images

সারাদেশ / শিক্ষা

ইবিতে সাংবাদিক মারধর: ২২ ঘণ্টা পর ফোনের সন্ধান মিললেও তথ্য উধাও!

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

১৩ জুলাই ২০২৫, ০৬:৩২ পিএম

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) অর্থনীতি বিভাগের দুই পক্ষের মারামারির সংবাদ সংগ্রহে বাধা, ফোন কেড়ে নিয়ে সাংবাদিকদের কিল-ঘুষি, চড়-থাপ্পড় ও তলপেটে লাথিসহ অভিযোগ উঠেছে বিভাগের একাংশ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে।

রোববার (১৩ জুলাই) ১০টার দিকে মারধরের বিচার ও নিরাপত্তা চেয়ে প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী তিন সাংবাদিক। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্র ইউনিয়ন ও খেলাফত ছাত্র মজলিশ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জমিয়তে তালাবা নিন্দা ও বিচার দাবি জানিয়ে সংবাদ বিবৃতি দিয়েছে।

এছাড়াও এ ঘটনার বিচার দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিকেশন অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়টি নিয়ে ছাত্রীকে (তিনা) মারার অভিযোগ তুলে ইস্যু তৈরি করে বিষয়টিকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রের দায়িত্বরত ডাক্তার জানান, তার শরীরে কোনো আঘাতের আলামত পাওয়া যায়নি, তার প্যানিক অ্যাটাক হয়েছিল।

isu2-20230504084331

উক্ত ঘটনার ভুক্তভোগীরা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০২১-২২ বর্ষের শিক্ষার্থী ও জাতীয় দৈনিক আমাদের বার্তার ক্যাম্পাস প্রতিনিধি আরিফ বিল্লাহ এবং একই বিভাগের একই বর্ষের শিক্ষার্থী ও জাতীয় দৈনিক আজকালের খবরের ক্যাম্পাস প্রতিনিধি রবিউল আলম এবং একই বর্ষের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ও বার্তা২৪ ক্যাম্পাস প্রতিনিধি নূর ই আলম।

অভিযুক্তরা হলেন, অর্থনীতি বিভাগের ২০২০-২১ বর্ষের আফসানা পারভীন তিনা, নাহিদ, মিনহাজ, সৌরভ দত্ত, রিয়াজ মোর্শেদ, সৌরভ, সোহাগ, সাব্বির, পান্না ও একই বিভাগের ২০২২-২৩ বর্ষের অজিল, সাইফুল, মশিউর রহমান ও হৃদয়সহ ৮/১০ জন।

ভুক্তভোগী সাংবাদিক আরিফ বিল্লাহ জানান, ফুটবল মাঠে অর্থনীতি বিভাগের ২০২০-২১ বনাম ২০২২-২৩ বর্ষের শিক্ষার্থীদের ফুটবল খেলার এক পর্যায়ে দুই পক্ষের মারামারি চলাকালে সংবাদ সংগ্রহ করতে আমি মোবাইল নিয়ে ভিডিও করা শুরু করি। তৎক্ষণাৎ অর্থনীতি বিভাগের ২০২০-২১ বর্ষের আফসানা পারভীন তিনা আমার হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নেয়। আমি মোবাইল কেড়ে নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে একই বিভাগের ২০২০-২১ বর্ষের নাহিদ, মিনহাজ, সৌরভ দত্ত, সাব্বির, রিয়াজ মোর্শেদ, সৌরভ সোহাগ, পান্না ও একই বিভাগের ২০২২-২৩ বর্ষের অজিল, সাইফুল, মশিউর রহমান ও হৃদয়সহ আরও ৮/১০ জন শিক্ষার্থী আমাকে ঘিরে ধরে চড়, থাপ্পড়, ঘুসি মারতে থাকে। পরে সাংবাদিক নূর ই আলম এসে মারধরের ভিডিও করলে তাকেও ১০/১৫ জন শিক্ষার্থী মারধর করে। এসময় সমন্বয়কসহ অন্যান্য সাংবাদিক উদ্ধার করতে আসলে ফের মারধর করে। এছাড়া সাংবাদিক রবিউল ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর তাকে তলপেটে লাথি মেরে মাটিতে ফেলে দেয়। ওরা আমার ফোন কেড়ে নিয়েছে।

পরে অর্থনীতি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. পার্থ সারথি লস্করের কাছে শিক্ষার্থীরা ফোনটি জমা দেন। পরবর্তীতে প্রক্টর কাছে সভাপতি ফোনটি জমা দেন। তবে দীর্ঘ ২২ ঘণ্টা পর সাংবাদিক আরিফ বিল্লাহ প্রক্টর থেকে ফোনটি সংগ্রহ করতে গেলে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উধাওয়ের অভিযোগ তুলে তা গ্রহণ করেননি।

