images

সারাদেশ

ফরিদপুরের ভাষাসৈনিকদের কথা জানে না নতুন প্রজন্ম

জেলা প্রতিনিধি

২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১০:২৫ পিএম

৭০ বছর আগে মাতৃভাষা রক্ষার জন্য লড়াই করা ফরিদপুরের ভাষাসৈনিকদের গল্প অবিস্মরণীয়। কিন্তু নেই কোনো তথ্য ও স্মৃতিচিহ্ন। সড়কের নামকরণ ও জেলার জাদুঘরে তিন-চার জনের ছবির মধ্যে আটকে আছে তাদের অবদানের ইতিহাস। 

১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজ থেকে মিছিল নিয়ে জিলা স্কুল হয়ে শহরের থানা রোডে ও জেল খানার সামনে থেকে পুলিশের লাঠিচার্জে আহত হয় কয়েকজন। আবার দুই-একজন আন্দোলনকারী ভাষাসৈনিক গ্রেফতারও হয়েছিলেন সেদিন। এমন নানা ইতিহাস শোনা গেলেও প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম হারাতে চলেছে সেই সকল ভাষাসৈনিকদের নাম-ঠিকানা আর অবদানের গল্প। তাই ভাষাসৈনিকদের ইতিহাস বাঁচিয়ে রাখার দাবি সকলের।

৫২’র সেই ভাষা আন্দোলনে শহীদ বরকতের মৃত্যুর স্বচক্ষের সাক্ষী অ্যাডভোকেট একেএম শামসুল বারী (মিয়া মোহন)। মিছিলের উপর গুলিতে বরকত যখন পেটে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ছটফট করছিলেন, তখন তিনি নিজে আহত হওয়া সত্ত্বেও কাঁধে করে বরকতকে মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান। মায়ের ভাষাকে রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদা দেবার আন্দোলন করে গেছেন জেলার এই কৃতি সন্তানরা।

উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করে মায়ের ভাষাকে মুছে দিতে চেয়েছিল পাকিস্তান সরকার। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার রাজপথের আন্দোলনে বুকের তাজা রক্ত দিয়ে রক্ষা করেছিল বাংলা ভাষা। সেই ভাষা আন্দোলনে ঢাকাসহ সারা দেশেই কমবেশি আন্দোলন সংগঠিত হয়েছিল তখন। সেসময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ফরিদপুর জেল খানায় আটক ছিলেন। এ জেলায় ভাষা আন্দোলনে বেশ কয়েকজনের অবদান রেখেছেন। এদের মধ্যে ফরিদপুরের সন্তান ডা. মোহাম্মদ জাহেদ ১৯৪৮ সালে জানুয়ারি মাসে ভাষা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। তিনি তখন ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র। ১৯৫২-৫৩ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি হিসাবে বিশ্ববিদ্যালয় সংগ্রাম পরিষদের সদস্যও ছিলেন তিনি। 

১৯৫২ সালে ঢাকা মেডিকেলের এমবিবিএস এর দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন জেলার আরেক সন্তান ডা. ননী গোপাল সাহা। ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবন প্রাঙ্গণে আমতলায় ছাত্র-জনতার সভায় যোগ দেন তিনি এবং পরে মিছিলে সামিল হন। সেদিনের সেই মিছিলেই পুলিশের গুলিবর্ষণ হয়।

এছাড়া ৫২’র সেই ভাষা আন্দোলনে শহীদ বরকতের মৃত্যুর স্বচক্ষের সাক্ষী অ্যাডভোকেট একেএম শামসুল বারী (মিয়া মোহন)। মিছিলের উপর গুলিতে বরকত যখন পেটে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ছটফট করছিলেন, তখন তিনি নিজে আহত হওয়া সত্ত্বেও কাঁধে করে বরকতকে মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান। মায়ের ভাষাকে রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদা দেবার আন্দোলন করে গেছেন জেলার এই কৃতি সন্তানরা।  

নব্বয়ের দশকে ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ফরিদপুর জেলা শাখার উদ্যোগে আটজন ভাষা আন্দোলনের নেতা ও কর্মীদের সংবর্ধনা দেয়া হয়। সেই স্মারকগ্রন্থ থেকে এই তথ্যগুলো জানা যায়। ভাষা আন্দোলনে জেলার অন্যান্যদের মধ্যে ইমাম উদ্দিন আহম্মেদ, সাংবাদিক লিয়াকত হোসেন, রওশন জামাল খান, মহীউদ্দিন আহমেদ, শেখ মহিউদ্দিন ওরফে মহন মাস্টার, মো. এযহারুল হক, মনোয়ার হোসেন, এসএম নুরুন্নবীসহ এমন বেশ কয়েকজনের অবদানের কথা শোনা যায়। এদের কেউ এখন বেঁচে নেই।

