জেলা প্রতিনিধি
১৭ জুলাই ২০২৫, ০৯:৫০ পিএম
সংস্কার অভাবে জরাজীর্ণ মাছুয়া বাজার নিয়ে দুর্ভোগে জয়পুরহাট শহরবাসী। বাজারের তরকারি ও ষ্টেশনারী সামগ্রী বিক্রির পাকা ভবন অনেক আগে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় খসে পড়ছে পলেস্তারা। ছাদ এবং দেওয়ালের রডও বেরিয়ে এসেছে। আর এর মধ্যেই ঝুঁকি নিয়ে বাজার-সদাই করছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। মাছ কেনা-বেচার টিনশেডগুলোও জরাজীর্ণ। ড্রেনেজ ব্যবস্থা অকেজো হওয়ায় বৃষ্টি হলেই ডুবে যায় পুরো বাজার। এমন পরিস্থিতিতে শীঘ্রই ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস পৌর প্রশাসকের।
শহরবাসীর নিত্যপ্রয়োজনীয় কেনা-বেচার সুবিধার্থে জয়পুরহাট পৌরসভার পাশেই স্থাপিত এই মাছুয়া বাজার ১৯৯৪ সালে আধুনিকায়ন করা হয়। মাছ-মাংস, হাঁস-মুরগি, ষ্টেশনারী ও তরকারিসহ যাবতীয় পণ্য বিক্রির জন্য নির্মাণ করা হয় পাকা ভবনসহ কয়েকটি টিনের পাকা শেড। পুরো বাজারের মেঝেসহ পানি নিষ্কাশনে ড্রেনেজ ব্যবস্থাও পাকা করা হয়। দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে বর্তমানে বাজারের পাকা ভবন ও টিনশেডগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। খসে পড়ছে পলেস্তারা। ছাদ, দেওয়াল ও শেডের রড বের গেছে। বিভিন্ন অংশে ফাটল ধরেছে। টিনগুলো জং ধরে পুরো শেড হয়ে পড়েছে জরাজীর্ণ। সংস্কার অভাবে ড্রেনে ময়লা জমে বন্ধ হয়ে গেছে পানি নিষ্কাশনের পথ। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই বাজারের গলিগুলোতে পানি জমে থাকে। ফলে দুর্ভোগে পড়েন বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতারা।
শহরের আমতলী এলাকার ক্রেতা মাসুদ রানা বলেন, ‘এই বাজারটি দীর্ঘদিন থেকে এমন বেহাল দশা হয়ে আছে। সুস্থ কোনো মানুষ এখানে আসতে পারবে না। এখানে আসতে গেলে নাকে যেমন গন্ধ লাগে, তেমন দাঁড়ানোর মতো জায়গা পাওয়া যায়না। পানির জন্য কাপড় হাঁটুর উপরে তুলে যাতায়াত করতে হয়। আবার বাসায় গিয়ে গোসল করতে হয়।’

শান্তিনগর এলাকার সোনিয়া বেগম বলেন, ‘পৌরসভার পাশেই এই বাজারটি অবস্থিত। অথচ এর কোনো সংস্কার করা হয়না। মার্কেটের যে অবস্থা যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। আবার নোংরা কাঁদা-পানি গায়ে পড়ছে। এজন্য বাজারটি দ্রুত সংস্কার করা দরকার।’
বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল হাকিম বলেন, ‘৩০ বছরের বেশি সময় আগে এই বাজারটি নির্মাণ করা হয়েছিল। এরপর থেকে এখানে আর কর্তৃপক্ষের কোনো নজর নাই। ভবনের অবস্থা বর্তমান খুব খারাপ। কখন যে দুর্ঘটনা ঘটবে তা বলা যাচ্ছেনা। আমাদের ভাড়া ছিল তার তিনগুণ বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু মার্কেটের কাজ হচ্ছেনা।’
মিঠুন নামে এক দোকানি বলেন, ‘বাজারে বেহাল অবস্থার কারণে সব ক্রেতা আসতে চায়না। ড্রেনে দুর্গন্ধ হয়ে গেছে। এখানে পানি, ওখানে কাদা। তাহলে ক্রেতা আসবে কেমন করে। আগে কয়েকবার তারিখ দিয়েছে বাজারটা সংস্কার করে দেবে, কিন্তু কোনোই নাম নাই। পৌরসভা কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছেনা। তাহলে কীভাবে ব্যবসা করব?’

হাবিবুর রহমান নামে এক দোকানি বলেন, ‘কাঁদার মধ্যে ক্রেতারা আসতে চায় না? বিশেষ করে অফিসাররা আসতে চায় না। আমরা এতো কষ্টের মধ্যে আছি। জিনিস নিয়ে বসে থাকি, কিন্তু বেচা-বিক্রি নাই। এই কথাগুলো কাকে বলব, বলে তো লাভ হচ্ছেনা।’
মাছুয়া বাজার কমিটির সভাপতি ইব্রাহীম হোসেন বলেন, ‘পৌরসভা থেকে দোকান ভাড়া তিনগুণ বাড়ানো হয়েছে। আমরা সেই ভাড়াই দিচ্ছি। কিন্তু ৩০ বছর ধরে এই মার্কেটের কোনো সংস্কার কাজ হয়নি। এজন্য পৌর কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করছি মার্কেটটি দ্রুত সংস্কার করা হোক।’
জয়পুরহাট পৌরসভার প্রশাসক সবুর আলী বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে বাজারটি সংস্কার না হওয়ায় মানুষের দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে এই বাজার সংস্কারে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি। দ্রুতই ঠিকাদারের সাথে চুক্তি করে কাজ শুরু করা হবে।’
প্রতিনিধি/এমএইচটি