদখানায় ঢোকানো হচ্ছে। বন্দী আসামিদের সাথে তাদের আত্মীয় স্বজন দেখা করতে কোর্টের গারদখানায় এসেছেন অনেকে। সেখানে থাকা দায়িত্বরত পুলিশকে টাকা দিলে আসামিদের সাথে দেখা করা, ও বিভিন্ন খাবার দেওয়ার সুযোগ মিলছে। অন্যথায় দেখা করা কিংবা কথা বলার কোনো সুযোগ নেই। এমন নিয়মে পরিণত হয়েছে নওগাঁ জেলা জজ আদালতের গারদখানা।
টাকার বিনিময়ে নিয়ম পরিবর্তন হয়েছে অনিয়মে:
বন্দীদের স্বজন বাইরের হোটেল থেকে কিংবা বাসাবাড়ি থেকে শুকনো খাবারের পরিবর্তে এনে দিচ্ছে ভাত, মাছ, মাংস ও বিরিয়ানি। সেলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে বন্দীরা যেমন মোবাইল ফোনে কথা বলছে, তেমনি দেদারছে করছে ধূমপান। সেখানে থাকা পুলিশকে ৫০০ টাকা দিলেই এসব সুবিধা মেলে বলে জানালেন বন্দী ও তাদের আত্মীয় স্বজনরা।
যা বলছেন ভুক্তভোগীরা:
জেলার পত্নীতলা উপজেলা থেকে মোস্তফা নামে এক ব্যক্তি এসেছেন তার মামাতো ভাইয়ের সাথে দেখা করতে। তিনি বলেন- আমাদের জমি সংক্রান্ত মামলার ঘটনায় চার জন আটক রয়েছে। আজকে তারিখ ছিল, তাই এসেছি। আসামিদের সাথে দেখা করতে ১ হাজার করে টাকা দিতে হয়। তাহলে কথা বলা ও খাবার দিতে দেয়। এর আগের তারিখে দেড় হাজার টাকা নিয়েছিল। যতবার দেখা করতে আসি ১ হাজার করে টাকা দিতে হয়। ৪জন আছে তাই বেশি লাগে জন প্রতি আড়াইশ করে ১ হাজার টাকা পুলিশকে দিতে হয় দেখা করার জন্য।
সেলের দক্ষিণ পাশের বারান্দায় সিগারেট হাতে দাঁড়িয়ে মোবাইল ফোনে কথা বলছেন এক বন্দী। ভেতরে তাকিয়ে দেখা যায় বারান্দায় তার পাশেই বেঞ্চে বসে আপন মনে মোবাইল টিপছেন পুলিশ। বন্দী বাইরে তার দু’জন আত্মীয়ের সাথে কথা বলছেন। আটক ব্যক্তির নাম জানালেন মিঠু তার বাড়ি নওগাঁ সদরের মাদারমোল্লা গ্রামে।
এগিয়ে গিয়ে মিঠুর সাথে কথা হলে তিনি বলেন- আজকে রাতে আমাকে রাজনৈতিক মামলায় আটক করে এনেছে। ধূমপানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, পুলিশকে ৫০০ টাকা দিয়েছি। এখানে পুলিশকে টাকা দিলে সব খাবার দেয়। আত্মীয় স্বজন আসলে লুকিয়ে তাদের ফোন থেকে কথা বলা যায় তবে দেখতে পেলে নিষেধ করে।
সাপাহার উপজেলার আশড়ন্দ থেকে দেখা করতে এসেছেন একটি পরিবার এসময় বন্দীর বড় ভাই নুরনবীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, রাজনৈতিক মামলায় আমার ছোট ভাই আটক আছে। আজকে ধার্য তারিখ ছিল তাই পরিবারের সবাই কোর্টে এসেছি তার সাথে দেখা করার জন্য। পুলিশকে প্রথমে ২০০ টাকা দিয়েছিলাম ১০মিনিট পর পুলিশ এসে বলে সময় শেষ আর কথা বলা যাবে না। আর একটু কথা বলতে চাইলে পুলিশ বলে ৫০০ টাকা দিলে যতক্ষণ ইচ্ছা কথা বলতে পারবেন। তখন আমার ভাই আরো ৩০০ টকা দেয়। ৫০০ করে টাকা দিলে যতক্ষণ ইচ্ছা দেখা করতে দেয় খাবারও দিতে দেয়।
নিজেদের সাফাই গেয়ে যা বলছে পুলিশ:
টাকা লেনদেনের বিষয়ে সেলের ভিতর ডিউটিরত এএসআই আলমঙ্গীর হোসেনের মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসামিদের সাথে দেখা করার জন্য আমরা কোন টাকা নেই না। এসব অভিযোগ মিথ্যা। আমাদের সামনে টাকা নিয়েছেন এছাড়া ভুক্তভোগীদের অভিযোগও রয়েছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন- ভাই ভেতরে আসেন বসে কথা বলি, বিষয়টা সমাধা করি।

অভিযোগ অস্বীকার করে নওগাঁ কোর্টের পুলিশ পরিদর্শক এ.কে. এম নূরুল ইসলাম বলেন, বন্দীদের সাথে দেখা করতে টাকা পয়সা নেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। মানবতার খাতিরে আমরা শুকনো জাতীয় খাবার, পানি দিতে দেই। তবে প্রকাশ্য ধূমপান একেবারে নিষিদ্ধ। কোনো পুলিশ সদস্য টাকা-পয়সা কিংবা অনৈতিক কোনো কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে কিংবা কেউ অভিযোগ দিলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
নওগাঁর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাফিউল সারোয়ার বলেন, আসামির সাথে কেউ দেখা করতে আসলে পুলিশের টাকা নেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। আমার কাছে অভিযোগ আসলে আমি ব্যবস্থা নেব।
প্রতিনিধি/এসএস