images

সারাদেশ / ফুটবল

গ্রামের মেয়ে থেকে জাতীয় তারকা শান্তি মার্ডি

জেলা প্রতিনিধি

১৯ জুলাই ২০২৫, ০৬:৪৭ পিএম

সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যকার ম্যাচে রচিত হয়েছে এক গৌরবময় অধ্যায়। ব্যতিক্রমী এক ম্যাচে, যেখানে খেলা হয়েছে ভিন্ন দু’টি মাঠে, সেখানেই নজরকাড়া পারফরম্যান্সে একাই তিনটি গোল করে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেছেন শান্তি মার্ডি। তার দুর্দান্ত নৈপুণ্যে বাংলাদেশ পেয়েছে ৪-১ গোলের বিশাল জয়।

দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ পলাশবাড়ী গ্রামের আদিবাসী পরিবারের মেয়ে শান্তি মার্ডির এই কৃতিত্বে আনন্দে মেতে উঠেছে পুরো দেশ। গ্রামের মেঠোপথ পেরিয়ে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়ানো শান্তির এই অর্জন শুধু একটি ফুটবল ম্যাচের জয় নয়, এটি এক সংগ্রামী জীবনের সাফল্যের প্রতিচ্ছবি।

আরও পড়ুন

ভুটানকে ৩-০ গোলে হারিয়ে টানা চতুর্থ জয় বাংলাদেশের

শান্তির হ্যাটট্রিক শুধু বাংলাদেশ দলকে বাড়তি আত্মবিশ্বাসই দেয়নি, বরং দেশের নারী ফুটবল ইতিহাসে যুক্ত করেছে নতুন এক উজ্জ্বল অধ্যায়। আর এই ঐতিহাসিক সাফল্যে যেমন উচ্ছ্বসিত সমগ্র লাল-সবুজ শিবির, তেমনি উৎসবে মাতোয়ারা দক্ষিণ পলাশবাড়ীর মানুষ—যাদের হৃদয়ের মণিকোঠায় এখন শুধু এক নাম, শান্তি মার্ডি।

শান্তি মার্ডি দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ পলাশবাড়ী গ্রামের সাঁওতাল পরিবারের মেয়ে। বাবা বাবু লাল মার্ডি একজন কৃষক। মা সুকুমনি মুরমু গৃহিণী। চার ভাই-বোনের মধ্যে শান্তি দ্বিতীয়। বর্তমানে সে দক্ষিণ পলাশবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী।

thumbnail_Dinajpur_-2

ছোটবেলা থেকেই ফুটবলের প্রতি ছিল শান্তি মার্ডির অসম্ভব ভালোবাসা। গ্রামের কাঁচা মাঠেই শুরু হয় তার স্বপ্ন পূরণের যাত্রা। একাগ্র চেষ্টায় উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের খেলায় নিজের প্রতিভার ছাপ রাখেন তিনি। ২০১৭ সালে স্থানীয় ক্রীড়া সংগঠক ও স্কুল শিক্ষকদের অনুপ্রেরণায় আন্তঃপ্রাথমিক নারী ফুটবলে অংশ নিয়ে উপজেলা চ্যাম্পিয়ন হন শান্তি। সেই অর্জনই হয়ে ওঠে তার ফুটবল ক্যারিয়ারের প্রথম বড় সাফল্য। এরপর বোদা ফুটবল একাডেমির পরিচালক মোফাজ্জল হোসেন বিপুলের নিবিড় প্রশিক্ষণে নতুন ছন্দে এগিয়ে যেতে শুরু করে তার ফুটবল জীবন।

শান্তি মার্ডির বাবা বাবু লাল মার্ডি বলেন, আমার মেয়ে দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে—এটাই আমাদের পরিবারের সবচেয়ে বড় গর্ব ও প্রাপ্তি। ও যেন ভবিষ্যতেও দেশের সম্মান আরও বাড়াতে পারে, সেই প্রার্থনা করছি সবার কাছে।

আরও পড়ুন

এবার ভুটানকে গোল বন্যায় ভাসালো বাংলাদেশের মেয়েরা

মোহনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহিনুর রহমান চৌধুরী (শাহিন) বলেন, শান্তি শুধু আমাদের এলাকার নয়, দেশের গর্ব। সীমাহীন প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তার উত্থান সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক। শান্তি প্রমাণ করেছে, ইচ্ছাশক্তি আর পরিশ্রম থাকলে যেকোনো মেয়েই সাফল্যের শিখরে পৌঁছাতে পারে। আমরা তার আরও বড় সফলতা কামনা করি এবং দেশবাসীর কাছে তার জন্য দোয়া চাই।

প্রতিনিধি/এসএস