images

সারাদেশ

সবুজের মাঝে হইহুল্লোড়, বিরক্ত বন্য প্রাণী

জেলা প্রতিনিধি

২২ জুন ২০২৫, ০৫:১২ পিএম

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান উদ্ভিদ ও প্রাণবৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ সংরক্ষিত একটি বনাঞ্চল। দেশবিদেশের প্রকৃতিপ্রেমিকদের প্রিয় দর্শনীয় স্থান এটি। এই বনে অনেক বিরল ও বিলুপ্তপ্রায় প্রাণ-প্রজাতির বসবাস। আছে নানা জাতের উদ্ভিদ।

প্রায় প্রতিদিনই কমবেশি পর্যটক ভিড় করেন লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে। এতে অস্বস্তির মধ্যে পড়ে বন্যপ্রাণী। ছুটির দিনে লাউয়াছড়ায় পর্যটকের ভিড় উপচে পড়ে। আর টানা ছুটির সময় সেই ভিড় বেড়ে যায় কয়েক গুণ। পর্যটকের এমন ভিড়ের ফলে সৃষ্ট হইহুল্লোড়ে অনেক প্রাণীই তখন আড়ালে-আবডালে লুকিয়ে সময় যাপন করে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, লাউয়াছড়ায় বিলুপ্তপ্রায় ও বিরল প্রজাতির প্রাণী এবং উদ্ভিদ বৈচিত্র্য রয়েছে। পর্যটকদের অবাধ বিচরণ ও বনের ভেতর দিয়ে যাওয়া শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সড়কে এই সময় যানবাহনের অনেক ভিড় দেখা যায়। গাড়ির তীব্র শব্দ, হর্ন, দ্রুতবেগে যানবাহনের ছুটে চলা প্রাকৃতিক নীরবতাকে ভেঙে দেয়।

thumbnail_1000147436

তারা জানান, দিনে কত সংখ্যক পর্যটকের প্রবেশ ও উপস্থিতি বন্যপ্রাণী এবং পরিবেশের জন্য সহনীয়, এখনও তা নির্ধারণ করা হয়নি। যার কারণে ভিড় নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে না। এতে বন্যপ্রাণীরা দিশাহারা হয়ে পড়ে। ডাক থেমে যায় উল্লুকের, পাখির। তখন বনের গভীরে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করে সব প্রাণী।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের তথ্যমতে, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের আয়তন ১ হাজার ২৫০ হেক্টর। সরকার ১৯৯৬ সালে লাউয়াছড়াকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করে। উদ্যানটি ১৬৭ প্রজাতির গাছ, ২৪৬ প্রজাতির পাখি, ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৫৯ প্রজাতির সরীসৃপ, ২২ প্রজাতির উভচরসহ অসংখ্য বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ও প্রজননক্ষেত্র।

thumbnail_1000147434

লাউয়াছড়া উদ্যানের টিকিট কাউন্টার সূত্রে জানা যায়, এবারের দীর্ঘ ছুটিতে ৭ থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত সাত দিনে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ৭ হাজার ৫৮১ জন দর্শনার্থী ঘুরতে গেছেন। এতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৮ লাখ ৪৫ হাজার ১৩৫ টাকা।

thumbnail_1000147438

স্থানীয় পর্যটক শিমুল ভট্টাচার্য বলেন, ছুটির সময় অনেক পর্যটকের সমাগমে বন্য প্রাণী অনেকটাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এ সময় তারা গভীর বনে  আত্মগোপনে চলে যায়। তাদের স্বাভাবিক চলাফেরায় বাঁধা দেওয়া হয়।

পরিবেশকর্মী সাজু মারছিয়াং বলেন, ছুটির দিনগুলোতে মানুষের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে কারণে বন্যপ্রাণীরা অস্বস্তিতে থাকে। এখনই পর্যটক নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন। তা না হলে বনের প্রাণ-প্রকৃতি বিপজ্জনক পর্যায়ে চলে যাবে। শুধু হল্লা-চিৎকারই করা হচ্ছে, তা নয়। পলিথিন, প্লাস্টিক ফেলে পরিবেশকেও ধ্বংস করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন

ফেনীর লেমুয়া-নবাবপুর ব্রিজ ধসের শঙ্কা, জনমনে আতঙ্ক

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও উদ্ধারের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সিউ'র সমন্বয়ক সোহেল শ্যাম বলেন, আমরা বারবার বলি, লাউয়াছড়ায় পর্যটকদের অবাধ প্রবেশ সীমিত করা হোক। লাউয়াছড়া আসলে বন্যপ্রাণীর জায়গা। তাদের জায়গায় গিয়ে হইহুল্লোড় করা কতটুকু সঠিক। মানুষের ভিড়, হইহুল্লোড়ে অনেক প্রাণীর প্রজনন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে কি না, এটা ভাবনার সময় এসেছে।

thumbnail_1000147442

বাপার জাতীয় পরিষদ সদস্য আ স ম সালেহ সোহেল বলেন, বনের ভেতর দিয়ে যাওয়া শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সড়কে পর্যটকদের যানবাহনের ভিড় লেগে থাকে। গাড়ির শব্দ, হর্ন ও মানুষের আনাগোনায় প্রাণীদের প্রাকৃতিক নীরবতা ভাঙে, তারা বিরক্ত হয়। বনের ভেতর দিয়ে যাওয়া ঢাকা-সিলেট রেললাইনে ও বনের ভেতরের বিভিন্ন স্থানে ভিড় করে হইহুল্লোড় করেন। পরিবেশ, প্রাণ-প্রকৃতির জন্য যা অনুচিত।

এ বিষয়ে বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ শ্রীমঙ্গলের রেঞ্জার কাজী নাজমুল হক বলেন, লাউয়াছড়ায় পর্যটক সীমিত করতে টিকিটের ফি বাড়ানো হয়েছে। কীভাবে পর্যটক সীমিত করা যায়, বিকল্প কী তা নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মধ্যে চিন্তাভাবনা আছে।

প্রতিনিধি/এসএস