জেলা প্রতিনিধি
২২ জুন ২০২৫, ০৮:১০ পিএম
নৌপথকে কাজে লাগিয়ে দেশের অর্থনৈতিক চাকার গতিশীলতা বাড়াতে, শিগগিরই মুন্সিগঞ্জের পদ্মা পাড়ে শুরু হবে আন্তর্জাতিক মানের কনটেইনার পোর্টের নির্মাণ কাজ।
রোববার (২২ জুন) বেলা ৩টার দিকে লৌহজংয়ের শিমুলিয়া ঘাটে পাঁচ উপদেষ্টা ও নৌবাহিনী প্রধানসহ বিআইডব্লিউটিএর যৌথ সমন্বয় সভা শেষে সাংবাদিকদের একথা জানান নৌ-পরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) ড.এম সাখাওয়াত হোসেন।
![]()
তিনি বলেন, ৭৫৬ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয় নির্ধারণ করে, ২৯ দশমিক ১৩ একর জায়গায় প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এতে সরকারি সহযোগিতার পাশাপাশি, দেশ ও দেশের বাইরের বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া হবে।
সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে নৌ উপদেষ্টা আরও বলেন, পোর্ট ও সংলগ্ন এলাকার সৌন্দর্যবর্ধন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং জনবান্ধব পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন ও বিআইডব্লিউটিএ যৌথভাবে কাজ করবে। যদি প্রকল্প বাস্তবায়নে অতিরিক্ত কোনো জমির প্রয়োজন হয় সে বিষয়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি) আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
![]()
নদীর পাড় ঘেঁষে একটি সুন্দর বিনোদনমুখী পরিবেশ গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে, যাতে স্থানীয় জনগণের পাশাপাশি ঢাকা থেকে আগত পর্যটকরাও উপভোগ করতে পারেন। জেলা প্রশাসনকে এলাকাটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, কারণ বিআইডব্লিউটিএ’র নিজস্ব কোনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নেই।
তিনি বলেন, পোর্টটি বাস্তবায়িত হলে এটি দেশের জন্য অর্থনৈতিক অগ্রগতির নতুন দ্বার খুলে দেবে এবং স্থানীয় কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি পোর্ট এলাকার বাইরে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়নেও সরকার সম্পূর্ণ সহযোগিতা করবে।
![]()
সরকার ইতোমধ্যে দেশের আরও কিছু রিভারাইন পোর্টকে ‘ওয়েট লিজ’ ভিত্তিতে হস্তান্তরের উদ্যোগ নিয়েছে। একটি প্রকল্প দিয়ে শুরু করে ধাপে ধাপে আরও কয়েকটি বাস্তবায়ন করা হবে বলেও জানা গেছে। ব্যক্তি উদ্যোগে কেউ পোর্ট উন্নয়নে আগ্রহী হলে সরকার তাদের উৎসাহিত করবে।
এ সময় এতে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লে. জে. (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, শিল্প এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, বাণিজ্য, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীন।

সভা শেষে শিমুলিয়া ঘাট ও পদ্মা নদী তীরবর্তী ফাঁকা জমি বহুতল ভবনের ওপর থেকে পরিদর্শন করেন উপদেষ্টারা। এ সময় প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে উন্মুক্ত আলোচনা হয়।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার নৌপরিবহণ উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন শিমুলিয়া ঘাটে এসে বন্দর নিয়ে মহাপরিকল্পনার কথা জানান।
এর পরিপ্রেক্ষিতে রোববার বন্দর পরিকল্পনা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসক ফাতেমা তুল জান্নাত শিমুলিয়া ফেরিঘাটকে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন হাব করার প্রস্তাব পেশ করেন।
