জেলা প্রতিনিধি
২৮ জুন ২০২৫, ০৬:১৯ পিএম
আমের রাজধানী খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জে এখন আমের ভরা মৌসুম। দেশের সবচেয়ে বড় আমের বাজার হিসেবে পরিচিত কানসাট বাজার। ফলে এখানে জমে উঠেছে আমের হাট।
জানা গেছে, প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কানসাট বাজারে আমচাষি, আড়তদার, আমের ব্যাপারীদের ভিড় লেগেই থাকে। এ মৌসুমি আম ক্রেতা ও ব্যাপারীরা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কানসাটে আসছেন। ভালো দাম পেয়ে খুশি আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা।
![]()
শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট বাজার সরেজমিন ঘুরে এ চিত্র পাওয়া গেছে। চাষি পর্যায়ে এবার প্রথমদিকে বাজারে আম উঠার সময় দাম কিছুটা কম হলেও কয়েকদিন ধরে বাড়ছে দাম।
এদিকে আড়তদার ও ব্যাপারীদের কাছে অপচ্ছন্দনীয়/বেছে ফেলা পচা ও ফাটা নিম্নমানের আম সংগ্রহ করছে দেশের নামিদামি জুস কোম্পানিগুলো। এসব পচা ও ফাটা আম সংগ্রহ করছে দেশের নামি দামি জুস কোম্পানিগুলো। তারা প্রতি কেজি আম ৫ টাকা থেকে শুরু করে ২০ টাকার মধ্যে এসব আম সংগ্রহ করছে। জুস কোম্পানির আম কেনার জন্য চলতি মৌসুমে শুধুমাত্র কানসাট বাজারে অন্তত ১০টি আড়ত রয়েছে। এদিকে জুস কোম্পানির কেনা আমের দামকে অন্য আমের সঙ্গে তুলনা করে সম্প্রতি বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার করে। এ নিয়ে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে আম চাষিদের মধ্যে।
![]()
উপজেলার মুসলিমপুর-হামেদনগর এলাকা থেকে আসা রফিক আলী বলেন, আমি প্রতিদিন আশপাশের এলাকা থেকে ঝরে পড়া আম কম দামে কিনে জুসের আড়তে বিক্রি করি। দু’দিনে প্রায় ৩৫ ক্যারেট আম দিয়েছি আড়তে। কেজি প্রতি আমার ৩-৪ টাকা লাভ হয়। আমার মতো অনেকে আছে যারা ঝরে পড়া আম সংগ্রহ করে আড়তে বিক্রি করে থাকে।
কানসাট বাজারে গিয়ে কথা হয় জুস কোম্পানির জন্য আম কেনা আড়তদার মো.বাবুলের সঙ্গে। তিনি বলেন, জুস কোম্পানির জন্য ৫-২০ টাকা কেজি দরে আম কেনা হচ্ছে। এসব আম তারা নামি দামি বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিনিধিদের কাছে সরবরাহ করে থাকেন।
![]()
আরেক আম ক্রেতা মোরশালিন হক বলেন, বাজারের একেবারে না চলা পচা, ফাটা ও কিট আমগুলো কেনা হয় জুস কোম্পানির জন্য। এসব আম ৫-১৫টাকার মধ্যে কেনা হচ্ছে। তিনি বলেন, জুস কোম্পানি কোনদিনই বাজারের সেরা আম কিনে না। শুধু নামেই প্রচার করে। বাস্তবতা দেখেই বুঝতে পারবেন।
শরিফুল ইসলাম নামে এক আমচাষি বলেন, সম্প্রতি ঈদ ও ছুটির কারণে আমের বাজার কিছুটা মান্দা ছিল। তবে যতদিন যাচ্ছে ততদিন আমের বাজার চড়া হচ্ছে। তিনি দাবি করেন, কানসাটের আমকে ধ্বংস করতে পরিকল্পিতভাকে মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এতে মাঠ পর্যায়ের আম উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
![]()
আবদুস সামাদের আড়তের এক প্রতিনিধি রাজু বলেন, ল্যাংড়া, লকনা, গুটি জাতের ঝরে পড়া পাকা আম ক্রয় করে প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩০০ ক্যারেট বিভিন্ন জুস কোম্পানির কাছে বিক্রি করা হয়। জুস কোম্পানির জন্য এখানে আলাদাভাবে শ্রমিক রয়েছে। তাদের কাজ শুধু জুসের জন্য আম সরবরাহ করা।
শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজাহার আলী আম বাজার পরিদর্শন করে দাম নিয়েও সন্তুষ্টির কথা জানান। তিনি বলেন, খিরসাপাত প্রতিমন আম বিক্রি হচ্ছে ৪০০০ থেকে ৪ হাজার ৭০০ টাকা মন। ল্যাংড়া ও অন্যান্য গুটি জাতের আম বিক্রি হচ্ছে ৩০০০ থেকে ৩ হাজার ৬০০ টাকা। এছাড়া ব্যানানা আম বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৫ হাজার টাকা মণ দরে।
![]()
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পরিসংখ্যান ও কৃষি সংশ্লিষ্টদের ধারণা অনুযায়ী- চলতি মৌসুমে আমের বাণিজ্য হবে প্রায় ৪ হাজার কোটি তাকার। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৭ হাজার ৫০৪ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৮৬ হাজার টন।
প্রতিনিধি/এসএস