জেলা প্রতিনিধি
২৭ জুন ২০২৫, ১২:২৭ পিএম
নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার বাউসী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা শামছুল হকের বিরুদ্ধে অনাস্থা দিয়েছিলেন ইউনিয়নের সব ওয়ার্ডের সদস্যরা। তাদের অভিযোগ ছিল, চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে চলমান মামলার কারণে পরিষদের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছিল।
তবে পরে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের মধ্যস্থতায় সেই অনাস্থা প্রত্যাহার করা হয় বলে জানা গেছে। প্রথমে সাংবাদিকদের কাছে এ বিষয়ে কিছু বক্তব্য দিলেও, পরে আর মুখ খুলতে চাইছেন না ওয়ার্ড সদস্যরা।
ওয়ার্ড মেম্বারদের অভিযোগ ছিল, চেয়ারম্যান শামছুল হকের বিরুদ্ধে মামলা থাকায় তিনি স্বাভাবিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছিলেন না। বিশেষ করে ইউনিয়নের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের বিল উত্তোলন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হচ্ছিল। এতে ইউনিয়নের স্বাভাবিক কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দেয়।
এই পরিস্থিতিতে ইউনিয়নে প্রশাসক নিয়োগের পথ সুগম করতেই মেম্বাররা সম্মিলিতভাবে গত ৪ জুন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিতভাবে অনাস্থা দেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে অনাস্থা প্রত্যাহার করার পর অধিকাংশ মেম্বার এ বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি নন। অনেককে ফোন করা হলেও তারা মন্তব্য না করে ফোন কেটে দিচ্ছেন কিংবা নানা অজুহাতে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন।
শামছুল হক বাউসী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি। নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। গত ৫ আগস্ট একটি মামলায় তিনি কারাগারে যান। এরপর ভয়ে তিনি পরিষদের কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হতে পারেননি। এতে বিভিন্ন প্রকল্পের বিল এবং পরিষদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ কার্যক্রম আটকে যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আলমগীর হোসেনের মোবাইলে কল করলে তিনি শুরুতে সালামের জবাব দিয়ে কুশল বিনিময় করলেও, অনাস্থা প্রত্যাহার সংক্রান্ত প্রশ্ন করা হলে ব্যস্ততার কথা বলে কল কেটে দেন।
একইভাবে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. শহাজাহান কবীরও প্রসঙ্গ তুলতেই নানা অজুহাত দেখিয়ে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান।
তবে ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য মোছা. লাভলী বলেন, ‘চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা থাকায় কাজ করতে সমস্যা হচ্ছিল, বিশেষ করে বিভিন্ন প্রকল্পের বিল তুলতে পারছিলাম না। তাই আমরা অনাস্থা দিয়েছিলাম। পরে চিন্তা করে দেখলাম, উনি বয়সে প্রবীণ মানুষ, হয়তো আর বেশিদিন এই পদে থাকবেন না। মানবিক দিক বিবেচনায় অভিযোগ তুলে নিয়েছি।’
এ বিষয়ে চেয়ারম্যান শামছুল হক বলেন, ‘আগে একটি মামলায় জেলে ছিলাম। সম্প্রতি নতুন করে আরেকটি মামলায় আমাকে আসামি করা হয়েছে। উচ্চ আদালতে জামিনের জন্য দৌড়াদৌড়ি করায় প্রকল্পের কিছু বিল আটকে ছিল। এখন অবশ্য কিছু কিছু বিল তোলা যাচ্ছে। সদস্যরা অনাস্থা দিয়েছিল, পরে আবার প্রত্যাহার করেছে। তবে সমঝোতার বিষয়টি আমার জানা নেই।’
আজ বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খবিরুল আহসান বলেন, ‘অনাস্থা দেওয়ার পর আবার প্রত্যাহার করে নিয়েছেন সদস্যরা। এর আগে তিনি জেলে গেলেও, প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার আগেই জামিনে চলে আসেন। তাই প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়নি।’ প্রকল্পের বিল আটকে থাকার বিষয়ে তিনি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ‘কাজ চলমান রয়েছে, এতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।’
স্থানীয়রা মনে করছেন, মামলাজনিত জটিলতা এবং রাজনৈতিক সমঝোতার প্রেক্ষাপটে এই অনাস্থা প্রত্যাহার আপাতত একটি সমঝোতার মাধ্যম হলেও, দীর্ঘমেয়াদে এর প্রভাব ইউনিয়নের প্রশাসনিক কার্যক্রমের ওপর পড়তে পারে।
প্রতিনিধি/একেবি