১৯৫২ সালে ঢাকা মেডিকেলের এমবিবিএস এর দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন জেলার আরেক সন্তান ডা. ননী গোপাল সাহা। ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবন প্রাঙ্গণে আমতলায় ছাত্র-জনতার সভায় যোগ দেন তিনি এবং পরে মিছিলে সামিল হন। সেদিনের সেই মিছিলেই পুলিশের গুলিবর্ষণ হয়।

ভাষা সৈনিক সাংবাদিক লিয়াকত হোসেন এর ছেলে সাজ্জাদ হোসেন রনি বলেন, ভাষা আন্দোলনের এতো বছর পরও জেলার ভাষাসৈনিকদের সঠিক তথ্য ও ইতিহাস নেই কোথাও। ভাষা আন্দোলনে রাজপথে সক্রিয় থাকা ব্যাক্তিদের অবদানের কথা তাই জানে না অনেকেই। বর্তমান প্রজন্ম ও আগামী প্রজন্ম তাদের সম্পর্কে জানতে চায়। তাই ফরিদপুরে ৫২’র ভাষা আন্দোলনের অংশ নেওয়া রাজপথের সেই সকল ব্যক্তিদের ইতিহাস তুলে ধরতে এখন থেকেই কিছু করা উচিৎ দাবি জানান ভাষাসৈনিকদের পরিবারের এই সদস্য।

ভাষাসৈনিক শেখ মহিউদ্দিন ওরফে মহন মাষ্টার এর ছেলে মো. বিল্লাল বলেন, ভাষাসৈনিক ইমামউদ্দিন আহম্মেদ ও ডা. ননী গোপাল সাহা আমার বাবার বন্ধু ছিলেন। বাবা মুখে শুনেছি তারা একসাথে ভাষা আন্দোলনে রাজপথে মিছিল সংগ্রাম করেছে। পুলিশের নির্যাতন সহ্য করেছে। 

তাঁর বাবার নামে কোন একটি সড়কের নাম করার প্রস্তাব জানান তিনি।

মেডিকেলের শিক্ষার্থী আহমেদ সৌরভ জানান, ৫২’র ভাষাসৈনিকদের ইতিহাস জানতে চাই। তাই জেলার যে সকল মহান ব্যক্তিরা সেসময় ভাষা আন্দোলনে রাজপথে ছিলেন তাদের ইতিহাস নাম-ঠিকানা অনেকেই জানি না। তাই আমার জেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ বিভিন্ন শহীদ মিনারে তাদের নামের তালিকা রাখা, স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করাসহ নানা কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা ইতিহাস জানবে।

নাগরিক মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক প্রবীর কান্তি বালা পান্না বালা বলেন, আমাদের ফরিদপুর জেলার ভাষা আন্দোলনে যাঁদের ভূমিকা ছিল তাদের নাম হারাতে চলেছে। তাই আগামী প্রজন্মের কাছে তাঁদের অবদান তুলে ধরতে নানা কর্মসূচি হতে পারে। যেমন জেলার ভাষাসৈনিকদের নামে লাইব্রেরি, একুশের বইমেলায় একটি স্টলে তাদের ছবি সম্বলিত ইতিহাস তুলে ধরা, কুইজ ও রচনা প্রতিযোগিতা হলে নতুন প্রজন্ম তাদের ইতিহাস জানতে পারবে।

মেডিকেলের শিক্ষার্থী আহমেদ সৌরভ জানান, ৫২’র ভাষাসৈনিকদের ইতিহাস জানতে চাই। তাই জেলার যে সকল মহান ব্যক্তিরা সেসময় ভাষা আন্দোলনে রাজপথে ছিলেন তাদের ইতিহাস নাম-ঠিকানা অনেকেই জানি না। তাই আমার জেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ বিভিন্ন শহীদ মিনারে তাদের নামের তালিকা রাখা, স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করাসহ নানা কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা ইতিহাস জানবে।

শিক্ষার্থী মুশফিকুর রহমান তনু জানান, ভাষা আন্দোলনে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার ও শফিউর সেদিন শহীদ হয়েছিলেন। এই আন্দোলনে প্রতিটি জেলায় যারা রাজপথে সে সময় আন্দোলন সংগ্রামে ছিলেন আমরা তাদের কেউ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে চাই। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমরা তাদের অনেকের নাম-পরিচয় জানি না। তাই আমার দাবি আমাদের জেলায় যে’কজন সময় রাজপথে ওই আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন তাদের ইতিহাস নিয়ে কিছু তুলে ধরা উচিত।

এইচই