বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
০২ জুলাই ২০২৫, ০৯:১৫ পিএম
যৌন হয়রানিসহ নানা অভিযোগ উঠেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আজিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে বুধবার (২ জুলাই) ভিসি বরাবর অন্তত দুই শতাধিক শিক্ষার্থীর স্বাক্ষরিত অভিযোগ প্রদান করে বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, বিভাগের প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মেলায় তাকে বিভাগের সব কার্যক্রম থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়। এরপর থেকেই অভিযুক্ত শিক্ষককে বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন বিভাগটির কয়েকজন শিক্ষক। ঘটনা ধামাচাপা দিতে বিগত তিন দিনে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের নিয়ে দফায় দফায় মিটিং করেছে বিভাগের শিক্ষকরা।
ভুক্তভোগীরা জানান, অভিযুক্ত ওই শিক্ষককে বাঁচাতে ভুক্তভোগীদের চাপ দিচ্ছেন বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. এ. কে. এম নাজমুল হুদা ও বিভাগের জ্যৈষ্ঠ প্রফেসর ড. আনোয়ারুল হক স্বপন।
মঙ্গলবার বিভাগের সভাপতি ভুক্তভোগী ছাত্রীদের নিয়ে আলোচনা করে বিষয়টি বিভাগের বাইরে না জানানোর অনুরোধ করেন। পরে ড. আনোয়ারুল হক আবারও তাদেরকে নিয়ে ম্যানেজ করতে আলোচনায় বসেন। এ সময় তিনি ভুক্তভোগীদের দুপুরের খাবারের জন্য পনেরো হাজার টাকা দেন। কিন্তু ছাত্রীরা তা নিতে অস্বীকৃতি জানান। পরে বুধবার ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা ওই শিক্ষকের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে ভিসির কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়।
আরেক ছাত্রী রিতাশা বিশ্বাস বলেন, আজিজ স্যার আমাকে মেসেঞ্জারে ফোন দিতেন। উদ্দেশ্য খারাপ হওয়ায় আমি তাকে আনফ্রেন্ড করে দিই। পরে ক্লাসে সবার সামনে আমাকে আজেবাজে কথা বলতেন এবং তার কোর্সে ফেল করানোর হুমকি দিতেন। বিভাগের প্রথম আমিই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু স্যাররা বিষয়টা সমাধান করে দিলেও তিনি আমার সঙ্গে একই আচরণ করে আসছিলেন। পরে ভয়ে আমি আর কোনো কথা বলিনি
ভুক্তভোগী ছাত্রী মারিয়া কবির বলেন, স্যার (আজিজ) আমাকে রিকেট পরীক্ষার আগের দিন তার রুমে ডেকে বলেন, তোমার ফিগার ভালো, শাড়ি পরলে ভালো লাগবে।’ তিনি আমাকে তার কথার মাধ্যমে বুঝালেন, সম্পর্ক ভালো রাখলে রেজাল্ট ভালো হবে। পরে তাকে স্পেস না দেওয়ায় আমার পরবর্তী সেমস্টিার হতে রেজাল্ট খারাপ হতে থাকে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভুক্তভোগী আরেক ছাত্রী বলেন, ওই শিক্ষকের দ্বারা হেনস্তার শিকার ছাত্রীদের অনেকেই বিবাহিত হওয়ায় তারা তাদের পরিবারের কথা ভেবে এতোদিন মুখ খোলেননি। কেউ কেউ তার যন্ত্রণায় সুইসাইডাল অ্যাটেম্প নিতে চেয়েছিল। সাময়িক অব্যাহতি কোনো সমাধান নয়। আমরা তার স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানাই।
বিভাগটির শিক্ষার্থী ফুয়াদ হাসান বলেন, আজিজুল ইসলামের কাছে বিভাগের প্রত্যেকটা শিক্ষার্থী যৌনসহ নানা হয়রানির শিকার। ক্লাসে একটা ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে রেখেছেন তিনি। মেয়েদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তা, বিদ্রুপ ও মার্কস কমিয়ে দেওয়ার হুমকি দিতেন। এতদিন ভয়ে কেউ কিছু না বললেও এখন সবাই বলছে। মৌখিকভাবে স্যারকে ডিপার্টমেন্টের কার্যক্রম থেকে স্থগিত রাখা হয়েছে। তবে আমরা তার স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানালে কয়েকজন শিক্ষক অনুরোধ করেন আজিজ স্যারকে যেন একবার শুধরানো সুযোগ দেওয়া হয়। তবে শিক্ষার্থীরা তার বহিষ্কার ও আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন।
এদিকে শিক্ষার্থীদের ম্যানেজের বিষয়টি অস্বীকার করে বিভাগের জ্যৈষ্ঠ প্রফেসর ড. আনোয়ারুল হক স্বপন জানান, বিভাগের সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে আমি তাদেরকে নিয়ে বসেছিলাম। ঘটনা গোপন রাখা বা শিক্ষার্থীদের টাকা দেওয়ার বিষয়টি পুরোপরি মিথ্যা। তবে তাদেরকে নিয়ে আমি লাঞ্চ করতে চেয়েছিলাম। আমিও ওই শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. এ. কে. এম নাজমুল হুদা বলেন, ওই শিক্ষককে বাঁচানোর আমরা কেউ না! এই বিষয়ে বিভাগ থেকে যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার তা আমরা নিয়েছি। বাকিটা সুপ্রিম অথরিটি দেখবে।
ভিসি প্রফেসর ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, শিক্ষার্থীদের অভিযোগ আমলে নিয়েছি। পদ্ধতিগতভাবে আমরা তদন্ত কমিটি করব। তদন্তের প্রেক্ষিতে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরে ওই শিক্ষক বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের ছাত্রীদের সঙ্গে কুরুচিপূর্ণ আচরণ করে আসছিলেন। তবে এতোদিন কেউ মুখ খোলার সাহস করেননি। পরে ভুক্তভোগী ছাত্রীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে গত ঈদুল আজহার ছুটি শেষে ক্যাম্পাস খোলার দ্বিতীয় দিন (২২ জুন) বিভাগের সভাপতি বরাবর তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। এর প্রেক্ষিতে বিভাগের সব কার্যক্রম থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য তাকে বিরত রেখেছে বিভাগটি।
প্রতিনিধি/এসএস