images

সারাদেশ

বই দেখে পরীক্ষা দেওয়াতেই অভ্যস্ত যে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা!

জেলা প্রতিনিধি

২৮ জুন ২০২৫, ০৮:৩৩ পিএম

ক্লাস করার নাম নেই শিক্ষকদের। বই দেখে পরীক্ষা দেওয়াতেই অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন শিক্ষার্থীরা। আরও আছে নানা অনিয়মের অভিযোগ। সেকারণে দেশের ৪৯টি নার্সিং ইনস্টিটিউট ও কলেজের মধ্যে ব্যতিক্রম হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নার্সিং ইনস্টিটিউট।

অভিযোগ রয়েছে, ৮ জন শিক্ষকের মধ্যে অনেকেই ইন্সটিটিউটে আসেন না মাসের পর মাস। কেউ কেউ আছেন নার্সিংয়ের কয়টি বিষয় সেটিও বলতে পারার মতো সক্ষম নন। এমন শিক্ষকও আছেন রিডিংও পড়তে পারেন না। মোশাররফ হোসেন নামের একজন প্রশিক্ষক সরকারি চাকরিতে থেকেও বেসরকারি নার্সিং ইন্সটিটিউটের এমডি পদে রয়েছেন। সেটিতেই কাজকর্মে নিয়োজিত তিনি।

আরও পড়ুন

এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের যে জরুরি নির্দেশনা দিলো ঢাকা বোর্ড

নার্সিং ও মিডওয়াইফারির প্রায় ৩৫৮ জন শিক্ষার্থীর এই প্রতিষ্ঠানে একজন ইনষ্ট্রাক্টর ইনচার্জ এবং ৮ জন প্রশিক্ষক রয়েছেন। এই প্রশিক্ষকদের মধ্যে নানা অভিযোগে আলোচিত প্রশিক্ষক মোশারফ হোসেন, তার স্ত্রী প্রশিক্ষক তানজিনা খানম, মোসাম্মৎ তাহেরা বেগম ও মোহছেনা বেগম (১)। ইন্সটিটিউটে আসলেও ক্লাস করেন না তাদের কেউই। তাদের মধ্যে নার্সিং ইন্সটিটিউটে ২০১৩ সালের ২১ আগস্ট থেকে ডেপুটেশনে রয়েছেন ২৫০ শয্যার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স তানজিনা খানম ও ২০২৩ সাল থেকে মোসাম্মৎ তাহেরা বেগম। বক্ষব্যাধি হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স মোহছেনা বেগম (১) এখানে ডেপুটেশনে রয়েছেন ২০১৫ সালের ৮ জানুয়ারি থেকে। মোশারফ হোসেন ২০১৬ সালের ২ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়া নার্সিং ইন্সটিটিউটে যোগ দেন।

অভিযোগ মিলেছে প্রশিক্ষক মোশারফের নেতৃত্বে একটি চক্র এই ইনস্টিটিউটকে অনিয়মের আখড়ায় পরিণত করেছেন। সেকারণে ইনস্টিটিউটকে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় ফেরাতে গিয়ে বিপদে পড়তে হয় এক ইনস্ট্রাকটর ইনচার্জকে। সালাউদ্দিন মাতবর নামের ওই ইনষ্ট্রাক্টর ইনচার্জকে এই চক্রটি নানাভাবে হেনস্তা করে বিদায় করে। ২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি তিনি এখানে যোগদান করেন। এরপর ২০২৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর বদলি হয়ে যান। তার পরবর্তীতে ইন্সট্রাক্টর ইনচার্জ হয়ে আসা মোসাম্মৎ মিরন্নাহার বেগমও রয়েছেন আতঙ্কে।

সূত্র জানায়, নতুন কন্ট্রাক্টর ইনচার্জ পদে যোগদান করার পর তার কাছে আগের নিয়মে অর্থাৎ নকল করে পরীক্ষা দেওয়ার আবদার নিয়ে আসে ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থীরা। মিরন্নাহার তাদের আবেদনে সাড়া না দেওয়ায় বাধ্য হয় স্বাভাবিক নিয়মেই পরীক্ষা দিতে হয়। ৩য় বর্ষের পরীক্ষার্থীরা বলে আগের নিয়মে পরীক্ষা নিতে হবে। ফার্স্ট ইয়ারে অনেক পড়াশুনা করছি। স্যাররা অবজেকটিভ বলে দেয়। বই দেখে উত্তর লিখতে দেওয়া হয়। নকলমুক্ত পরীক্ষা হলেও পরীক্ষার সময় ৩০ জন করে লোক নিয়োগ দেওয়া হয় নকল সরবরাহের জন্য। বেসরকারি নার্সিং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তিতাস নার্সিং কলেজ, ইউনাইটেড নার্সিং কলেজ ও মাহবুবুর রহমান নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা কেন্দ্র এটি। ছুটির ক্ষেত্রেও নিয়মের বালাই নেই। বছরে ২৮ দিন ছুটির স্থলে ৩ মাসও কাটিয়েছে অনেকে।

আরও পড়ুন

কিউএস র‍্যাংকিং আবেদন না করায় জবি প্রশাসনের বিরুদ্ধে বাগছাসের ক্ষোভ

 শহরে মোশারফের বহুতল বাড়ির একটি ফ্ল্যাটে ভাড়ায় থাকে ছাত্ররা। সেকারণে তাদেরকে ব্যবহার করে নার্সিং ইন্সটিটিউটে বিভিন্ন পরিস্থিতি সৃষ্টি করার অভিযোগ রয়েছে। বর্তমান ইনষ্ট্রাক্টর ইনচার্জ মোসাম্মৎ মিরন্নাহার বেগম এখানে যোগদান করার পর এ বছরের ১৬ জানুয়ারি এবং ২২ জুন দু’টি অফিস আদেশ করেন। যাতে নার্সিং ইনষ্ট্রাক্টরদের অফিস সময় সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত অফিসে উপস্থিত থেকে রুটিন অনুযায়ী ক্লাস, ল্যাব এবং হাসপাতালে শিক্ষার্থীদের ক্লিনিক্যাল প্র্যাকটিস পরিদর্শনসহ অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে বলা হয়।

নার্সিং প্রশিক্ষক মোশারফ হোসেন তার বিরুদ্ধে অভিযোগকে মিথ্যা ও বানোয়াট বলে দাবি করেন। অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, এটি আমি প্রতিষ্ঠা করেছি। এর সাথে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করব না। ব্রাহ্মণবাড়িয়া নাসিং ইনস্টিটিউট ইনষ্ট্রাকটর ইনচার্জ মোসাম্মৎ মিরন্নাহার বেগম বলেন, অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে দীর্ঘদিন ধরেই অনিয়ম চলছে এখানে। অনিয়মকেই এখানে নিয়ম বানানো হয়েছে। শিক্ষকরা ক্লাসে আগ্রহী নন। অনিয়মগুলো কীভাবে দূর করা যায় তা নিয়ে শিক্ষকদের একাধিক বার বৈঠক করি। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের ক্লাসে পাঠাতে পারিনি।

প্রতিনিধি/এসএস