4801

রিসেট দিয়ে মোবাইলের সব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উধাও করার অভিযোগ তোলে সাংবাদিক আরিফ বিল্লাহর বলেন, আমার ফোনে প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য ছিল। প্রক্টর স্যার থেকে মোবাইল নিতে গিয়ে দেখি মোবাইলের সব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উধাও। আমি মনে করি যারা আমার ফোন কেড়ে নিয়েছে তারা অপরাধ ধামাচাপা দেওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য লুকাতে মোবাইল রিসেট দিয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ইশতিয়াক ফেরদৌস ইমন বলেন, আমি হট্টগোলের আওয়াজ শুনে মাঠের দিকে এগিয়ে যাই। গিয়ে দেখি কয়েকজন মিলে একজন সাংবাদিককে মারধর করছে। তার পাশে আরেক সাংবাদিক ভিডিও করতে গেলে তাকেও ভিডিও বন্ধ করতে বলা হয়। ভিডিও বন্ধ না করায় তাকে এসে লাথি মারে। এ ছাড়া প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তিনাকে কখনও মারধর করার ঘটনা ঘটেনি। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে মিথ্যা তথ্য সাজানোর নাটক করা হয়েছে। ঘটনাটির ভিডিও বিশ্লেষণ করলেই সব সত্য উদ্‌ঘাটন হবে।

ভুক্তভোগী নূর ই আলম বলেন, অর্থনীতি বিভাগের দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হলে সাংবাদিক আরিফ তথ্য সংগ্রহের জন্য মোবাইলে ভিডিও করতে গেলে একজন মোবাইল কেড়ে নেয় ও তাকে কয়েকজন শিক্ষার্থী ঘিরে কিল, ঘুসি মারে। তৎক্ষণাৎ আমি মোবাইল দিয়ে ভিডিও অন করে ঘটনাস্থলে গেলে আমাকেও মারধর করে। এসময় অর্থনীতি বিভাগের ২০২০-২১ বর্ষের মিনহাজ ও একই ২০২২-২৩ বর্ষের অজিল, সাইফুল, মশিউর রহমান ও হৃদয়সহ ১০/১৫ জন আমাকে কিল, ঘুসি ও ঘাড়ে আঘাত করে। এসময় সমন্বয়ক সুইট ও রব্বানী ভাই হামলা থেকে উদ্ধার করে।

আরও পড়ুন

ইবিতে খেলাকে কেন্দ্র করে মারামারি, ভিডিও করায় সাংবাদিকদের মারধর

ভুক্তভোগী সাংবাদিক রবিউল জানান, আমি বিকেল ৫টার সময় অফিসে অবস্থান করছিলাম। সাংবাদিক আরিফ বিল্লাহ ওপর হামলার বিষয়টি জানতে পেরে সেখানে গেলে দেখি আরিফ বিল্লাহকে তারা ঘিরে রেখেছে। ওই সময় ভিডিও ধারণের প্রস্তুতি নিতে থাকলে কয়েকজন এসে মোবাইল কেড়ে নেওয়ার জন্য উদ্যত হয়। আমি বলেছিলাম ‘আমি সাংবাদিক এভাবে আপনারা চার্জ করতে পারেন না।’ তখন কয়েকজন ‘তার মোবাইল কেড়ে নে, ওরে ধর, ভিডিও থাকলে ডিলিট দে’ বলে চারদিক থেকে এলোপাথাড়ি কিল ঘুসি মারে। বিশেষ করে অর্থনীতি বিভাগের ২০২০-২১ বর্ষের নাহিদ হাসান আমার তলপেটে লাথি মারলে আমি মাটিতে পড়ে যাই। এসময় সমন্বয়ক সুইট, রব্বানী ভাইসহ কয়েকজন আমাকে উদ্ধার করে।

সাংবাদিক রবিউল আরও জানান, এর আগে গত ২০ এপ্রিল একটি সংবাদ প্রকাশের জেরে আমাকে দেখে নেওয়ার হুমকিও দিয়েছিলেন নাহিদ হাসান।

এ বিষয়ে অভিযুক্তদের মধ্যে অর্থনীতি বিভাগের ২০২০-২১ বর্ষের নাহিদ ইসলাম সাংবাদিককে তলপেটে লাথি মারার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমি কোনো সাংবাদিককে মারিনি। বরং আমাকে কোনো এক সাংবাদিক বুকে আঘাত করছে। বুকের ব্যথায় এখন কথা বলতে পারছি না।

image-7823

এ বিষয়ে অভিযুক্ত আফসানা পারভীন তিনা বলেন, বিভাগের স্যাররা বিষয়টি সমাধান করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। তাই এ-ব্যাপারে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।

এ বিষয়ে ইবি প্রেস ক্লাবের সভাপতি মুনজুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, সংবাদ সংগ্রহকালে সাংবাদিকের মোবাইল কেড়ে নেওয়া ও মারধর কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার মতো নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় এমন ঘটনা লজ্জাজনক। এটি গণমাধ্যমকর্মীদের পেশাগত কাজে বাধা দেওয়ার পাশাপাশি ফৌজদারি অপরাধও। আমরা প্রশাসনের কাছে এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ ও ক্যাম্পাসে মুক্ত গণমাধ্যম চর্চার পরিবেশ নিশ্চিতের দাবি জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান বলেন, অভিযোগপত্র হাতে পেয়েছি। আমরা প্রক্টরিয়াল বডি শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনায় বসব। পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানো হবে। এছাড়াও তিনি জানান, বিভাগের শিক্ষকরা আমাদের কাছে ফোন জমা দেন। পরে ভুক্তভোগী সাংবাদিককে ফোন ফেরত দিয়েছি। কিন্তু অফিসেই সে ফোন চালু করলে দেখা যায় ফোনে কোনো তথ্য ছিল না। পরবর্তীতে সে আমাদের নিকট ফোন রেখে যায়।

প্রতিনিধি/এসএস