জেলা প্রতিনিধি
২৫ জুন ২০২৫, ১২:৪৮ পিএম
নামহীন, অচেনা, বেওয়ারিশ—যাদের মৃত্যুর পর কেউ দাবি করে না, যাদের জন্য কাঁদে না কোনো আপনজন—তাদের শেষ গন্তব্যে পৌঁছে দিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাতিঘর’।
মঙ্গলবার (২৪ জুন) দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের পূর্ব মেড্ডাস্থ তিতাস নদী-সংলগ্ন বেওয়ারিশ কবরস্থানে কসবা থেকে উদ্ধার হওয়া এক অজ্ঞাতনামা (বয়স আনুমানিক ৫০ বছর) নারীর মরদেহ দাফনের মধ্য দিয়ে বাতিঘরের এ মানবিক কার্যক্রম ২০০তম দাফনে পৌঁছায়।
গত শুক্রবার (২০ জুন) সন্ধ্যায় কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়কের কসবা উপজেলার খাড়েরা ইউনিয়নের দারোগাবাড়ি এলাকার একটি বাঁশঝাড় থেকে অজ্ঞাত ঐ নারীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় মরদেহটিকে বেওয়ারিশ ঘোষণা করে দাফনের দায়িত্ব দেওয়া হয় ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাতিঘর’-কে।
এই দাফন কার্যক্রমের নেতৃত্ব দেন বাতিঘরের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. আজহার উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত আমার পারিবারিক ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে ২০০টি বেওয়ারিশ লাশের দাফন সম্পন্ন করেছি। মহামারি করোনার সময় থেকেই এই কাজ শুরু করি। এখনও নিয়মিত জেলার বিভিন্ন থানা থেকে চিঠি পেয়ে আমরা লাশ দাফন করে থাকি।’
তিনি আরও বলেন, ‘টাকা-পয়সা নয়, সাহস আর মানবিকতা নিয়ে আমরা কাজ করি। প্রতি মাসে গড়ে ৫ থেকে ৭টি বেওয়ারিশ লাশ দাফন করি। পরিচয় নেই বলে তাদের মর্যাদাহীনভাবে দাফন হতে পারে না। আমরা চেষ্টা করি যেন মর্যাদার সঙ্গে জানাজা, দোয়া এবং কাফনের কাপড়সহ সঠিক নিয়মে দাফন সম্পন্ন হয়।’
আজহার উদ্দিন জানান, ‘বাতিঘরের সদস্যরা নিজেরাই লাশ ধোয়ানো, কাফনের কাপড় সংগ্রহ, কাঠ-বাঁশ জোগাড়, দাফনের স্থান পরিষ্কার এবং জানাজার নামাজসহ সবকিছু নিঃস্বার্থভাবে সম্পন্ন করেন। কবরস্থানে শায়িত অনেকেই সড়ক দুর্ঘটনা, ট্রেনে কাটা, পানিতে ডুবে, হত্যা কিংবা আত্মহত্যার শিকার। অনেক সময় অর্ধগলিত বা দ্বিখণ্ডিত লাশ দাফন করতেও পিছপা হন না আমরা।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাফফর হোসেন বলেন, ‘মানবিক দায়িত্ববোধ থেকেই বাতিঘর বেওয়ারিশ লাশগুলো দাফন করে আসছে। আমাদের থানায় যখনই কোনো অজ্ঞাত মরদেহ আসে, তখনই বাতিঘরের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা অত্যন্ত যত্নসহকারে জানাজা পড়িয়ে মরদেহ দাফন করেন।’
প্রতিনিধি/একেবি