পাশাপাশি পর্যটন খাতকে গুরুত্ব দিয়ে,শিমুলিয়া ঘাটে জেটি স্থাপন ও সার্বক্ষণিক একটি ফেরি চলাচলের ব্যবস্থা রাখা। পদ্মা সেতু ঘিরে পর্যটন হাব তৈরি করা এবং ইকো পোর্ট গড়ে তোলাসহ দশটি প্রকল্প বাস্তবায়নে মাস্টারপ্ল্যান তুলে ধরা হয়।
![]()
বিআইডব্লিউটিএর নির্ধারিত জায়গায় এ পোর্ট নির্মাণ হবে বলে জানিয়ে, প্রকল্পটি সরকারি উদ্যোগে বাস্তবায়িত হলেও প্রাইভেট-পাবলিক পার্টনারশিপ (PPP) মডেলে আগ্রহী বিনিয়োগকারীদের জন্য সুযোগ উন্মুক্ত থাকবে বলে জানান, নৌ পরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।
পরে তিনি আরও বলেন, ৭৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বিশ্বমানের ইকো পোর্ট বাস্তবায়ন হলে বিনোদনের জন্য সেখানে থাকবে- নদী থেকে সংগৃহীত বিভিন্ন জীব-বস্তু নিয়ে রিভার মিউজিয়াম, নদীর পাড়ে রাতযাপনের জন্য ইকো রিসোর্ট, অবকাশ যাপনের জন্য সুইমিং পুল, শিশুদের উপভোগ্য কিডস জোন, শিমুলিয়া ঘাটের পুরোনো ঐতিহ্য ধরে রাখতে নদীতীরে একটি নান্দনিক ও আধুনিক ফেরিঘাট স্থাপন।
![]()
তিনি বলেন, বিশ্বের বড় বড় সেতুর সাথে ফেরিঘাটও রাখা হয় বিশেষ জরুরি প্রয়োজনে। ফলে, ৪টি জোনে ভাগ করা থাকবে মোংলা বন্দরের আদলে ইনল্যান্ড কনটেইনার টার্মিনাল ও বিআইডব্লিউটিএর নিজস্ব আইটি ভবন। জোন-বি’তে থাকবে ট্রাক পার্কিং এরিয়া, ‘জোন-সি’তে থাকবে অ্যাডমিনিস্ট্রিভ এরিয়া, জোন-ডি’তে থাকবে ফেরিঘাটের জন্য বাস পার্কিং। এছাড়া থাকবে কাফেটেরিয়া সহ লাইব্রেরি ও ওয়াকওয়ে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্র আরো জানা যায়, পদ্মায় চলমান নদী শানের কাজ চলছে। বর্তমানে ৫৫ ভাগ শেষ হয়েছে। ২০২৬ সালের সেপ্টেম্বর মধ্যে এ নদী শাসনের কাজ শেষ হবে।
![]()
প্রকল্পের সারসংক্ষেপ হিসেবে জানা যায় প্রকল্পটির প্রকল্পের বিনিয়োগ খরচ ধরা হয়েছে ৭৫৬৭১.০০ লাখ টাকা।
বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণ খরচ ৩০৮৯ লাখ টাকা এর বাস্তবায়নকাল হবে ৩ বছর। প্রস্তাবিত প্রকল্পের মোট আয়তন ১ লাখ ১২ হাজার ৫৪২ বর্গমিটার (২৯.১৩ একর)। জেটির দৈর্ঘ্য ২১৫ মিটার, প্রস্থ ৩৫ মিটার। ১০০ মিটার পর্যন্ত ২টি কনটেইনার জাহাজ একসাথে বার্থ করা যাবে। জেটি সংলগ্ন লোডিং আনলোডিং এরিয়া ৪৩০০ বর্গমিটার। কনটেইনার স্টোরেজ/স্ট্যাক ইয়ার্ডঃ ৩২২৬০ বর্গমিটার। একসাথে স্টোরেজ ক্ষমতা ৩০০০ টিইইউস। বার্ষিক কনটেইনার পরিচালনার ক্ষমতা- ২,০৪,০০০ টিইইউস। সিএফএস: কনটেইনার মালবাহী স্টেশন ৬০০ বর্গমিটার, রি-ফুয়েলিং স্টেশন ১৫,০০০ লিটার স্টোরেজ ক্ষমতা কেপিআই। এর সাথে সীমানা প্রাচীর, ট্রাক পার্কিং ইয়ার্ড, ফেরিঘাট নির্মাণ রয়েছে। এই পোর্ট থেকে সম্ভাব্য বার্ষিক রাজস্ব আদায় ধরা হয়েছে ১৪৫২৫ লাখ টাকা।

উপদেষ্টাদের বিশেষ সমন্বয় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন- বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা, দক্ষিণ ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মো. রেজাউল করিম মল্লিক, মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসক ফাতেমা তুল জান্নাত, মুন্সিগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মো. শামসুল আলম সরকার, লৌহজং উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নেছার উদ্দিন, শ্রীনগর সার্কেল এডিশনাল এসপি মো. আনিসুর রহমান, লৌহজং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ওসমান গনিসহ আরও অনেকে।
পদ্মা পাড়ে পাঁচ উপদেষ্টার যৌথ সমন্বয় সভা ও শিমুলিয়া ঘাট পরিদর্শনের ছবিটি রোববার বিকেলে তোলা - ঢাকা মেইল।
প্রতিনিধি/এসএস