জেলা প্রতিনিধি
২২ জুন ২০২৫, ০৯:৩২ পিএম
গত তিনদিন ধরে টানা বৃষ্টি। পানি নিষ্কাশন ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় জমে গেছে হাটের মাঠে এক হাঁটু পানি। শুধু তাই নয়, আশপাশে অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণের কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।
শুক্রবার (২০ জুন) বিকেলে জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার উদয়পুর ইউনিয়নের মোসলেমগঞ্জ হাটে গিয়ে দেখা যায়। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় গত তিনদিন ধরে ওই এলাকায় জমে আছে পানি। ইউনিয়নবাসী কপালে সেবার পরিবর্তে জুটেছে দুর্ভোগ। ভোগান্তিতে পড়েছে হাটে আসা ব্যবসায়ী, হাটুরে ও পথচারীরা। তাদের ভাষ্য, হাটের আশপাশে অপরিকল্পিতভাবে স্থাপনা নির্মাণ, সেই সাথে পানি নিষ্কাশন ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টির পানিতেই তলিয়ে যায় পুরো হাট। শুধু তাই নয়, জমে থাকা পানি নামতেও দীর্ঘ সময় লেগে যায়। এই কারণে অনেক সময় হাটও বসে না।
![]()
জানা যায়, সপ্তাহে প্রতি শুক্রবার ও মঙ্গলবার মোসলেমগঞ্জ হাট বার। এছাড়া প্রতিদিন বসে বাজার। হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয় এই হাটে। এখান থেকে লোকজন মোসলেমগঞ্জ-কিচক ও মোসলেমগঞ্জ-রাজাবিরাট সড়ক হয়ে বিভিন্ন যানবাহনে বগুড়া ও গাইবান্ধায় চলাচল করে। হাটের কোলঘেঁষে পশ্চিম পাশে রয়েছে মোসলেমগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়, ভোকেশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য সেবা কমপ্লেক্স। প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ চলাচল করে হাটের ভেতর হয়ে যাওয়া সড়কে। টানা তিনদিনের বৃষ্টির পানি জমে ছিল হাটের মাঠে। তারপরও শুক্রবার বিকেলে হাটে আসা ব্যবসায়ী পূর্ণ বিছায় ওই মাঠে। সন্ধ্যার কিছু আগেই আবারও নামে বৃষ্টি। এতে সবকিছুই তলিয়ে যায় জমানো পানিতে। ফলে চরম ভোগান্তিতে পরে ব্যবসায়ীরা। হাটের রাস্তার দুই পাশে ভবনগুলো অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা এবং পানি নিষ্কাশন ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টির পানিতেই তলিয়ে যায়। দীর্ঘদিন ধরে এমন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন শিক্ষার্থী, যানবাহনের চালক, পথচারী, হাটে আসা ব্যবসায়ী ও হাটুরেরা ।
মোসলেমগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) প্রধান শিক্ষক তহিদুর রহমান বলেন, বর্তমানে বিদ্যালয় বন্ধ আছে, সে কারণে হাটের ভেতরের রাস্তায় চাপ কম। গত তিনদিন ধরে এই রাস্তায় হাঁটু পানি জমে আছে। পানি নিষ্কাশন কারও মাথা ব্যথা নেই। এই সমস্যা আজ একদিনের নয়, বহুদিনের। বিদ্যালয়ের চলাচলের একমাত্র রাস্তা হাটের ভেতর হয়ে। বিদ্যালয় খোলার পর এই রাস্তায় চলাচল করতে গিয়ে অনেক শিক্ষার্থীর কাপড় ও জুতা ভিজে যাবে। অনেকের বই-পুস্তক, খাতা, ব্যাগও পানিতে পড়ে যায়। এসব কারণে অভিভাবকদের অভিযোগও শুনতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদে অনেকবার বলেছি, কোনো লাভ হয়নি। সমস্যা সমাধানের জন্য আবারও অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
![]()
কথা হয় হাটে আসা হাটে আসা ব্যক্তিদের সাথে। তারা বলেন, এই এলাকার একমাত্র হাট। প্রতিদিন না আসলেও প্রতি হাটবারে সবাইকে আসতে হয়। এই দুইদিন কাঁচা বাজার না করলে অনেক দুরে গিয়ে বাজার করতে হয়। হাটে পানি জমে থাকায় অনেকেই কেনাকাটা না করেই চলে গেছে। এই সমস্যা দীর্ঘদিনের। সামান্য বৃষ্টি হলেই হাটের এই সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়। সমস্যার সমাধান না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।
ব্যবসায়ী হিটলু সরকার বলেন, দিনদিন এই হাটের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সামান্য বৃষ্টিতেই হাঁটু পানি জমে। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনাও জমে থাকে। আসলে বলে কোনো লাভ হয় না।
হাটে আসা সবজি ব্যবসায়ী তোফাজ্জল হোসেন বলেন, হাটের জায়গা কাদা-পানিতে একাকার, তারপরও কাদাতে চাটি বিছে দোকানদারি শুরু করি। কিন্তু বিকেলের বৃষ্টিতে একহাঁটু পানি জমে সবকিছু ডুবে গেছে। এখন তহবিলই নেই। এ অবস্থা থাকলে এই হাটে আর আসব না।
![]()
ভুসি মালের ব্যবসায়ী আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ২০ হাজার টাকার মাল নিয়ে হাটে আসি। সবকিছুই পানিতে ডুবে গেছে। মাত্র আড়াই হাজার টাকা নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, হাটের পাশে নতুন নতুন ভবন নির্মাণ করার কারণে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এ ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে সবাইকে।
হাট ইজারাদার মফিদুল ইসলাম বলেন, আমরা সবেমাত্র হাট পেয়ে মাশুল আদায় করছি। এ সবের কিছুই জানি না। গত শুক্রবারে হাটে মাঠে বৃষ্টির পানি জমে বেচা-কেনা হয়নি। তাই মাশুলও আদায় হয়নি। অনেক ব্যবসার ক্ষতি হয়েছে।
৫ জুলাইয়ের পর পলাতক আছেন উদয়পুর ইউপি চেয়ারম্যান ওয়াজেদ আলী। দায়িত্বে থাকা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও গত সপ্তাহে অব্যাহতি দিয়েছেন। ইউনিয়ন পরিষদের সচিব বুলবুল আহম্মেদ বলেন, এ বিষয়ে আগামী উপজেলা পরিষদের সমন্বয় সভায় বলা হবে।
প্রতিনিধি/এসএস