images

সারাদেশ

পঞ্চগড়ে বেড়েছে গরুর লাম্পি স্কিন রোগ, দিশেহারা ক্ষুদ্র খামারিরা

জেলা প্রতিনিধি

১১ জুলাই ২০২৫, ১১:০৩ এএম

দেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় গরুর লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি)-এর ব্যাপক প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। বিগত এক মাস ধরে এ উপজেলায় লাম্পি রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেক গরু মারা গেছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ দফতরে পর্যাপ্ত ওষুধ না থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন খামারি ও কৃষকেরা। তাঁরা দ্রুত সরকারি ওষুধ ও ভ্যাকসিন সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন।

জানা গেছে, চলতি বছরের জুন মাসে তেঁতুলিয়া উপজেলায় গরুর লাম্পি স্কিন ডিজিজ দেখা দেয়। মশা-মাছি বাহিত এই রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে উপজেলার সর্বত্র। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে কয়েক হাজার গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তবে এ রোগের কোনো কার্যকর ভ্যাকসিন এখনো উৎপাদন হয়নি, পাশাপাশি ওষুধেরও সংকট রয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত খামারিরা জানান, গরুর শরীরে প্রথমে গুটি উঠে, এরপর প্রচণ্ড জ্বর হয়। এক পর্যায়ে গুটিগুলো ফেটে রক্ত ও পুঁজ বের হয়, এবং অবশেষে গরুটি মারা যায়। প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে ব্যবস্থাপত্র মিললেও প্রয়োজনীয় ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না, ফলে বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে হচ্ছে। কৃষকেরা দ্রুত সরকারিভাবে পর্যাপ্ত ওষুধ ও ভ্যাকসিন সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন।

তেঁতুলিয়া সদর ইউনিয়নের কালারামজোত গ্রামের কৃষক আরিফুল ইসলাম জানান, তার দুটি গরুর মধ্যে একটি এলএসডিতে মারা গেছে, আরেকটি গরুর চিকিৎসা চলছে। দামি গরুটি হারিয়ে তিনি বিপাকে পড়েছেন। চিকিৎসা করাতে ৫-৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে বলেও জানান তিনি।

একই এলাকার গৃহিণী হাসনা বেগম বলেন, ‘গরুর অসুখ হয়েছে, কিন্তু ডাক্তার তো ঠিকমতো আসতে পারেন না। ওষুধ খাওয়াচ্ছি, কিন্তু তেমন কোনো কাজ দিচ্ছে না। গ্রামে কোনো সহায়তা পাওয়া যায় না। পাশের বাড়ির একটি গরু মারা গেছে, সামনে বাড়িরটাও মরে যাচ্ছে। গুটি গুটি করে উঠে, পরে ওই জায়গায় পচন ধরে, তারপর কিছুদিনের মধ্যে মারা যায়।’

মমিনপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘আমার একটি ছোট গরু ১৫ দিন ধরে এ রোগে আক্রান্ত। চিকিৎসা করালেও কোনো উন্নতি হয়নি। অনেক কষ্টে চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছি।’

খামারি মোজাফফর হোসেন জানান, ‘বর্তমানে আমার একটি গরু লাম্পি রোগে আক্রান্ত। প্রাণিসম্পদ অফিসে গিয়ে চিকিৎসা নিয়েছি, কিন্তু ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে।’

cow

উপজেলা প্রাণিসম্পদ দফতরের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মো. নাজমুল হোসেন বলেন, ‘বর্ষাকালে সাধারণত দুটি রোগ বেশি ছড়ায়—একটি ক্ষুরারোগ এবং আরেকটি লাম্পি স্কিন ডিজিজ। লাম্পি রোগটি সাধারণত মশা-মাছি ও অন্যান্য কীটপতঙ্গের মাধ্যমে ছড়ায়। এ রোগ থেকে গবাদিপশুকে মুক্ত রাখার জন্য আমরা খামারিদের সচেতন করছি, উঠান বৈঠক, লিফলেট বিতরণ, ভ্যাকসিনেশন ও ভেটেরিনারি মেডিকেল ক্যাম্পেইন পরিচালনা করছি। আমরা আশা করছি, অল্প সময়ের মধ্যেই রোগের প্রকোপ কমে আসবে। খামারিরা তাদের গবাদিপশুতে রোগের উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত উপজেলা প্রাণিসম্পদ দফতরে যোগাযোগ করবেন। আমরা সবসময় সেবা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত।’

প্রতিনিধি/একেবি