জেলা প্রতিনিধি
২২ জুন ২০২৫, ০৩:৪৫ পিএম
ফেনী সদর উপজেলার লেমুয়া ইউনিয়ন ও সোনাগাজী উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের সংযোগ ব্রিজটি ধসে পড়তে শুরু করেছে। টানা বৃষ্টিার কারণে গত কয়েকদিন ফেনীর কালীদাস পাহালিয়া নদীর পানির চাপ বাড়ায় ইতোমধ্যে ব্রিজের দুই পাশে ভাঙনের শুরু হয়। ব্রজের পাশ থেকে মাটি সরে যাওয়ার কারণে সেতুটি যানবাহন চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে করে দুই উপজেলার প্রান্তিক মানুষের দুর্ভোগ সৃষ্টি হতে পারে।
![]()
জানা যায়, ১৯৯০ সালের মাঝামাঝি সময়ে ফেনী সদর উপজেলার লেমুয়া ইউনিয়নের মজুমদার হাট সংলগ্ন কালীদাস পাহালিয়া নদীর ওপর সেতু নির্মাণ করে ত্রাণ ও পূণর্বাসন মন্ত্রণালয়। সেতুটি নির্মাণের পর ফেনী সদর উপজেলার সঙ্গে সোনাগাজী উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের সংযোগ সৃষ্টি হয়। এতে করে দুই উপজেলার উৎপাদিত কৃষি পণ্য পরিবহনে সহজীকরণ ও দুই এলাকার মানুষের মাঝে মেলবন্ধন সৃষ্টি হয়। নদীর এপারে ওপারে হাট বাজারসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। এছাড়াও সেতুটির কারণে সহজে জেলা শহরে যাতায়াতের পথ সুগম হয়।
![]()
স্থানীয়রা জানায়, বিগত কয়েক বছর ধরে পতিত আওয়ামী লীগের নেতা কর্মী ও জনপ্রতিনিধিরা অনুমোদনহীনভাবে কালিদাস পাহালিয়া নদী থেকে বালু উত্তোলন করে। অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের কারণে নদীর পাড় ভেঙে বিভিন্ন বাড়ি ঘর বিলীন হতে শুরু করে। তারপরও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বালু উত্তোলন বন্ধ করতে পারেনি প্রশাসন। এতে করে সেতুর দুই পাড়ে ভাঙনের সৃষ্টি হয়।
স্থানীয়রা জানান, গত কয়েকদিন ধরে ভারী বর্ষণ ও কালীদাহ পাহালিয়া নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সেতুর দুইপাড়ে ব্যাপক ভাঙনের সৃষ্টি হয়। আশপাশের স্থাপনা ধসে নদীতে তলিয়ে যেতে থাকে। এ সময়ে লেমুয়া-নবাবপুর সেতুটি অন্তত ১ ফুট ধসে যায়। দিনদিন ধসের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় জনমনে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
![]()
শনিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেতুর দুই পাড়েই উৎসুক জনতা ও স্থানীয়রা জড়ো হয়ে ধসে পড়া স্থান দেখাশোনা করছেন। সেতুর পশ্চিম পাড়ের অংশ অতিরিক্ত ধসে পড়ার কারণে একটি অংশে যান চলাচল সাময়িকভাবে বাঁশ দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যে অংশ চলাচলের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে সেই অংশে সতর্কতার সাথে ছোট ছোট পরিবহণ পার হচ্ছে। ধসে পড়ে সেতু পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হওয়ায় মালবাহী এবং বড় পরিবহণ সেতুতে উঠতে দিচ্ছেন না স্থানীয়রা।
স্থানীয় বাসিন্দা ও জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের নেতাদের অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে মানুষের ঘরবাড়ি নদীতে ভেসে যাচ্ছে; সেতুটি ধসে পড়তে শুরু করেছে। এখনই জরুরি ভিত্তিতে সেতুটি রক্ষায় উদ্যোগ নেওয়া না হলে দুই উপজেলার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। অবর্ণনীয় কষ্টের মাঝে পড়তে পারে স্থানীয় বাসিন্দারা।
নবাবপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জামাল উদ্দিন বলেন, এই সেতুর ওপর দিয়ে নবাবপুর বাজারসহ আশপাশের এলাকায় পণ্য পরিবহণ হয়ে থাকে। এটি বিকল হলে পণ্য সরবরাহে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটবে। ব্যবসা বাণিজ্য ও মানুষের স্বাভাবিক কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে আসতে পারে।
স্থানীয় নবাবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম জহির মুঠোফোনে জানান, সেতুটির অবস্থা সম্পর্কে প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। প্রশাসন জরুরি ভিত্তিতে সেতুটি রক্ষায় প্রয়োজনীয় কার্যক্রম হাতে নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। আশা করি সেতুটি ধসে পড়ার আগেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ফেনীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী অলক দাস জানান, খবর পেয়ে সেতুটি পরিদর্শন করে ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে অবহিত করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এখানে ভাঙন ও ধস ঠেকাতে জিওব্যাগ দেওয়া হবে। পানি কমলে স্থায়ীভাবে মেরামত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
প্রতিনিধি/এসএস