জেলা প্রতিনিধি
২১ জুন ২০২২, ০৯:৫৯ পিএম
ছোট ছোট গাছে ঝুলে আছে লালচে আম। অকালে লালচে হওয়া এ আম দেখতে ছুটে আসছেন অনেকে। চোখে-মুখে বিস্ময়, কৌতুহলের শেষ নেই তাদের।
বলছিলাম, রফিকুল ইসলামের বৈশাখী নাসারির কথা। বগুড়ার শেরপুর উপজেলার মহিপুর বুড়িতলা পাড়া গ্রামের নার্সারি এটি।
২৫ বছর আগে রফিকুল ইসলাম শখের বসে নার্সারি ব্যবসায় নামেন। বর্তমানে ১৩ একর জায়গায় তিনি নার্সারি গড়ে তুলেছেন। তিনি চান নতুন কিছু চাষ করতে। নতুন কোনো জাতের সন্ধান পেলেই সংগ্রহ করতে ছুটে যান তিনি। জাত সংগ্রহ করেই ক্ষান্ত হন না তিনি, বগুড়ার পল্লী উন্নয়ন একাডেমির গবেষক দলকে সঙ্গে নিয়ে অংশগ্রহণমূলক গবেষণায় যুক্ত থেকে কাজ করেন সব সময়।
তিনি এ একাডেমির একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা। পল্লী উন্নয়ন একাডেমির সঙ্গে যেন তার নাড়ির টান। সেখান থেকেই তিনি প্রথম প্রশিক্ষণ নেন।
প্রশিক্ষণের পর, ২০১৭ সালে তিনি কিং অব চাকাপাত আমের চারা নিয়ে আসেন ঢাকার সাভারের একটি নার্সারি থেকে। প্রথমে ৪টি চারা নিয়ে আসেন। সেই চারাগুলো থেকে সায়ন সংগ্রহ করে গ্রাফটিং করে আরও চারা তৈরি করেন তিনি। সেই চারাগুলো গাছে পরিণত হয়, গাছ থেকে ক্রমান্বয়ে আমের মুকুল, ফল আসে। এর গুণগতমান পরীক্ষা করতে থাকেন তিনি।
রফিকুল জানান, ২-৩ বছর বয়সী একটি আম গাছ থেকে ৮-১০ টি করে আম পান তিনি। এক-একটি আমের ওজন ১ কেজির মতো হয়। এরকম ১০টি গাছ থেকে তিনি ৮৬ কেজির মতো আম পান। আমের রঙ কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকলেও আম পাকার আগে পুরোপুরি লাল বর্ণ ধারণ করে।
মানুষকে অন্য আমের তুলনায় এ আম বেশি আকৃষ্ট করবে বলে তিনি ধারণা করেন।
একেকটি আম ৮০০-৯০০ গ্রামের ওপরে হয়ে থাকে। তবে আমের ওজন নির্ভর করে গাছের বয়স ও একটি গাছে কতটি আম ধরেছে তার ওপর।
তিনি জানান, দেখতে আকর্ষণীয় হওয়ায় এবং অসময়ে এই আম পাওয়া যায় বলে এই আমের দামও ভালো পাওয়া যায়। এই আম পাকতে শুরু করে জুলাই মাসের মাঝের দিকে। এক কেজি আমের মূল্য ২০০-৩০০ টাকার মত। আর এই আমের চারার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সাইজ ও বয়স অনুযায়ী চারা বিক্রি করেন তিনি ২০০-২৫০ টাকায়। দেশের বিভিন্ন জেলার নার্সারি ব্যবসায়ীরা তার কাছ থেকে এই চারা নিয়ে যান।
রফিকুল ইসলাম জানান, তাকে সার্বিক সহযোগিতা করছে বগুড়ার পল্লী উন্নয়ন একাডেমি। তিনি সেখান থেকে বিভিন্ন রকম পরামর্শ পেয়ে থাকেন।
পল্লী উন্নয়ন একাডেমির মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) খলিল আহমদ বলেন, দেশে শিক্ষিত বেকার ছেলে মেয়েরা যাতে স্মার্ট কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠত হতে পারে, পাশাপাশি এসব আমের রফতানি বাজারে সম্প্রসারিত হয় সেজন্য কাজ করে যাচ্ছে পল্লী উন্নয়ন একাডেমি।
একাডেমির উপ-পরিচালক জনাব মোছা. রেবেকা সুলতানা বলেন, আমরা ইতোমধ্যে বিদেশি ১৫টি বিভিন্ন জাতের আমসহ কিং অব চাকাপাত আম নিয়ে গত দুই বছর ধরে গবেষণা শুরু করেছি। আমাদের গবেষণার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশে, স্মার্ট কৃষি উদ্যোক্তা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিদেশি জাতের আম চাষের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পাশাপাশি চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়া।
তিনি বলেন, আমরা সফলতার আশা দেখতে পাচ্ছি। এই আম বাণিজ্যিকভাবে চাষ হলে এই অঞ্চলের কৃষি উদ্যোক্তার লাভবান হবে। তবে চাষের আগে অবশ্যই চাষ সম্পর্কিত খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে প্রশিক্ষণ নেওয়া বা অভিজ্ঞতা অর্জন প্রয়োজন।
প্রতিনিধি/এইচই/এএ