images

সারাদেশ / শিক্ষা

রাবির কলা অনুষদভুক্ত সকল বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ স্থগিত

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

২৫ জুন ২০২৫, ০৩:১৯ পিএম

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগসংক্রান্ত ২০২৫ সালের নতুন নীতিমালা এবং একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে হাইকোর্ট বিভাগ কলা অনুষদভুক্ত সকল বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত করেছেন।

গত ২ জুন বিচারপতি ফাতেমা নাজিব ও বিচারপতি সিকদার মাহমুদুর রাজি সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রিটের শুনানি শেষে একটি রুল জারি করেন।

মো. বুলবুল রহমান নামের উর্দু বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থী (এবং রাবি শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক) হাইকোর্টে রিট পিটিশন (নং ৮৮৩৭/২০২৫) দায়ের করেন। রিটে তিনি উল্লেখ করেন, ২০২৫ সালের ১৫ এপ্রিল প্রকাশিত ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ, পদোন্নয়ন ও পদায়ন নীতিমালা’ এবং এর ভিত্তিতে ৩০ এপ্রিল প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি নং ০১/২০২৫-এর শর্ত নং-১ তাকে আবেদন করতে বাধা দিচ্ছে। এটি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ২০২১ সালের ন্যূনতম যোগ্যতার গাইডলাইন লঙ্ঘন করছে।

আদালত জানতে চেয়েছেন, কেন এই নিয়োগ নীতিমালা এবং নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত নং-১ অবৈধ, পক্ষপাতদুষ্ট ও বাতিলযোগ্য ঘোষণা করা হবে না। পাশাপাশি, হাইকোর্ট নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত নং-১-এর কার্যকারিতা স্থগিত করেছেন এবং আবেদনকারীকে উর্দু বিভাগের প্রভাষক পদের জন্য আবেদন করতে অনুমতি দিয়েছেন।

এই রিট করা হয়েছে সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের অধীনে, যা রাষ্ট্র বা কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বেআইনি সিদ্ধান্ত বা কার্যকলাপ প্রতিরোধে হাইকোর্টকে নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা দেয়।
আবেদনকারীর পক্ষে আদালতে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. জিয়াউর রশিদ টিপু এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আকতার হোসেন মো. আবদুল ওহাব ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলবৃন্দ।

রুলে বলা হয়েছে, প্রতিপক্ষদের—বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি—আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে কারণ দর্শাতে হবে। পরে পূর্ণাঙ্গ শুনানি শেষে রুল অ্যাবসুলুট (গ্রহণযোগ্য) অথবা ডিসচার্জ (বাতিল) করা হবে।

এ বিষয়ে রিটকারী মো. বুলবুল রহমান বলেন, ‘২০২৫ সালের পিএসসি সার্কুলারে সকল অনুষদের জন্য অনার্স ও মাস্টার্স মিলিয়ে ন্যূনতম সিজিপিএ ৩.৫০ নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু কলা অনুষদের ক্ষেত্রে সিজিপিএ তুলনামূলকভাবে কিছুটা কম হয়। আমি মনে করি, এই শর্ত আমাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। এজন্যই আমি রিট করেছিলাম। মহামান্য আদালত আমাদের পক্ষে আদেশ দিয়েছেন। যতদিন মামলা চলবে, ততদিন নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত থাকবে।’

উর্দু বিভাগের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার জন্য ভালো একাডেমিক রেজাল্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উর্দু বিভাগে নিয়োগের জন্য ৫৭ জন আবেদন করেছেন, যাদের মধ্যে ৪৭ জন শর্ত পূরণ করেছেন। অনেকেরই অনার্স ও মাস্টার্স মিলিয়ে সিজিপিএ ৪.০০-এর মধ্যে ৪.০০ রয়েছে। কিন্তু রিটকারী যার অভিযোগে এই স্থগিতাদেশ এসেছে, তার একাডেমিক রেজাল্ট সিজিপিএ ৩.৩৫—যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের লিগ্যাল সেলের প্রশাসক অধ্যাপক আব্দুর রহিম বলেন, ‘আমরা জেনেছি, যিনি রিট করেছেন, তার অনার্সের সিজিপিএ ৩.৩৬ এবং মাস্টার্সে সিজিপিএ ৩.৫০-এর বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালায় বলা আছে, উভয় পরীক্ষায়ই ন্যূনতম সিজিপিএ ৩.৫০ থাকতে হবে। কিন্তু রিটকারী ইউজিসির নীতিমালার উল্লেখ করেছেন, যেখানে ন্যূনতম সিজিপিএ ৩.২৫ প্রযোজ্য।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বায়ত্তশাসিত চারটি বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৭৩ সালের অ্যাক্ট অনুযায়ী পরিচালিত হয়। তারা নিজেদের নির্ধারিত নীতিমালা অনুযায়ী চলবে। শিক্ষা ও গবেষণায় উৎকর্ষতা নিশ্চিত করতে যে নীতিমালা গ্রহণ করা হবে, সেটাই চূড়ান্ত। ইউজিসির নীতিমালা মানা এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বাধ্যতামূলক নয়।’

প্রতিনিধি/একেবি