images

সারাদেশ

ম্রো জনগোষ্ঠীর ফলবাগান, জুম ধ্বংসের অভিযোগ বনবিভাগের বিরুদ্ধে

জেলা প্রতিনিধি

২৪ জুন ২০২৫, ০৪:১৪ পিএম

বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় ম্রো জনগোষ্ঠীর সৃজিত কলা ও পেঁপে বাগান কেটে ফেলার অভিযোগ উঠেছে বনবিভাগের বিরুদ্ধে। উপজেলার নয়াপাড়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের খইয়া ঝিরি এলাকার মেনথক ও কাইংওয়াই ম্রো পাড়ায় প্রায় পাঁচটি ফলজ বাগান থেকে অন্তত ১২০০টি কলাগাছ ও ৩০০টিরও বেশি উচ্চফলনশীল পেঁপে গাছ কেটে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, গত শনিবার (২১ জুন) লামা বন বিভাগের অধীন আলীকদম রেঞ্জের কর্মকর্তারা কোনো প্রকার নোটিশ বা পূর্ব আলোচনা ছাড়াই ফলবাগানগুলো কেটে ফেলেন। পরে ওই জমিতে বনবিভাগ আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাসসহ বিভিন্ন প্রজাতির বনজ চারা রোপণ করে।

IMG-20250624-WA0006

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে রয়েছেন ইয়াং বো ম্রো, রেংথাং ম্রো, ডিং ওয়াই ম্রো, মেনদি ম্রো, মেংক্রিং ম্রো, অংহ্লা ম্রো ও মেনলাং ম্রো।

স্থানীয় বাসিন্দা ইয়াং বো ম্রো বলেন, এই পাহাড়ে আমরা চৌদ্দ পুরুষ ধরে বসবাস করছি। জুম চাষ ও ফলবাগান আমাদের জীবিকার একমাত্র উৎস। অথচ হঠাৎ করেই বন বিভাগের লোকজন এসে সব গাছ কেটে ফেলল। আমরা কোনোদিন বন ধ্বংস করিনি।

অন্যদিকে, মেবদি ম্রো ও অংহ্লা ম্রো জানান, তাদের সম্প্রতি রোপণ করা জুমের ধানও নষ্ট করে দিয়েছে বন বিভাগের কর্মীরা। তারা জানান, ধান গজাতে শুরু করলেও বন বিভাগের লোকজন বনজ চারা লাগাতে গিয়ে সব ধানগাছ নষ্ট করে দেয়।

thumbnail_IMG-20250624-WA0008

ভুক্তভোগীরা আরও জানান, গাছ কাটার কারণ জানতে চাইলে এক বন কর্মকর্তা হুমকি দিয়ে বলেন, এই বিষয়ে সাংবাদিক বা অন্য কারও কাছে অভিযোগ করলে রিজার্ভ বন ধ্বংস ও গাছ পাচারের মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হবে। এই হুমকির কারণে প্রাথমিকভাবে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাননি। পরে পাড়াবাসীর মধ্যে আলোচনা হওয়ার পর গণমাধ্যমে বিষয়টি জানানোর সিদ্ধান্ত নেন তারা।

আরও পড়ুন

মেরিনড্রাইভে পৌর করের নামে চাঁদাবাজি

মেনথক পাড়ার এক বয়োবৃদ্ধ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা পাহাড়ে শান্তিতে থাকি, বন রক্ষা করি। কিন্তু এখন বনবিভাগই আমাদের ফসল ধ্বংস করছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আলীকদম রেঞ্জ কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন এলাহী ঢাকা মেইলকে  বলেন, এই জায়গাগুলো বনবিভাগের আওতাভুক্ত। সরকার সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের আওতায় স্থানীয়দের সঙ্গে সমন্বয় করে বনায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে ফলবাগান ধ্বংস করেছে বলে আমার জানা নেই।

IMG-20250624-WA0019

তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য রিংরুই ম্রো বলেন, বনবিভাগের এ ধরনের আচরণ শুধু আদিবাসীদের জীবিকা নয়, তাদের সংস্কৃতি ও জীবনধারার ওপরও আঘাত। আমরা এর বিচার ও ক্ষতিপূরণ দাবি করছি।

লামা বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে কোনো বাগান ধ্বংস করা হয়নি। সংরক্ষিত বনাঞ্চলে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী চারা রোপণের জন্য ঝোপঝাড় পরিষ্কার করা হয়েছে মাত্র, কিছু জঙ্গলী কলা গাছ কাটা হয়েছে। তিনি রেঞ্জ কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিয়ে বলেন সরেজমিনে না গিয়ে শোনা কথায় বিশ্বাস করা যায় না বলেও মন্তব্য করেন।

প্রতিনিধি/এসএস